×

মুক্তচিন্তা

পৃথিবীর রং আবার বদলাবে?

Icon

nakib

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২০, ০৮:৩৫ পিএম

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস মানব জাতির সামনে এক ভয়াবহ বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। চীন থেকে শুরু হলেও এখন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে এই মানবঘাতী ভাইরাস। আতঙ্ক এবং গুজবের শেষ নেই। বাংলাদেশও এর আঘাত থেকে মুক্ত নয়। এই ভাইরাসে কত মানুষের প্রাণহানি হবে, কতদিন স্থায়ী হবে এর দাপট- এসব নিশ্চিত করে বলার মতো কোনো বিশেষজ্ঞ এখনো দেখা যাচ্ছে না। তবে করোনা ভাইরাস কেবল বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যঝুঁকিই তৈরি করছে না, মারাত্মক অর্থনৈতিক বিপর্যয়েরও ইঙ্গিত দিচ্ছে। আরো কিছুদিন এই ভাইরাসের সংক্রমণ অব্যাহত থাকলে শিল্প-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিও বাধাগ্রস্ত হতে পারে! তবে এখনই অনুমাননির্ভর এমন কোনো ভবিষ্যদ্বাণী করা ঠিক হবে না, যা মানুষকে হতোদ্যম করতে পারে। বাংলাদেশের মানুষের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার এক ধরনের অদম্য মনোবল আছে। মড়ক মোকাবিলার পারদর্শিতা বাঙালি সহজাতভাবেই যেন আয়ত্ত করে থাকে। নতুন বিশ্ব আতঙ্কও বাঙালিকে বিভ্রান্ত করবে না, এ আশা করাই যায়। সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনজন রোগী শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুজিববর্ষ উদযাপনের কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। সাবধান-সতর্ক থাকলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব। আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছে যারা যে কোনো কিছু থেকেই অর্থ কামাইয়ের ফন্দি খোঁজে। মানুষের জীবন-মৃত্যুর সমস্যা নিয়েও বাণিজ্য করতে তাদের বিবেক কাঁপে না। করোনার সুযোগে কেউ যেন মজুতদারি-মুনাফাখোরির সুযোগ না পায়, সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধু মজুতদার-মুনাফাখোরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। মুজিববর্ষ উদযাপনের সময় যদি দেশে মজুতদার-মুনাফাখোরদের নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে বিষয়টি হবে খুবই দুঃখজনক।দেশের রাজনীতিতেও স্বাভাবিকভাবে করোনার প্রভাব পড়েছে। রাজনীতি নিয়ে এখন মাথা ঘামানোর সময় নয়। তাই আজ একটু অন্যদিকে চোখ রাখা যাক।

স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ঢাকার পুরানা পল্টনের দুটি নম্বর, দুটি ঠিকানা, দুটি বাড়ির ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না। আমার, আমার মতো আরো অনেকের কাছে স্মৃতিময় ওই বাড়ি দুটি। ১০ পুরানা পল্টনে ছিল ছাত্র ইউনিয়ন অফিস। আর ২১/১ পুরানা পল্টনে কমিউনিস্ট পার্টির অফিস। স্বাধীন দেশে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দুটি সংগঠনের প্রথম অফিস খোলা হয়েছিল ওই দুই ঠিকানায়। কত দিন, কত ঘণ্টা যে আমরা অনেকে ওই দুই অফিসে কাটিয়েছি, তার হিসাব নেই। কবিতা লেখা আর প্রেমে পড়া নাকি বাঙালি তরুণদের সহজাত। কবিতা লেখার ব্যর্থ চেষ্টা করেছি। প্রেমেও পড়েছি। তবে কোনো মানবীর নয়, রাজনীতির। নারী প্রেমেও যে কেউ কেউ পড়েননি তা নয়। তবে তা ছিল একান্ত আপন এবং পোপন। আহা, সেইসব দিন। সোনা রঙের সেই দিনগুলো কোথায় হারিয়ে গেল। ১০ পুরানা পল্টনে ছাত্র ইউনিয়ন অফিস ছিল ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত। সেখানে ছাত্র ইউনিয়নের সাপ্তাহিক মুখপত্র ‘জয়ধ্বনি’ অফিসও ছিল। ছাত্রদের একটি নিয়মিত পত্রিকা, যার প্রকাশনার দায়িত্ব ছাত্রদের, জয়ধ্বনি ছাড়া এ দেশে তার দ্বিতীয় নজির নেই। অন্য দেশেও বেশি আছে বলে মনে হয় না। ১৯৭৩ সালে ঢাকা এসে খুব দ্রুত আমি জয়ধ্বনির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম। প্রথমে জয়ধ্বনির সম্পাদক ছিলেন আব্দুল কাইয়ুম মুকুল। পরে সম্পাদক হন অজয় দাশগুপ্ত। ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় নেতাদের কয়েকজনকে নিয়ে একটি সম্পাদকীয় বোর্ড ছিল। এছাড়া চার-পাঁচজনের একটি টিম জয়ধ্বনি প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সবাই ছাত্র। আমি যাদের পেয়েছি তাদের মধ্যে ছিলেন মনিরুজ্জান লস্কর বাদল, তার ভাই জুয়েল, আ ক ম নূর হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রহমানও আমাদের টিমে ছিলেন। সব মিলিয়ে কী জমজমাট সময় ছিল তখন। ১০ পুরানা পল্টন ছিল আমাদের কাছে নেশার মতো। দিনে এক চক্কর না দিলে পেটের ভাত হজম না হওয়ার অবস্থা। ২১/১ পুরানা পল্টনের কমিউনিস্ট পার্টি অফিসও ছিল আমাদের আর এক বড় আকর্ষণ। আমরা বলতাম, বিপ্লবের লাল দুর্গ। যেখানে বসে মণি সিংহ-আব্দুস সালাম-খোকা রায়-অনিল মুখার্জি-জ্ঞান চক্রবর্তী-অজয় রায়-মোহাম্মদ ফরহাদ-সাইফউদ্দিন মানিকেরা হৃদয়ের উত্তাপ দিয়ে বিপ্লবের বাষ্প তৈরি করে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টায়রত। সে বাষ্পতাপ একবার শরীরে না নিয়ে কি হলে ফেরা যায়? কমিউনিস্ট পার্টি অফিস এখনো ২১/১ নম্বরে থাকলেও আগের অবস্থায় নেই। যেমন আগের অবস্থায় নেই আমি, আমার মতো আরো অনেকে। কমিউনিস্ট পার্টির একতলা হলুদ বাড়িটি এক সময় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল আন্দোলনের প্রধান ঠিকানায় পরিণত হয়েছিল। এখন মাঝখানে দেয়াল তুলে দুদিকে দুই বিরাট ভবন তৈরি হয়েছে। একদিকে কমিউনিস্ট পার্টি, অন্যদিকে সাবেক কমিউনিস্টরা মণি সিংহ ও মোহাম্মদ ফরহাদের নামে ট্রাস্ট গঠন করে অফিস খুলে বসে আছেন। ঠিকানা আছে অপরিবর্তিত, কেবল যাওয়া-আসা কমেছে পুরনো মানুষদের। নতুনদের আনাগোনাও কি খুব বেড়েছে? জানি না। ছাত্র ইউনিয়ন অফিসের সঙ্গে লাগোয়া ছিল মরণ চাঁদের মিষ্টির দোকান, ওই দোকান এখনো আছে। তখন ছাত্র ইউনিয়ন অফিস থেকে বের হয়ে মরণ চাঁদ পার হতে গিয়ে দোকানের ভেতর কাচঘেরা আলমারিতে থরে থরে সাজানো বিভিন্ন রকম মিষ্টির থালা দেখে মনে হতো, আহ, সব পদের একটি করে মিষ্টি যদি খেতে পারতাম! পকেটে হাত দিয়ে মনের ইচ্ছাটা চাপা দিতাম। ছাত্র ইউনিয়ন অফিসের উল্টোদিকে রাস্তার ওপারে ছিল তখনকার খুব নামকরা ফ্ল্যামিঙ্গো রেস্টুরেন্ট। আমাদের কেউ কেউ, বিশেষ করে যাদের মেয়ে বন্ধু ছিল, তাদের একটু বেশি যাতায়াত ছিল ফ্ল্যামিঙ্গোতে। নিজের পয়সায় ফ্ল্যামিঙ্গো যাওয়ার সাধ্য আমার ছিল না। তবে কোনো না কোনো বন্ধুর সৌজন্যে ফ্ল্যামিঙ্গোতে গিয়েছি। বিশেষ করে মনে আছে কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান কমপক্ষে দুদিন আমাকে এবং তানভীরকে (তানভীর মোকাম্মেল, একুশে পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা) ফ্ল্যামিঙ্গোতে নিয়ে খাইয়েছিলেন, বেশকিছু সময় আড্ডায় মেতে ছিলেন। তানভীর ঢাকা কলেজে শওকত ওসমানের সরাসরি ছাত্র ছিলেন। ছাত্রকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে শিক্ষকের আড্ডাÑ হ্যাঁ, শওকত ওসমান অমনই ছিলেন।

কমিউনিস্ট পার্টি অফিসের আগেই ছিল ম্যানডারিন নামের চাইনিজ রেস্টুরেন্ট। প্রথমদিকে শুধু বাইরে দাঁড়িয়ে ভেতরের দৃশ্য কল্পনা করতাম। আর মনকে এই বলে সান্ত্বনা দিতাম যে, আমরা হলাম মস্কোপন্থি, চাইনিজ খাবারে আমাদের লোভ থাকতে নেই! চাইনিজ খাওয়া হয়েছিল প্রথম সম্ভবত বন্ধু মহসিন আলীর কল্যাণে। ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের পর দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যেতে থাকে। ১৫ আগস্টের নারকীয় হত্যাকাণ্ড পরিস্থিতি আমূল পাল্টে দেয়। পরে জিয়ার সময় রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু হলেও পুরানা পল্টনে ছাত্র ইউনিয়ন অফিস আর ফিরে পাওয়া যায়নি। তখন ছাত্র ইউনিয়ন অফিস নেয়া হয়েছিল হোসেনী দালানে। জিয়া অবশ্য কমিউনিস্ট পার্টি অফিস পার্টিকে ফেরত দিয়েছিলেন। ২১/১-এ আমাদের সময় কেটেছে তুলনামূলকভাবে বেশি। আমি তো ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এসে মোহাম্মদ বরাহদের সৌজন্যে কমিউনিস্ট পার্টি অফিসে সপ্তাহখানেক রাতও কাটিয়েছি। তখন শেখরদা (শেখর দত্ত) পার্টি অফিসেই থাকতেন। আমি ফরহাদ ভাইয়ের এলাকা থেকে আসায় একটু বাড়তি খাতির পেয়েছিলাম বলে মনে হয়। তখন আমাদের মনে কত আশা, কত স্বপ্ন। দেশে বিপ্লব হবে। সমাজতন্ত্র কায়েম হবে। কত মিছিল। কত স্লোগান। কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না তা হবে না। ভাত-কাপড়-জমি-কাজ কমিউনিস্ট পার্টির এক আওয়াজ। আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো। মণি সিংহের বজ্রদীপ্ত ঘোষণাÑ বাংলাদেশ হবে ১৫তম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। কত আয়োজন। কত প্রস্তুতি। কত সংগঠন। কত সংগঠক। কত বন্ধু। কত চেনা মুখ। ম. হামিদ, শহীদুল ইসলাম বাদল, অজয় দাশগুপ্ত, বিধান বিশ্বাস, আ ক ম জাহাঙ্গীর, কামালউদ্দিন আহমেদ, কাজী আকরাম হোসেন, মুহম্মদ হিলালউদ্দিন, কামরুল আহসান খান, খায়রুল আহসান খান, মৃণাল সরকার, সুরেশ দত্ত, মনীরুজ্জামান লস্কর বাদল, খন্দকার শওকত জুলিয়াস, শওকাত হোসেন, নিতাই দাস, খন্দকার ফারুক, আনোয়ারুল হক, এম এম আকাশ, নজরুল ইসলাম, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, রঞ্জন কর্মকার, নুরুল ইসলাম, জীবন সাহা, সুলতান আহমেদ, মিজানুর রহমান চৌধুরী, বিনায়ক সেন, মোস্তফিজুর রহমান বাবুল, তাহেরউল্লাহ, আরিফুল হক কাবুল, মোসলেহউদ্দিন, নাসিরউদ্দোজাসহ আরো কত নাম স্মৃতির পাতায় ভাসছে। আমাদের যারা আরো সিনিয়র কিংবা পদধারী বড় নেতা তাদের নাম তো উল্লেখই করলাম না। এক পর্যায়ে কমিউনিস্ট পার্টির কত প্রভাব। আওয়ামী লীগ, বিএনপির মতো বড় দলের নেতারাও এসে বসে থাকতেন কমিউনিস্ট পার্টি অফিসে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের চালকের আসনে যেন মোহাম্মদ ফরহাদ, কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক। আমাদের বুকে কত বল। কত ভরসা।

অকস্মাৎ বজ্রপাত হলো। আমরা বিহ্বল হলাম। চিকিৎসার জন্য মস্কো গিয়ে মোহাম্মদ ফরহাদ ফিরে এলেন শব হয়ে। নক্ষত্রের পতন হলো। অসুস্থ হয়ে শয্যাগত কিংবদন্তি কমিউনিস্ট নেতা মণি সিংহ। এত তারা আকাশে। অথচ সব কেমন নিষ্প্রভ মনে হতে লাগল। কী থেকে কী হয়ে গেল। যে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব এ দেশসহ দেশে দেশে অসংখ্য মানুষকে বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত করে তুলেছিল, সেই মহাপরাক্রমশীল রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল। আমাদের দেশের কমিউনিস্ট নেতারাও মুখ থুবড়ে পড়লেন। আমার মনে হয়, আমাদের নেতারা ছিলেন সোভিয়েতঅন্ধ। অন্ধের হাতে ওয়াকিং স্টিক তুলে না দিয়ে সোভিয়েতের ভেঙে পড়ায় তারা তারা বিভ্রমে পড়েন। তার এত এত মানুষের আত্মদান, রক্ত, ত্যাগে গড়া পার্টিটা হুড়মুড় করে ভেঙে দিলেন। ঐতিহাসিক আপসরফায় পার্টি অফিসে দেয়াল তুলে দিলেন। একদিকে আদি কমিউনিস্টরা লাল ঝাণ্ডা উড়িয়ে জানান দিচ্ছেন, সব শেষ হয়ে যায়নি। মানুষের শোষণ মুক্তির আশা জেগে থাকবেই। লড়াই জারি রহে গা। অন্যদিকে মণি সিংহ মোহাম্মদ ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্ট। প্রবাদপ্রতিম দুই কমিউনিস্টের নাম জড়িয়ে যারা ট্রাস্ট করলেন তারা আর নিজেদের কমিউনিস্ট বলে পরিচয় দেন না। হায়, এক জীবনে কত কী দেখছি। কী চেয়ে কী পেলাম! কাদের হাতে আমরা আমাদের ভাগ্য সঁপে দিয়ে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো অপচয় করলাম! এখন আর পুরানা পল্টনের দিকে খুব একটা যাওয়া হয় না। তবে ফেলে আসা দিনগুলোর জন্য মন কেমন করাটা কাটাতে পারি না। যে পার্টি অফিসে প্রাণ খুলে আড্ডা দিয়েছি, নানা তর্ক-বিতর্কে অংশ নিয়েছি, সেখানে যেতে এখনো মন চায়। কিন্তু এই ভেবে অস্বস্তি বোধ করি, আমি যে আর কমিউনিস্ট নেই। মার্কসবাদকে আমি আর সব রোগের মহৌষধ মনে করি না। যারা মার্কসবাদে আস্থা রেখে বিপ্লবের স্বপ্ন এখনো জাগিয়ে রেখেছেন তাদের কাছে আমি যে আর বন্ধু নই। তারা বিশ্বাসী, তারা মহৎ। আমি বিশ্বাস রাখতে ব্যর্থ হয়েছি। আমার চিত্ত দুর্বল। তবে আমি এটা গর্ব করে বলতে পারি যে, কমিউনিস্ট পার্টির লাল কার্ড হবন না করলেও বিত্তবৈভবের পেছনে ছুটিনি। সৎভাবে জীবনরক্ষার সংগ্রামে লিপ্ত। আমার চেয়ে অধম আর কে হতে পারে! বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহু দূর।

পৃথিবীর রং নাকি আবার বদলাবে। মানুষের শোষণ মুক্তির স্বপ্ন মিথ্যা নয়। আশায় বুক বাঁধি। কিন্তু হতাশার কারণই বেশি ঘটতে দেখি। দুনিয়াব্যাপী ধর্মোন্মাদনার ঝড়ো হাওয়া। ডানপন্থার উত্থান দেশে দেশে। ট্রাম্প-মোদির মতো নেতাদের জনসমর্থন হ্রাস না পেয়ে বাড়ে। মানুষের দক্ষিণযাত্রা থামানোর পথ দেখা যাচ্ছে না। মানুষের সঙ্গে থেকে মানুষের জন্য রাজনীতি করার মতো কর্মী দল দেখা যায় না। তারপরও কান পেতে শোনার চেষ্টা করি কালের ঘণ্টাধ্বনি। কাল বহমান। নিরবধি গতিময়। সব কিছু ভেসে যায় জীবন, যৌবন, ধন, মান। থাকে তবে কী? থাকে কি শুধু অন্ধকার? না, তা কেন? রাতের শেষে তো দিন আসে। আঁধার স্থায়ী নয়। আলো আসবেই। দুদণ্ড শান্তি দেয়ার ও মুখোমুখি বসার নাটোরের বনলতা সেনের দেখা পাওয়ার বাসনা তীব্র থেকে তীব্রতর হোক! পল্টন যদি আমাদের আবার এক করতে পারত! কারো কাছে আছে তেমন কোনো জাদুর কাঠি?

বিভুরঞ্জন সরকার : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App