×

সারাদেশ

দখলে-দূষণে-ভরাটে বিলীনের পথে সিলেটের নদীগুলো

Icon

nakib

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২০, ০৯:৩৬ এএম

দখলে-দূষণে-ভরাটে বিলীনের পথে সিলেটের নদীগুলো

নদী দখল

বৃহত্তর সিলেটে চিরকাল খরস্রোতা নদী হিসেবে বহমান থেকেছে ভারতের পাহাড় থেকে নেমে আসা সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, লোভা পিয়াইন, বৌলাই, রক্তি, যাদুকাটা, মনু, খোয়াই, সুতাংসহ অনেক নদী। হেমন্ত-বর্ষা সব মৌসুমেই বেগবতী, প্রাণবান। কিন্তু এসব নদী আজ তার বৈশিষ্ট্য ও যৌবন হারাতে বসেছে। অনেক স্থানে পলি-বালি পড়ে হারিয়ে গেছে নদী। কোথাও নদী পরিণত হয়েছে আবর্জনার ভাগাড়ে। সিলেট বিভাগের নিম্নাঞ্চল প্রতি বছরই বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। নদীর তলদেশ দখলে-দূষণে-ভরাটে নদীর পানি প্রাকৃতিকভাবে নামতে পারছে না। বিভাগের নদ-নদী, খাল-বিলগুলো মরে ক্ষীণ হয়ে পড়ছে। দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যা। গত বছর নদী নিয়ে হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের সুবাদে বাংলাদেশের মধ্যে এবং বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সব নদ-নদী এখন জীবন্ত সত্তা। ঐতিহাসিক ওই রায়ে আদালত বলেন, নদীর বাঁচা-মরার ওপর বাংলাদেশের অস্তিত্ব জড়িত। বাঁচলে নদী বাঁচবে দেশ, বাঁচবে প্রিয় বাংলাদেশ। আইনজীবী মঞ্জুর মুর্শেদ উচ্চ আদালতের সেই রায় সম্পর্কে বলেছিলেন, নদীর কিছু আইনি অধিকার তৈরি হবে এ রায়ের ফলে। ফলে নদী নিজেই তার ক্ষতির বা দখলের বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবে। তবে নদী তো আর নিজে যেতে পারবে না। সেক্ষেত্রে কেউ তার প্রতিনিধি হয়ে ক্ষয় ক্ষতিগুলো আদালতকে জানালে তার প্রতিকার পাবে। ফলে সচেতন মানুষ আশাবাদী হচ্ছেন, হয়তো নদীগুলো রক্ষা পাবে ভরাট, দখল ও দূষণ থেকে। সরকারের নদী উদ্ধারের পদক্ষেপও মানুষকে আশাবাদী করছে। সিলেটের প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারাসহ সিলেটের বিভিন্ন জেলা উপজেলা ও ইউনিয়নে প্রবাহিত দুই শর বেশি নদী রয়েছে। তবে সঠিক তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সম্প্রতি সরকারের নদীরক্ষা কমিশন সারা বাংলাদেশের নদ-নদীর জরিপ কাজ শুরু করেছে। কক্সবাজার থেকে যা শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সিলেট অঞ্চলেও তা করা হবে। এদিকে সিলেটের অধিকাংশ বড় নদীর উৎস ভারতের পাহাড়ি ঢল বেয়ে আসা পানি। এই পাহাড় ঢলের বয়ে আনা লাখ লাখ টন বালি ও মাটি বছরের পর বছর ধরে সিলেট বিভাগের নদ-নদী, হাওর-বাঁওড়কে ভরাট করে দিচ্ছে। এই বালি ও মাটি শুধু নদ-নদীর তলদেশ নয় উৎসমুখও বন্ধ ভরাট করছে। ভারতের মণিপুর রাজ্য থেকে মাও সাংসাং থেকে উৎপন্ন বরাক নদী সিলেটের জকিগঞ্জের অমলসীদ হয়ে সুরমা ও কুশিয়ারা দুই শাখায় প্রবাহিত হয়েছে। সেখানে দীর্ঘ এক দশক ধরে সুরমার প্রবেশ মুখ ভরাট হচ্ছে। যার ফলে শুষ্ক মৌসুমে বরাকের পানির ৭৫ শতাংশ কুশিয়ারা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতির কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সুরমা নদী। চর জেগে উঠছে সুরমার বুকে। অন্যদিকে নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোতে আবাদি জমি থাকলেও পানির অভাবে ফসল ফলাতে পারছেন না কৃষকরা। সুরমা নদীর সিলেট অংশের ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত ২০টি স্থানে চর জেগেছে। কৃষকরা শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় ধান ও সবজি চাষে আগ্রহ ক্রমে হারিয়ে ফেলছেন। এ কারণে আবাদি জমিগুলোও এখন অনাবাদি হয়ে পড়ছে। সিলেট সদর উপজেলার কানিশাইল এলাকায় চরের মধ্যে পলিথিনসহ ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে উঁচু টিলার মতো চর তৈরি হয়েছে। যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে সুরমা নদীতে পানির প্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নদী ভাঙন। ফলে তীরবর্তী মানুষ নানা দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে জৈন্তার সারি নদীজুড়ে চলে বালু ও কয়লা উত্তোলনের মহোৎসব। উৎস মুখের চিত্র আরো করুণ। জেগে ওঠা চরে কিংবা হাঁটুসমান পানিতে যত্রতত্র গর্ত খুঁড়ে বের করা হচ্ছে কয়লা। বস্তাবন্দি করে নদী তীরেই চলে কেনাবেচা। এ কারণে সারির উৎসমুখসহ পর্যটকদের কাছে দর্শনীয় লালাখাল বিপন্ন হয়ে পড়েছে। নদীর পানিতে থাকতে পারছে না মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী। এসব বিষয়ে পরিবেশকর্মী ও বাপার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কীম বলেন, সিলেটের অধিকাংশ বড় নদীর উৎস উত্তর-পূর্ব ভারতের খাসিয়া-জৈন্তিয়াহিল ও ত্রিপুরা রাজ্যে। মূলত উত্তর-পূর্ব ভারতে অবাধ বৃক্ষ নিধন ও পাহাড়ে চলা অপরিকল্পিত কয়লা ও পাথর উত্তোলনের প্রভাবে পাহাড় থেকে নেমে আসা বালি ও মাটিতে নদীর শুধু তলদেশ নয়, উৎসমুখ পর্যন্ত ভরাট হচ্ছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সুরমার উৎসমুখ খননের প্রয়োজনীয়তা যৌথ নদী কমিশনে জরুরিভাবে উত্থাপন করা জরুরি। সুরমাকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে। ‘সারি বাঁচাও আন্দোলন’ এর সভাপতি আব্দুল হাই আল হাদী বলেন, দখল, ভরাট দূষণ এই তিনটি বিষয়ের কারণেই নদীরগুলোর অবস্থা করুণ। তবে নদী নিয়ে সরকারের পদক্ষেপগুলো ইতিবাচক। যেসব নদী ভরাটের কারণে হুমকিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেগুলো খননের ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগণকেও নদী রক্ষায় সচেতন হতে হবে।
 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App