×

জাতীয়

দুঃসময়ের ত্যাগী নেতা সুসময়ে ফেরিওয়ালা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২০, ০৩:০৫ পিএম

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নুর ইসলাম খোকন ছিলেন শ্রমিকলীগের সাহসী নেতা ও ত্যাগী সংগঠক। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন অগ্রভাগে। সভা-সমাবেশ করতে গিয়ে যুবদলের সন্ত্রাসীদের গুলিতে বিদ্ধ হয়েছিল তার আপন ছোট ভাই।

আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে ২০০৩ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে সোনাগাজী উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন নুর ইসলাম খোকন। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত প্রায় এক যুগ ধরে দায়িত্ব পালন করেন।

পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে আর রাস্তায় নামতে পারেননি। খোকনের বাবা আবুল কালাম ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং আমৃত্যু আওয়ামী লীগের কর্মী ও সেবক। তার পাঁচভাই সবাই আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী।

নুর ইসলাম খোকন বলেন, জোট সরকারের আমলে শ্রমিকলীগের একাধিক সভা সমাবেশে যুবদল সন্ত্রাসীরা হামলা চালানোয় গুলিবিদ্ধ হয়েছিল আমার আপন ছোট ভাই। দলের সব আন্দোলনে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। আজ আর কেউ আমাকে চেনে না।

এক সময়ের সেই সাহসী নেতা আর সংগঠক নুর ইসলাম খোকন এখন নিঃস্ব। আওয়ামী লীগের সুসময়ে তিনি এখন অনেকটাই পরিত্যক্ত। রিকশাভ্যান নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পেপার ও ভাঙারি মালামাল সংগ্রহ করেন। পরে সেগুলো ফেনীতে পাইকারের কাছে বিক্রি করেন। দিন শেষে তার রোজগার দুশ/তিনশ টাকা। সেই আয়ে কোনোমতে চলে ছয় জনের সংসার আর ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা। সোনাগাজী পৌরসভার মহেশ্চর গ্রামে তার বাবার ভিটায় কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে জরাজীর্ণ কুড়েঘর।

গত ১১ মার্চ বিকেলে সোনাগাজীর ভোরের কাগজ কার্যালয়ে এসে নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে খোকন বলেন, জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ ও সব সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা যখন গ্রামছাড়া, ছিল না কোনো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, সে সময় নিজের পকেটের টাকায় সম্মেলন করেছি। উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছি।

নুর ইসলাম খোকন আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ২০০৮ সালের পর দলের সুসময়ে আমরা সবদিক থেকে অবহেলিত। হাইব্রিড আর অনুপ্রবেশকারীদের ভিড়ে আমরা হারিয়ে গেলাম। আমার সাংগঠনিক পদটি কবে শূন্য হয়েছে, কেন সাবেক হলাম কিছুই জানি না।

নুর ইসলাম খোকন অসহায়ভাবে বলেন, ফেরি করেও দুমুঠো ভাতের জোগাড় করতে পারি না। সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালাতে পারি না। জরাজীর্ণ ঘরে পরিবার নিয়ে কোনোরকমে জীবন চালাচ্ছি। সরকার আমাদের উপজেলায় ২৮০টি ঘর দিয়েছে। সেখান থেকে একটিও আমার ভাগ্যে জোটেনি।

খোকন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, দলের দায়ীত্বশীল ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ঘর পাইনি। শুনেছি টাকার বিনিময়ে চেয়ারম্যান এসব ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন। আমাদের শেষ ভরসা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই।

সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মফিজুল হক বলেন, দলের দুঃসময়ের পরীক্ষিত সংগঠক শ্রমিকনেতা খোকন এখন ফেরিওয়ালা। এটা আমাদের জন্য খুবই লজ্জার। খোকনসহ অসহায় কর্মীদের সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App