×

মুক্তচিন্তা

খালেদা জিয়ার প্যারোল প্রসঙ্গে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২০, ১০:৫৭ পিএম

ইংরেজি ভাষায় একটি প্রবাদ বাক্য আছে, ‘A drowning man catches at a straw' অর্থাৎ ডুবন্ত মানুষ হাতের কাছে খড়কুটা যা পায় তাই আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়। খালেদা জিয়ার স্বজন এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মতে বেগম জিয়া এখন সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাকে বাঁচানোর জন্য কৌশলের আশ্রয় না নিয়ে সোজাপথে যাওয়াই শ্রেয়। প্রত্যেক সভ্য দেশে রাজনীতি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সর্বাঙ্গীণ সুন্দর করার ব্যাপারে রাজনীতির বিকল্প নেই। আবার রাজনীতি নিয়ে চূড়ান্ত নোংরামি করার দৃষ্টান্তও বিরল নয়। বিএনপির নেতাকর্মীরা নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়ে শারীরিকভাবে অক্ষম খালেদা জিয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। একজন নেতা বলেন, বেগম জিয়া জেলে থাকলেই তাদের লাভ। এতে প্রতিদিন ১০ লাখ করে ভোট বাড়বে। অর্থাৎ এই ক্রমবর্ধমান ভোটারের ওপর ভিত্তি করেই তারা ক্ষমতায় আসবেন। আন্দোলনের আর দরকার নেই। আন্দোলন ছাড়াই সরকারের পতন ঘটবে। দেশবাসী লক্ষ করেছে, বেগম জিয়ার দুর্নীতির মামলার শুরু থেকেই তার আইনজীবীরা যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে মামলাকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করেছেন। পঞ্চাশবারের অধিক আদালত বদল, হাকিম বদল করেছেন। অদূরদর্শী নেতা ও আইনজীবীদের ধারণা ছিল, খুব শিগগিরই বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল (সেটা নির্বাচিত বা অনির্বাচিত) করবে। এই অপকৌশলে ব্যর্থ হয়ে তারা বেগম জিয়ার সুচিকিৎসার দাবিতে আইনের পথে না গিয়ে মানবিক সাহায্যের জন্য নাকি কান্না করছেন। তাদের এই কান্নার মধ্যে কতটা আন্তরিকতা আছে তাতে জনমনে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তারা বেগম জিয়ার অসুস্থতার সুযোগে তার ওপর ভর করে বৈতরণী পার হতে চান। একজন সত্তরোর্ধ্ব নারীর শারীরিক অবস্থাকে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের এমন নিকৃষ্ট উদাহরণ আর হয় না। একজন মানুষের জীবন রাজনীতির চেয়ে অনেক মূল্যবান। সেটা বিবেচনা রেখে তার শুভানুধ্যায়ীদের উচিত যে কোনো উপায়ে বেগম জিয়াকে আসন্ন মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা। সেটা জামিন হোক বা প্যারোলে হোক। সম্ভাব্য প্যারোলের পথে না গিয়ে তারা জামিনে মুক্তির দাবিতে অনড় রয়েছেন। বেগম জিয়ার অনুসারীদের রাজনৈতিক ভণ্ডামী বুঝতে কোনো সাধারণ নাগরিককে বেগ পেতে হয় না। মানুষ মাত্রই ভুল করে। বেগম জিয়া তার অতীত রাজনীতিতে অনেক ভুল করেছেন, অন্যায় করেছেন। এখনো দেশবাসী চোখ বুজে দেখতে পায়, বেগম জিয়ার সেই রুদ্রমূর্তি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ঘটনা সংসদ অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘তাকে কে হত্যা করবে, তিনি নিজেকে নিজেই হত্যা করতে চেয়েছেন, তিনি (শেখ হাসিনা) ভ্যানিটি ব্যাগে করে বোমা নিয়ে এসেছেন।’ ২৪ জনকে হত্যা করার ব্যাপারে সংসদে কোনো আলোচনা হলো না, শোক প্রস্তাবও গৃহীত হলো না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, সহিংসতা নয়, দলাদলি নয়, দেশে আমরা সুস্থ রাজনৈতিক ধারার চর্চা চাই। হিংসা কেবল হিংসারই জন্ম দেয়। মানবিক আবেদনের নামে বিএনপি নেতারা যেন কোনো কৌশলের আশ্রয় না নেয়। আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়া উচিত। পৃথিবীর বহু দেশের বহু রাষ্ট্র নায়কের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত ভোগ করতে হয়েছে। অন্যায় করলে, অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হয় এটাই বিধির বিধান। শাহ্জাহান কিবরিয়া : শিশুসাহিত্যিক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App