শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে ব্যবস্থা নিন
nakib
প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২০, ০৮:৩২ পিএম
প্রায়ই হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিশু। অধিকাংশ ঘটনার সঙ্গে পরিচিতজনরা জড়িত, অনেক ক্ষেত্রে মা-বাবা জড়িত থাকার মতো অবিশ্বাস্য ঘটনাও ঘটছে। দুটি মানবাধিকার সংস্থার তথ্য মতে, গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ২৭৬ শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে হত্যার শিকার হয়েছে ৮৫ শিশু। শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭৪ শিশু। শিশুর প্রতি এই নির্মমতা-নৃশংসতার কারণ অনুসন্ধান ও তা বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। সম্প্রতি আর্থিক অনটন ও পারিবারিক কলহ থেকে মা-বাবার হাতে শিশু হত্যার কয়েকটি ঘটনা স্তম্ভিত করেছে সর্বস্তরের মানুষকে। সর্বশেষ গত শনিবার সকালে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের দক্ষিণ গোড়ান এলাকার একটি বাসা থেকে দুই শিশুর গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দাম্পত্য কলহের জেরে আক্তারুন্নেছা পপি তার দুই কন্যাশিশুকে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য মতে, গত জানুয়ারি মাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১১৫ শিশু। এর মধ্যে হত্যার শিকার হয়েছে ৬৩ শিশু। আসকের বার্ষিক প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। কন্যাশিশু ধর্ষণের পাশাপাশি ছেলেশিশু বলাৎকারের অনেক ঘটনা লক্ষ করা গেছে। অপরাধ বিজ্ঞানী এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এসব অপরাধের জন্য অল্প সময়ে সহজে টাকা কামানোর কৌশল, পরকীয়া ও অনৈতিক সম্পর্ক এবং সামাজিক নিরাপত্তার অভাবকে দায়ী করেছেন। মা-বাবা ও স্বজনদের হাতে শিশু খুনের ঘটনার পেছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রয়েছে সম্পর্কের টানাপড়েন, অনৈতিক সম্পর্ক, পারিবারিক দ্বন্দ্ব। অপরাধীরা অল্প সময়ে সহজ পথে অবৈধভাবে অর্থ আয়ের জন্য অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির পথ অবলম্বন করে থাকে। যার জন্য সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা দায়ী। অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের ব্যস্ততার সুযোগও নিচ্ছে অপরাধীরা। শ্রম ক্ষেত্রে শিশুরা শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শিশুশ্রম বন্ধে আইনের প্রয়োগ না থাকা এ ক্ষেত্রে দায়ী। সর্বোপরি শিশুর প্রতি সংহিসতা ও নৃশংসতার পেছনে রয়েছে সামাজিক অবক্ষয় ও নৈতিক শিক্ষার দুর্বলতা। এখনই এই নির্মমতা প্রতিরোধ করা না গেলে সামনের সময় আরো খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। শিশু নির্যাতন ও হত্যার মতো অমানবিক অপরাধ প্রতিরোধ করতে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন। এ সংক্রান্ত অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সরকারকে আন্তরিক উদ্যোগ নিতে হবে। শিশুর কল্যাণ, সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করার জন্য প্রণীত শিশু আইন ২০১৩-এর যথাযথ প্রয়োগ জরুরি। শিশু নির্যাতক ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া দৃঢ় করতে হবে পারিবারিক ঐক্য ও বন্ধন। বেশি করে জোর দিতে হবে নৈতিক শিক্ষার ওপর।