×

জাতীয়

রূপনগর বস্তিতে আগুনের পেছনে কার হাত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২০, ১০:১৩ এএম

রূপনগর বস্তিতে আগুনের পেছনে কার হাত

সব গেছে আগুনের গ্রাসে। পেছনে রূপপুর বস্তির ধ্বংসস্তূপ রেখে অপলক তাকিয়ে এই অসহায় নারী -ভোরের কাগজ

রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর বস্তিতে ৩ হাজার টাকায় একটি রুম ভাড়া নিয়ে থাকতেন রোজিনা বেগম। তিনি বাসা-বাড়িতে কাজ করেন। তার স্বামী হাসান আলি আনারস বিক্রেতা। ৫ বছরের শিশু কন্যা মারজিয়াকে নিয়ে তাদের সুখের সংসার। প্রতিদিনের মতো গত বুধবার সকালে মিরপুর ৬ নম্বর বাজারের পাশের একটি বাসায় কাজে যান রোজিনা। ঘর মোছার সময় টেলিভিশনে তাদের বস্তির পাশের ভবনগুলো দেখতে পান। যেখানে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন।

ঘরে মারজিয়া আছে ওর কী হবে চিন্তা করতে করতে দৌড়ে যতক্ষণে এসেছেন ততক্ষণে তার ঘরের অস্তিত্ব নেই। পাগলের মতো খুঁজে বুকের ধন মারজিয়াকে পেলেও আগুনের ধ্বংসস্ত‚পে কিছু খুঁজে পাননি। তবুও ঘরের কাছে দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে বেঁচে থাকার সব স্বপ্ন পুড়ে কয়লা হয়ে ভাসতে দেখেন ঝিলের পানিতে। শুধু রোজিনা নয় ঘাম ঝড়ানো কষ্টের টাকায় তিলেতিলে গড়ে তোলা সবকিছুই হারিয়েছে বস্তির বেশিরভাগ মানুষ। তাদের ঠাঁই এখন খোলা আকাশের নিচে।

বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রূপনগরের বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, পুরো বস্তি রূপ নিয়েছে ধ্বংসস্তূপে। কেউ কেউ হাত দিয়ে শেষ সম্বল কিছু পাওয়া যায় কিনা সেটা হাতরাচ্ছে। কেউ বা মাথা চাপড়িয়ে ঝড়াচ্ছে চোখের পানি। অন্য সবারই চোখে মুখে বোবা কান্নার স্পষ্ট ছাপ। পরিবার নিয়ে কোথায় যাবেন সেটাই এখন বড় চিন্তা তাদের কাছে।

ইসলামিয়া হাইস্কুলের মাঠে আশ্রয় নেয়া আসমা আক্তার নামে বস্তির এক বাসিন্দা বলেন, ৫ হাজার টাকায় দুই ঘর নিয়ে ভাড়া থাকি। বাসাবাড়িতে কাজ করি। পঙ্গু স্বামী ভ্যানে ফেরি করে পান-সিগারেট বিক্রি করেন। স্বামী আর এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সাত মাস আগে বেঁচে থাকার অনেক আশা নিয়ে ভোলার পশ্চিম ইলিশা এলাকা ছেড়ে বস্তিতে ঠাঁই নিয়েছিলাম। কিন্তু এখানেই সব হারালাম।

এদিকে রূপনগরের এ বস্তিতে আগুন লাগার কারণ নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। বস্তিবাসীর অভিযোগ ২০১৯ সালের আগস্টে রূপনগর থানার পেছনের অংশের বস্তিতে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড হয়। এরপর ৩ মাস আগে বস্তির চারপাশে লাগানো হয় ৪/৫টি বড় সাইনবোর্ড। তাতে লেখা আছে ‘ফ্ল্যাট প্রকল্পের নির্ধারিত স্থান, বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ।’ এই সাইনবোর্ডগুলো লাগানোর আগে রূপনগর বস্তির অন্তত ২০টিরও বেশি ঘর ভেঙে ফেলা হয়। ভাঙতে আসা লোকজন বলেছিল, এটা সরকারি জায়গা। এখানে ঘরগুলো বানিয়েছে কারা? এখানে কেউ ঢুকতে পারবে না। এরপর গত বুধবার সেখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল। তাদের দাবি, বস্তিবাসীকে উচ্ছেদ করতে পরিকল্পিতভাবে এ আগুন দেয়া হয়েছে।

বস্তিতে ২০টি ঘরের মালিক ইমন বলেন, ‘আমার জন্ম এই বস্তিতে। গতবছর রূপনগর থানার পেছনের অংশে আগুন লাগার পর আমাদের মনে হয়েছিল এই বস্তিতেও আগুন লাগিয়ে আমাদের উচ্ছেদ করে দেয়া হবে। আমরা বারবার প্রশাসনের কাছে গিয়েছি। বলেছি, আমাদের উচ্ছেদ করে দিলে বলে দেন, আমরা চলে যাব। কিন্তু আমাদের আগুনে পুড়িয়ে নিঃস্ব করবেন না। যা ভাবছিলাম তাই হলো।

জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকার জানান, এটি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নিজস্ব সম্পত্তি। এখানে এখনো কোনো ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গৃহায়ণের পক্ষ থেকে সংস্থাটির সদস্য (প্রকৌশল) এস এম ফজলুল কবীরকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের কারণসহ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।

প্রসঙ্গত, বুধবার সকাল ৯টার দিকে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের সাড়ে ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। বস্তির মোট ঘর সংখ্যা ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ঘরের সংখ্যা জানা না গেলেও স্থানীয় প্রতিনিধি ও বাসিন্দারা জানান, ১০ হাজারের বেশি ঘর ছিল রূপনগরের এই বস্তিতে, যার মধ্যে ৭ হাজার পুড়ে গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App