×

জাতীয়

বাবুল চিশতির হাজার কোটি টাকার সম্পদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২০, ০৯:৫২ এএম

বাবুল চিশতির হাজার কোটি টাকার সম্পদ
মাহবুবুল হক চিশতি ওরফে বাবুল চিশতি। আর্থিক খাতের জাল-জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত বহুল আলোচিত নাম। ২০১৫ সালে পাঁচটি ঋণে বড় জালিয়াতির তথ্য ফাঁসের পর তাকে ফারমার্স ব্যাংকের সব পদ ছাড়তে হয়েছে। এরপর কয়েক বছরে প্রায় এক ডজন মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। সম্প্রতি অবৈধ সম্পদ অর্জনের আরো একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এদিকে বাবুল চিশতির অনিয়মের সবচেয়ে সুবিধাভোগী হলো শ্যালক মোস্তফা কামাল। সম্প্রতি জামিন পেয়েছেন তিনি। যা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ^স্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, বাবুল চিশতি যে কোনো শর্তে আবারো ফারমার্স ব্যাংকে ফিরে আসতে চান। আর এ জন্য তিনি তার অবৈধ সম্পদকে কাজে লাগাতে চান। তবে ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা মনে করেন, বাবুল চিশতির শ্যালক জামিন পেয়েছেন। অতএব, বাবুল চিশতিও জামিন পাবেন। আর এটি হলে ব্যাংক খাতে চরম বিশৃঙ্খলা শুরু হবে। এ খাতের ওপর মানুষের আস্থা উঠে যাবে। তথ্য বিশ্লেষণে বাবুল চিশতির দুর্নীতিগুলোতে দেখা গেছে, চার টাকায় এক শতক ও ১৩২ টাকায় এক বিঘা জমি কিনেছেন বাবুল চিশতি। অথচ শায়েস্তা খানের আমলেও ১৩২ টাকায় এক বিঘা জমি কেনা সম্ভব ছিল না। বাবুল জালিয়াতির মাধ্যমে ত্রিশ হাজার শতক জমি মাত্র চার টাকা দরে কিনেছেন যা দুর্নীতি দমন কমিশনে দেয়া হিসাবে দাবি করা হয়েছে। সংস্থাটির তদন্তে জালিয়াতির এ সব তথ্য উঠে এসেছে। এভাবে মূলত সম্পদের তথ্য গোপনের চেষ্টা করেছেন তিনি। তথ্যমতে, দুদকে দেয়া সম্পদের বিবরণীতে প্রায় ৬৫ বিঘা জমির ক্রয়মূল্য ৩৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা দেখিয়েছেন বাবুল চিশতি। নিজ উপজেলা বকশীগঞ্জের গোলগাঁও মৌজায় এক শতক জমির ক্রয়মূল্য চার টাকা বলে দাবি করেছেন তিনি। একইভাবে পলাশতলা মৌজায় ১৫ শতক জমি মাত্র ২২৯ টাকায় কিনেছেন বলে তথ্য দিয়েছেন। এ হিসাবে প্রতি শতক জমির দাম পড়ে ১৫ টাকা। এছাড়া কামালপুর মৌজায় সাত হাজার ৩২ টাকায় বাবুল চিশতি কিনেছেন ৫৮ শতক জমি। এখানে প্রতি শতক জমির দাম পড়েছে ১২১ টাকা। এখানেই শেষ না, বাবুল চিশতি অর্ধশত প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ১৮শ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন। ওই ঋণের বড় অঙ্কই পরবর্তী সময়ে বাবুল চিশতীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে। এভাবে নিজে হস্তক্ষেপ করে অনিয়মের ঋণের মাধ্যমে প্রায় ১৮শ কোটি টাকা সরিয়ে নিয়েছেন বলে তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর জালিয়াতির ঋণগুলো খেলাপি হয়ে পড়েছে। শুধু অর্থ আত্মসাৎ করেই ক্ষান্ত হননি বাবুল চিশতি। বাস্তবে যুদ্ধাপরাধী হয়েও নিজেকে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ পরিচয় দেন তিনি। তথ্য মতে, ১৯৭২ সালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হওয়া অভিযুক্তদের তালিকায় তার নাম রয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি মামলায় (যার নং-০-২৭/৭২) প্রায় অর্ধশত যুদ্ধাপরাধীর সঙ্গে ৩৬ নম্বরে থাকা মাহবুবুল হক ওরফে বাবুলের পিতার নাম এম এইচ চিশতি, গ্রামের নাম ভট্টরাজা ও থানা শ্রীবরদী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ ২০১৭ সালে জামালপুরের দুই উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির প্রধানও হয়েছিলেন তিনি। দুদক সূত্রে জানা গেছে, অবৈধভাবে বাবুল চিশতী প্রায় ২৮ কোটি ৫৫ লাখ, তার স্ত্রী রোজি চিশতী প্রায় ৩৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, শ্যালক মোস্তফা কামাল প্রায় ৮৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা, ছেলে রাশেদুল হক চিশতী প্রায় ৩২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, ছেলের স্ত্রী ফারহানা আহমেদ প্রায় ১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ও কলেজ পড়–য়া মেয়ে রিমি চিশতি প্রায় ২১ কোটি ২০ লাখ টাকার সম্পদ গড়েছেন বলে তথ্য মিলেছে। কিন্তু বাবুল চিশতি, তার স্ত্রী রোজি চিশতি ও শ্যালক মোস্তফা কামালসহ তার পরিবারের সদস্যরা ওই সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। এদিকে ১৩৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের পাঁচ মামলায় বাবুল চিশতীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। তথ্যমতে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ফয়সাল মামলাগুলোতে পদ্মা ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান বাবুল চিশতীকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। ওই দিন বিচারক আসামির উপস্থিতিতে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানির জন্য ৮ মার্চ দিন রাখেন। গত রবিবার বাবুল চিশতীকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এর আগে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মোহাম্মদ ফয়সাল বাদী হয়ে বাবুল চিশতী ও তার পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে আলাদা পাঁচটি মামলা করেন। ওই পাঁচটি মামলার আসামি বাবুল চিশতী। মামলাগুলোতে বাবুল চিশতীর সঙ্গে তার স্ত্রী রোজি চিশতী, ছেলে রাশেদুল হক চিশতী, ছেলের স্ত্রী ফারহানা আহমেদ ও তার মেয়ে রিমি চিশতীকে আসামি করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App