×

অর্থনীতি

পুঁজিবাজারে ফের মহাধস!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২০, ১০:৪৩ এএম

একদিনে সূচক পড়েছে ২৭৯ পয়েন্ট দাম কমেছে প্রায় সব কোম্পানির শেয়ার বিক্রির হিড়িক ২০১০ সালের পর টানা দরপতন

 দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত তিনজন শনাক্ত হওয়ার পর গতকাল সোমবার স্মরণকালের ভয়াবহ দরপতন হয়েছে উভয় পুঁজিবাজারে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নীরবতা, বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার কারণে পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের মধ্যেই রবিবার করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) সংক্রমিত তিনজনের তথ্য আইইডিসিআর। এরপরই গতকালের এই দরপতন। দিনের শুরুতেই শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়ে দুই স্টক মার্কেটে। দিনশেষে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক কমে যায় ২৭৯ পয়েন্ট। এই সূচক চালুর পর থেকে এমন দরপতন হয়নি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ২০১০ সালে মহাধসের পর পুঁজিবাজারের এত নাজুক অবস্থা বিগত দশ বছরে আর হয়নি বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৭৯ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। প্রধান মূল্যসূচক হিসেবে ডিএসইএক্স চালুর পর সূচকটির এত বড় পতন আর হয়নি। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচকটি শুরুরও নিচে নেমে গেল। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক হিসেবে ডিএসইএক্স ৪ হাজার ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে যাত্রা শুরু করে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি। প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বেহাল দশা ডিএসইর অন্য সূচকগুলোর। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকটি কমেছে ৮৮ পয়েন্ট। ১ হাজার ৪৬০ পয়েন্ট নিয়ে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি চালু হওয়া সূচকটি এখন ১ হাজার ৩৪৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইর আরেক সূচক ‘ডিএসই শরিয়াহ্’। ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি এ সূচকটি যাত্রা শুরু করে। শুরুতে এ সূচকটি ছিল ৯৪১ পয়েন্টে। সোমবার লেনদেন শেষে সূচকটি ৬৯ পয়েন্ট কমে ৯২৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিন ডিএসইতে ১২৪টি প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে ৯ শতাংশের বেশি। দফায় দফায় দাম কমিয়েও অনেক বিনিয়োগকারী এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করতে পারেননি। ২০১০ সালের মহাধসের পর দেশের বাজারে এমন নাজুক অবস্থা আর দেখা যায়নি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বড় ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ কারণে দেশি-বিদেশি সব ধরনের বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়িয়েছেন। তারা বলছেন, কারোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিশে^র বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে। করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পর মুজিববর্ষের কর্মসূচিও পুনর্বিন্যাস করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এসব কারণেই বড় ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, দেশে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই কারণে দেশের উভয় বাজারে বড় দরপতন হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা, ভাইরাসের কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা আসতে পারে। এতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি ভালো ব্যবসা করতে পারবে না। করোনা ভাইরাস আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। আবার একই কারণে কোনো কোনো বিনিয়োগকারী নতুন করে বাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। আরেক অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা ভাইরাস আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করছেন। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপে পুঁজিবাজারের এই পতন। গত দশ বছরে পুঁজিবাজারে এমন দরপতন আর হয়নি। আর সরকারি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের কথা থাকলেও তারা এখন পর্যন্ত নীরব ভ‚মিকা পালন করছে। বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকাল সোমবার লেনদেনের প্রথম ঘণ্টাতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২০০ পয়েন্টের ও বেশি কমে যায়। সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে পতনের মাত্রা। সেই সঙ্গে দরপতন হতে থাকে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের। এতে দিনভর ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৫২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৪৯টিরই শেয়ারের দাম কমে যায়। বেড়েছে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম। আর একটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিককালে এমন ভয়াবহ দরপতন দেখা যায়নি। বড় ধরনের ধস হলেও লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৯৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪২৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৭৫৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৩৪৩ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মাত্র ৭০ কোটি ২০ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ২৫৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম কমেছে ২৪৯টির বেড়েছে তিনটির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪ কোম্পানির শেয়ার দর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্রোকারেজ হাউসের একাধিক সিইও জানিয়েছেন, পুঁজিবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যে কারণে বাজারে বড় দরপতন হয়েছে। করোনা আতঙ্ক ছাড়া এই মুহূর্তে বাজারে দরপতন হওয়ার কোনো কারণ নেই। দেশে করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার কারণে এখন সবাই আতঙ্কিত। বড় ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারে বিনিয়োগ করছেন না। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর নীরবতা পুঁজিবাজারে আরো আতঙ্ক বাড়িয়েছে। এছাড়া বিদেশিদের চেয়ে দেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিক্রির চাপ আসছে বেশি। বিদেশিরা হয়তো ১০-১৫টি কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করছেন। কিন্তু দেশি বিনিয়োগকারীরা প্রায় সব ধরনের শেয়ার বিক্রি করেছেন। এ কারণে বাজারে ভয়াবহ দরপতন হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ^ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, এমনিতেই পুঁজিবাজারের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা খুবই কম। দেশে করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ায় এই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। আগে তো বলা হতো আমদানি কমবে, এবার করোনার রোগী শনাক্ত হওয়ায় দেশীয় পণ্য সরবরাহে সমস্যা তৈরি হতে পারে। এই আশঙ্কা থেকে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে সম্প্রতি সরকারি ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের পথ উন্মুক্ত করলেও কার্যত তারা বিনিয়োগ করছেন না। এ কারণে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীর আগ্রহ কমেছে। ক্ষতির আশঙ্কায় শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে যেতে চাইছেন তারা। আতঙ্ক তৈরি হয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, দেশে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই কারণে দেশের উভয় বাজারে বড় দরপতন হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা, ভাইরাসের কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা আসতে পারে। এতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি ভালো ব্যবসা করতে পারবে না। করোনা ভাইরাস আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। আবার একই কারণে কোনো কোনো বিনিয়োগকারী নতুন করে বাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। আরেক অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা ভাইরাস আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করছেন। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপে পুঁজিবাজারের এই পতন। গত দশ বছরে পুঁজিবাজারে এমন দরপতন আর হয়নি। আর সরকারি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের কথা থাকলেও তারা এখন পর্যন্ত নীরব ভ‚মিকা পালন করছে। বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকাল সোমবার লেনদেনের প্রথম ঘণ্টাতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২০০ পয়েন্টের ও বেশি কমে যায়। সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে পতনের মাত্রা। সেই সঙ্গে দরপতন হতে থাকে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের। এতে দিনভর ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৫২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৪৯টিরই শেয়ারের দাম কমে যায়। বেড়েছে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম। আর একটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিককালে এমন ভয়াবহ দরপতন দেখা যায়নি। বড় ধরনের ধস হলেও লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৯৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪২৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৭৫৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৩৪৩ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মাত্র ৭০ কোটি ২০ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ২৫৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম কমেছে ২৪৯টির বেড়েছে তিনটির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪ কোম্পানির শেয়ার দর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্রোকারেজ হাউসের একাধিক সিইও জানিয়েছেন, পুঁজিবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যে কারণে বাজারে বড় দরপতন হয়েছে। করোনা আতঙ্ক ছাড়া এই মুহূর্তে বাজারে দরপতন হওয়ার কোনো কারণ নেই। দেশে করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার কারণে এখন সবাই আতঙ্কিত। বড় ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারে বিনিয়োগ করছেন না। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর নীরবতা পুঁজিবাজারে আরো আতঙ্ক বাড়িয়েছে। এছাড়া বিদেশিদের চেয়ে দেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিক্রির চাপ আসছে বেশি। বিদেশিরা হয়তো ১০-১৫টি কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করছেন। কিন্তু দেশি বিনিয়োগকারীরা প্রায় সব ধরনের শেয়ার বিক্রি করেছেন। এ কারণে বাজারে ভয়াবহ দরপতন হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, এমনিতেই পুঁজিবাজারের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা খুবই কম। দেশে করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ায় এই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। আগে তো বলা হতো আমদানি কমবে, এবার করোনার রোগী শনাক্ত হওয়ায় দেশীয় পণ্য সরবরাহে সমস্যা তৈরি হতে পারে। এই আশঙ্কা থেকে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে সম্প্রতি সরকারি ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের পথ উন্মুক্ত করলেও কার্যত তারা বিনিয়োগ করছেন না। এ কারণে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীর আগ্রহ কমেছে। ক্ষতির আশঙ্কায় শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে যেতে চাইছেন তারা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App