×

মুক্তচিন্তা

বৈষম্য অবসানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২০, ০৭:০১ পিএম

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন একটি সরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এই করপোরেশনের অধীনে ১৫টি চিনিকল ও একটি যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা রয়েছে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের চিনিকলগুলোই একমাত্র কৃষিভিত্তিক ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। কৃষক তাদের উৎপাদিত আখ সরকার নির্ধারিত মূল্যে সরাসরি সরবরাহ করেন চিনিকলে। চিনিকলের কৃষি বিভাগ আখ চাষিদের ঋণের মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল বীজ, সার ও বালাইনাশক সরবরাহ করে এবং আখ চাষের আধুনিক কলাকৌশল প্রয়োগে চাষিদের সহায়তা প্রদান করে। এছাড়া চিনিকলগুলো মিল এলাকায় রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করে। আখ চাষির মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তি প্রদান করে। আখের মূল্য ও শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতা বাবদ কোটি কোটি টাকা প্রদান করে। ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ একটি নির্দিষ্ট এলাকায় আবর্তিত হয়ে গ্রামীণ অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে। আখ চাষ দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানে সহায়তা করে। পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অবদান রাখে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় অন্যান্য ফসলের তুলনায় আখের সক্ষমতা বহু বেশি। খরা, বন্যা, ঝড় ও অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আখ কৃষককে একেবারে বঞ্চিত করে না। বন্যার পর আখই উত্তরাঞ্চলের কৃষকের বেঁচে থাকার ভরসা জোগায়। তাই আখকে বলা হয় বিমাকৃত ফসল। আখ চাষ ও চিনি শিল্পের সঙ্গে দেশের প্রায় ৫০ লাখ লোকের জীবন-জীবিকা জড়িত। ভোক্তাদের মধ্যে চিনির মূল্য সহনশীল পর্যায়ে রাখতে চিনিকলগুলোর অবদানও কম নয়। আখের অভাবে ইতোমধ্যে ১২টি চিনিকল বন্ধ হয়ে গেছে। অর্থের অভাবে চিনিকলগুলো চাষিদের আখের মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না। এ নিয়ে চাষিদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আখের পরিচর্যা, পোকামাকড় ও রোগবালাই দমনের এখনই উপযুক্ত সময়। আখের মূল্য না পেলে কী দিয়ে কৃষক করবে এসব কাজ? সময়মতো পরিচর্যা না হলে আখের ফলন ও গুণগত মান হ্রাস পাবে। হ্রাস পারে আগামী বছর চিনি উৎপাদনের পরিমাণ। জানা মতে, রংপুর চিনিকলে আখ চাষিদের পাওনা রয়েছে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর সব চিনিকলে এই পাওনার পরিমাণ হবে ১৫০ কোটি টাকার ওপর। শুধু আখ চাষিদের পাওনা নয়, অর্থের অভাবে শ্রমিক-কর্মচারীরা দুই মাস ধরে বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আর অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের কষ্টের কথা তো বলে শেষ করা যাবে না। সরকারি কর্মচারীদের মতো তাদের কোনো পেনশন নেই। নেই অন্য কোনো আয়ের উৎস। চাকরি থেকে অবসরের ৩-৪ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও তারা পাচ্ছেন না গ্র্যাচুইটির বিল। বৃদ্ধ বয়সে অর্থের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা ও ওষুধ কিনতে পারছেন না। সন্তানদের পড়াশোনার খরচও বহন করতে পারছে না কেউ কেউ। বাংলাদেশের মতো একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ কর্মচারীদের প্রতি কেন এ ধরনের নিষ্ঠুর আচরণ করা হবে? সমাজ সভ্যতার এই প্রবীণ কারিগরদের এত কষ্ট পাওয়ার কথা নয়। প্রধানমন্ত্রী আপনি মানবতার মা। ন্যায়ের প্রতীক। আমাদের অভিভাবক। বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণদের ভরসাস্থল। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের এই অবসরপ্রাপ্ত অসহায় প্রবীণদের বাঁচানোর দায়িত্বও আপনার। আপনার হস্তক্ষেপ ছাড়া এ সমস্যার সমাধান হবে না। আপনিই পারেন সরকারি কর্মচারীদের মতো অবসর গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সব ন্যায্য পাওনা পরিশোধ এবং এ অমানবিক বৈষম্যের অবসান ঘটাতে। মুজিববর্ষে, জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীতে রাষ্ট্রের কাছে ও আপনার কাছে এটাই আমাদের পরম প্রত্যাশা। নিতাই চন্দ্র রায় সাবেক মহাব্যবস্থাপক, নর্থবেঙ্গল সুগার মিলস লি. [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App