×

সম্পাদকীয়

এ খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো জরুরি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২০, ১১:০৪ পিএম

তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকিং খাতের মূলধন ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে উচ্চ খেলাপি ঋণের কারণে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণে (সিএআর) ব্যর্থ হয়েছে ১২ ব্যাংক। ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। অর্থনীতি ও উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছে বিশৃঙ্খলা। চরম অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আর্থিক খাতে ঝুঁকি বাড়ছে, যা দেশের সার্বিক অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, মূলধন ঘাটতিতে থাকা মোট ১২ ব্যাংকের মধ্যে ৫টি সরকারি, ৪টি বেসরকারি, ১টি বিদেশি এবং ২টি বিশেষায়িত ব্যাংক। এদের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোতে ঘাটতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। ডিসেম্বর শেষে মোট ১০ হাজার ৭৭৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা মূলধন ঘাটতিতে সরকারি খাতের ৫টি ব্যাংক। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে ২ হাজার ৫৭৩ কোটি, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে ১০ হাজার ১৯৯ কোটি এবং বিদেশি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি প্রায় ৬২ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক মানদÐ অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের অনুপাত মোট বিতরণ করা ঋণের ২ শতাংশের মধ্যে রাখতে হয়, যা বাংলাদেশ কখনোই অর্জন করতে পারেনি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতির এবং সমৃদ্ধির উজ্জ্বল চিত্র আমাদের উল্লসিত করলেও আমাদের সব উচ্ছ্বাস থেমে যায় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির অঙ্ক দেখলে। এ বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সবাই সচেতন এবং ওয়াকিবহাল। বিষয়টি সবাইকে বিব্রত করে, এ নিয়ে সরকারি বিভিন্ন মহলে এবং ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দারুণ অস্বস্তি রয়েছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে কেবল আমানতকারী বা ব্যবসায়ীরাই ব্যাংকবিমুখ হবেন না, উৎপাদন, বিদেশি বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এখনই সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। অস্বীকার করার উপায় নেই, রাজনৈতিক ছত্রছায়া, উচ্চ আদালতে রিট, সর্বোপরি বিচার না হওয়ার কারণেই বড় বড় অর্থ আত্মসাৎ ও ঋণখেলাপির ঘটনা বাড়ছে। এমনকি নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বলতা, রাঘববোয়ালদের বাঁচাতে উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ এবং তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করার কারণে আর্থিক খাতের লুটেরারা উৎসাহিত হচ্ছে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া অর্থ আত্মসাৎ সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া কাগজপত্র ও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে মোটা অঙ্কের ঋণ দেয়াই এর প্রমাণ। ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে হলে প্রথমেই ঋণখেলাপিসহ প্রতিটি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা-পরিচালকদের সাজা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের সম্পদ জব্দ করে জনগণের শ্রম-ঘামের আমানত উদ্ধার করতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে যেন রিকভারি এজেন্টরা জিম্মি হয়ে না পড়ে সেদিকেও গভীর মনোযোগ দিতে হবে। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন ফিরিয়ে আনার বড় চ্যালেঞ্জ এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা সরকারের সামনে। শক্ত হাতে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। প্রয়োজনে আইনি সংস্কার করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App