×

সম্পাদকীয়

বস্তি কেন বারবার পুড়ছে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২০, ০৭:১২ পিএম

রাজধানীতে আবারো ঘটল বস্তিতে অগ্নিকাণ্ড। গত বুধবার রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরের শিয়ালবাড়ী বস্তিতে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে বস্তির প্রায় ১ হাজার ঘর। বস্তিতে টিনের ঘর ছিল প্রায় ২ হাজার। ফায়ার সার্ভিসের ২৭টি ইউনিটের ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে পুরোপুরি নেভাতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘণ্টা। ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে যায় স্বল্প আয়ের হাজার হাজার মানুষের যৎসামান্য সম্বল। তারা এখন আশ্রয় নিয়েছেন সড়কে-খোলা আকাশের নিচে। রাজধানীতে বস্তিতে আগুন এবারই প্রথম নয়। বারবার আগুনে পুড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষের স্বপ্ন। এ রকম দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা, শহরের অপরিহার্য অংশ শ্রমজীবী নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি। সাধারণত বস্তিঘরগুলো তৈরি হয় তীব্রভাবে দাহ্য টিন-বাঁশ, পলিথিন দিয়ে। একটি ঘরের কোথাও আগুন লাগা মানে নিমেষে লাগোয়া সব কিছু পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া। আর বস্তিবাসী একেবারেই প্রান্তিক আয়ের মানুষের এই মাথা গোঁজার আশ্রয়েই থাকে তাদের সহায়-সম্বল সব কিছু। রূপনগর বস্তির প্রায় ১০ হাজার মানুষ আশপাশের খোলা জায়গায় ঠাঁই নেয়। নিজেদের মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়টুকু হারিয়ে তারা এখন নির্মম এক সত্যের মুখোমুখি হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সামর্থ্য তাদের নেই। এদের জন্য জরুরি আশ্রয় ও ত্রাণের ব্যবস্থা করা সরকার ও সংশ্লিষ্টদের মানবিক দায়িত্ব। আমরা দেখছি রাজধানীর বস্তি এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। এসব অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ ও সম্পদহানি হয়। সাধারণত বস্তি এলাকায় রান্নাঘরের চুলার আগুন ও বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের জন্য অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। তবে অভিযোগ রয়েছে, পরিকল্পিতভাবে কড়াইল বস্তিতে আগুন দেয়া হচ্ছে। বস্তিবাসী অভিযোগ করেছেন, পরিকল্পিতভাবে আগুন দেয়া হয়েছে রূপনগর বস্তিতে। এর আগে পাশের চলন্তিকা বস্তিতে দুবার এবং এবার এই বস্তিতে আগুন লাগার বিষয়টিকে ‘উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র’ বলে মনে করছেন বাসিন্দারা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যায়, বস্তির পাশেই সাইনবোর্ড টাঙানো আছে। সেখানে লেখা জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব সম্পত্তিতে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের পুনর্বাসনের জন্য ফ্ল্যাট প্রকল্পের নির্ধারিত স্থান। এ ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। তদন্ত কমিটি সঠিক ঘটনা তুলে আনবে বলে আশা করছি। রাজধানীতে জীবন-জীবিকার সুযোগ যেমন বেশি, তেমনি মানুষের বিড়ম্বনা ও বিপন্নতার অন্ত নেই। প্রান্তিক মানুষের আবাসনের অসহায়ত্ব ও অনিরাপত্তা এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন সমস্যার সমাধানে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হলেও বস্তিবাসীর বিকল্প নিরাপদ আবাসনের বড় কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান হচ্ছে না। ফলে উচ্ছেদে পথে বসা, অগ্নিকাণ্ডে জানমাল খোয়ানো বস্তিবাসীর যেন নিয়তি হয়েই দাঁড়িয়েছে। বস্তিবাসীর সার্বিক জীবনমানের উন্নয়নে বড় ধরনের পদক্ষেপ নেয়া না হলে তাদের বিপন্নতার স্থায়ী সমাধান হবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App