×

অর্থনীতি

৩০ ব্যাংকের নিরাপদ সীমা অতিক্রম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২০, ১১:৫৫ এএম

৩০ ব্যাংকের নিরাপদ সীমা অতিক্রম

কেন্দ্রীয় ব্যাংক

অর্থনীতি ও উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না। চরম অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি কমাতে বিভিন্ন সময়ে নানা পদক্ষেপ নিলেও কার্যত কোনো সুফল মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতে যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার নিরাপদ সীমা অতিক্রম করেছে এমন ৩০টি ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ মোট বিতরণের ৫ শতাংশের ওপরে তাদেরই চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে ১০ শতাশের বেশি খেলাপি হওয়া ব্যাংকগুলোকে দেয়া হয়েছে কড়া নির্দেশনা। চিঠির মাধ্যমে উচ্চ খেলাপির কারণ, আদায় পরিস্থিতি ও পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে পাঠানো চিঠিতে পরবর্তী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে উত্তর পাঠানোর নির্দেশনাও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আর্থিক খাতের ওপর বিশ্ব ব্যাংকের তৈরি ‘ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রামের (এফএসএপি) এক খসড়া প্রতিবেদনে সুশাসনের অভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের হার বাড়ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, যেসব ব্যাংকের খেলাপি ১০ শতাংশের বেশি তাদের উদ্বেগজনক তালিকায় রাখা হয়। মনিটরিং করা হয় নিয়মিত। বর্তমানে ১০ শতাংশের উপরে ঋণ খেলাপি এমন ব্যাংকের সংখ্যা ১৫টি। এদিকে ৫ শতাংশের উপরে ও ১০ শতাংশের নিচে খেলাপি রয়েছে ১৩টি ব্যাংকের। এ ছাড়াও দুর্বলতা বিবেচনায় আরো দুটি ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১০ শতাংশের উপরে খেলাপিকৃত ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ মোট বিতরণের ১৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এছাড়াও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের ৫০ শতাংশ, বেসিক ব্যাংকের ৫৩ শতাংশ, জনতা ব্যাংকের ২৯ শতাংশ, রূপালী ব্যাংকের ১৫ শতাংশ এবং সোনালী ব্যাংকের প্রায় ২২ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ১০ শতাংশের ওপরে থাকা ব্যাংকগুলোর তালিকায় রয়েছে এবি ব্যাংকের খেলাপি। ব্যাংকটির খেলাপির পরিমাণ মোট বিতরণের ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৪৭ শতাংশ, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ৮৪ এবং পদ্মা ব্যাংকের ৭২ শতাংশ।

বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ যথাক্রমে ১৫ শতাংশ, ১৬ শতাংশ এবং ১৭ শতাংশ। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে উদ্বেগজনক অবস্থা বা ১০ শতাংশের উপরে রয়েছে হাবিব ব্যাংক লিমিটেড। যার খেলাপি ঋণের পরিমাণ মোট বিতরণের ১১ শতাংশ এবং ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের খেলাপি ঋণ বিতরণের ৯৮ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, গত দশ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে চার গুণ। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা; ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে গেছে। মোট ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের হার ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। তবে গত সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ২২ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমিয়ে ফেলেছে ব্যাংকগুলো। খেলাপি ঋণ কম দেখাতে এবং বেশি মুনাফা দেখানোর চেষ্টার অংশ হিসাবে গত বছর রেকর্ড পরিমাণ ঋণ পুনঃতফসিল করেছে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৫০ হাজার ১৮৬ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়মিত করা হয়েছে। যা এক বছরে সবচেয়ে পরিমাণে পুনঃতফসিল করার রেকর্ড। গত বছর ১৬ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিথিল করা নীতিমালার মাধ্যমে ১৮ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা পুনঃতফসিল করা হয়। ঋণ খেলাপিদের প্রদেয় ১০ থেকে ৫০ শতাংশের বদলে মাত্র ২ শতাংশ বকেয়া প্রদানের মাধ্যমে তাদের ঋণ পুনঃতফসিল করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। শিথিল করা নীতিমালা থেকে পুনঃতফসিল করা ঋণের ডাউন পেমেন্ট হিসেবে ব্যাংকগুলো মাত্র ৪৭৯ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে।

তথ্য অনুযায়ী, ৫ শতাংশের ওপরে খেলাপি প্রকৃত ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেসরকারি খাতের আইএফআইসি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ, মেঘনা ব্যাংকের ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ওয়ান ব্যাংকের ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংকের ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের ৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ, সাউথইস্ট ব্যাংকের ৫ দশমিক ২১ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ, সিটি ব্যাংকের ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং উত্তরা ব্যাংক লিমিটেডের ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App