×

মুক্তচিন্তা

ভেজাল খাদ্যে মৃত্যুর দায়

Icon

nakib

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২০, ০৮:২৫ পিএম

বিশুদ্ধ খাদ্য মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম প্রধান। খাদ্য গ্রহণ ছাড়া মানুষসহ কোনো প্রাণীই বেঁচে থাকতে পারে না। তবে সে খাবার অবশ্যই হতে হয় বিশুদ্ধ। দূষিত বা ভেজালমিশ্রিত খাদ্য মানুষের জন্য স্বাস্থ্যহানিকর। অথচ আজকের বাংলাদেশে সেই বিশুদ্ধ খাবার খুঁজে পাওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য পানিও আজ বিশুদ্ধ নয়। বোতলজাত পানির প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ দূষিত। অফিস-আদালতে, বাসাবাড়িতে সরবরাহকৃত বড় বড় জারের পানির ৯৮ শতাংশই জীবাণুপূর্ণ। আর খাবারের বিশুদ্ধতার কথা ভাবতে গেলে হিমশিম খেতে হয়। বাজারের ৮৫ শতাংশ মাছে ফরমালিন মিশিয়ে মাছের পচন রোধ করে বিক্রি হওয়া মাছ খেতে হচ্ছে। প্রকৃতি প্রদত্ত শাকসবজিতে বিষাক্ত স্প্রে, সব ধরনের ফলমূল দ্রুত পাকিয়ে রঙিন বানাতে সর্বত্রই কার্বাইড, ইথোফেন আর ফরমালিন প্রয়োগ করা হচ্ছে। আটায় মেশানো হচ্ছে চক পাউডার বা ক্যালসিয়াম কার্বনেট। পোল্ট্রিফার্মের ডিমে ট্যানারি বর্জস্থিত বিষাক্ত ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে। আনারসে হরমোন প্রয়োগ করে দ্রুত বৃদ্ধিও প্রক্রিয়া চলে আসছে। আম গাছে মুকুল ধরা থেকে শুরু করে আম পাকা পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে রাসায়নিক ব্যবহার এখন ওপেনসিক্রেট। মিষ্টিজাতীয় খাবারে ব্যবহার করা হয় বিষাক্ত রং, সোডা, সেকারিন, মোম। মসলায় কাপড়ের বিষাক্ত রং, ইট ও কাঠের গুঁড়া মেশানো হয়। নকল ও ভেজাল ওষুধে ছেয়ে গেছে বাজার। অপারেশনের কাজে ব্যবহৃত প্যাথেডিন, নরমাল স্যালাইনসহ নানা ধরনের জীবন রক্ষাকারী ওষুধ বাজারজাত করে চলেছে ভেজালচক্র। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল দেয়া ও ভেজাল খাদ্য বিক্রির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া ১৪ বছরের কারাদণ্ডেরও বিধান রয়েছে সেই আইনে। ২০১৫ সালে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষও গঠন করা হয়েছে। মাঝে মধ্যে ভেজালবিরোধী অভিযান চালানো হলেও ভেজালদানকারী চক্রকে দমন করা যাচ্ছে না। খাদ্যপণ্যে ভেজাল প্রতিরোধের মূল দায়িত্ব বিএসটিআইর। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, র‌্যাব, পুলিশসহ ৬টি মন্ত্রণালয়ের ১০টি বিভাগ ভেজাল বন্ধের দায়িত্বে নিয়োজিত। পাশাপাশি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগেরও এ ব্যাপারে ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু এসব সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অভাবে ভেজাল প্রতিরোধ কার্যক্রম সফল হচ্ছে না। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামান্য জেল, জরিমানার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভেজাল পণ্য উদ্ধার ও পরীক্ষা-সংক্রান্ত জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতায় ভেজাল প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা আজ থমকে গেছে। খাদ্যকে বিষমুক্ত রাখতে ‘ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ বিল-২০১৫’-এ ফরমালিনের ব্যবহার রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ২০ লাখ ও সর্বনিম্ন ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান হয়েছে। এ আইনে ফরমালিন বিক্রয়ের দোকান সাময়িকভাবে বন্ধসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। আইন অনুসারে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স ছাড়া ফরমালিন উৎপাদন, আমদানি, মজুত, বিক্রয়, পরিবহন এমনকি ব্যবহার বা দখলে না রাখার নির্দেশনা দেয়া আছে। কিন্তু এসবের কার্যকারিতা খুবই সামান্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। ভেজালের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি অতি মুনাফালোভী, অসাধু খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারীদের কঠোর শাস্তির আওতায় এনে দেশব্যাপী ভেজালমুক্ত খাদ্যপণ্য সরবরাহের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কেননা চোর যে সব সময় ধর্মের কাহিনী শুনবে এমনটি ভাবার সুযোগ নেই। জন্মের প্রথম প্রহরে একটি শিশু যেমন সর্বপ্রথম বিশুদ্ধ মাতৃদুগ্ধ পান করার স্বাদ গ্রহণ করে, তেমনি সুস্থ দেহ-মন নিয়ে বেড়ে উঠতে সেই শিশুর সারাজীবন বিশুদ্ধ খাদ্য গ্রহণের নিশ্চিয়তা বিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কেননা বিশুদ্ধ খাদ্য গ্রহণ মানুষের জন্য বিশেষ কোনো সুবিধা নয়, অধিকার।  

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App