×

সম্পাদকীয়

এমন ঘটনা আর কত দেখতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২০, ০৭:৫৩ পিএম

এবার গোপালগঞ্জে শিক্ষা সফরের বাস দুর্ঘটনায় এক শিক্ষিকার হাত বিচ্ছিন্ন করার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ওই ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কে ছয়জন নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার এসব দুর্ঘটনা ঘটে। প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। কে লাগাম টানবে বেপরোয়া গাড়িচালকদের? জানা গেছে, গোপালগঞ্জে ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষা সফরের বাস দুর্ঘটনায় সৈয়দ ফাহিমা বেগম (৫০) নামে এক শিক্ষিকার হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে ওই বাসে থাকা অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহত সৈয়দা ফাহিমা বেগমকে মঙ্গলবার বিকালে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার বাম হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত রয়েছে। গত বছরের ৩ এপ্রিল বাংলামোটরের অদূরেই কারওয়ানবাজার ক্রসিংয়ে দুই বাসের পাল্লায় চাপা পড়ে হাত বিচ্ছিন্ন হয় সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেনের। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। ওই ঘটনার কয়েক দিন পরই মহাখালী এলাকায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে পা হারিয়েছিলেন গৃহকর্মী রোজিনা আক্তার। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনিও। প্রায় একই সময়ে বাসের চাকায় পা বিচ্ছিন্ন হয় প্রাইভেটকারের চালক রাসেলের। তিনি এখন পঙ্গু জীবনযাপন করছেন। এসব ঘটনায় আদালত জরিমানা ও সতর্ক করলেও গত বছর আগস্টে ঢাকায় ঘাতক বাসের চাকায় পা গেল নারী কর্মকর্তা কৃষ্ণার। এমন দুর্ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ পরিবহন খাতে বিরাজমান বিশৃঙ্খলা। বেতনভুক্ত চালক দিয়ে লোকাল (বাস) গাড়ি চালালে মালিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে নগরীর অধিকাংশ পরিবহন মালিক তাদের বাস-মিনিবাস চালককে চুক্তিতে চালাতে দিচ্ছে। চুক্তির কারণেই চালকরা বেপরোয়া। কারণ একই রুটের যে বাস আগে শেষ গন্তব্যে পৌঁছাবে সে-ই ফিরতি ট্রিপের সিরিয়াল পাবে। এ কারণে একই রুটের বাসের মধ্যেই ভয়াবহ মরণ রেস দেখা যায়। আর এ প্রতিযোগিতার কারণেই পরিণতি হয় দুর্ঘটনা। সড়ক ব্যবস্থাপনার চিত্র এক কথায় ভয়াবহ। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা কঠিন কোনো বিষয় নয়। এ জন্য দরকার ইতিবাচক চিন্তা ও সমন্বিত পদক্ষেপ। রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর প্রাণহানির ঘটনায় গড়ে ওঠা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হয়। আর বাস্তবায়ন শুরু হয় সংসদে পাস হওয়ার প্রায় এক বছর পর গত ১ নভেম্বর। কিন্তু এ আইন প্রয়োগের শুরুতেই পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখেই আইনের প্রয়োগ অনেকটাই থমকে গেছে। আর এ শিথিলতার কারণে সড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে গেছে। সড়কপথে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হলে দুর্ঘটনার হার অনেক কমে আসবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ জন্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীদের সচেতন হতে হবে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App