×

জাতীয়

ভয়ংকর নির্যাতনের শিকার আদিবাসী নারীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২০, ০৯:০৯ পিএম

ভয়ংকর নির্যাতনের শিকার আদিবাসী নারীরা

আদিবাসী অনুষ্ঠানে মেনন।

কথায়, নৃত্যে, গানে আর নারী সম্মাননা প্রদানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস- ২০২০ উদযাপন করল। গতকাল রাজধানীর ছায়ানটে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সংগঠনটি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন। বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক ফাল্গুনী ত্রিপুরার সঞ্চালনায় এবং সদস্য তুলি লাবণ্য ম্রংয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ঈশানী চক্রবর্তী, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্চীব দ্রং, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ জাহেদ হাসান এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা প্রমুখ।

একাত্তরের চাইতেও ভয়ংকর নির্যাতনের শিকার আদিবাসী নারীরা এমন মন্তব্য করে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাশেদ খান মেনন বলেন, শান্তিচুক্তি করেও আদিবাসীরা সামরিকীকরন থেকে মুক্ত হতে পারেনি। তিনি বলেন, পাহাড়ে ভূমি সমস্যার সমাধান না হলে পাব্যত্য চট্টগ্রামে কোনোদিন শান্তি ফিরে আসবে না। সমতার অধিকার আদায়ে নতুন প্রজন্মকে পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে লড়াই করতে হবে এ আহবান জানিয়ে মেনন আরো বলেন, নারীনীতিতে আদিবাসী নারীর কথা লেখা নেই, সেখানে তাদেরও অর্ন্তভূক্ত করতে হবে। কারণ তারা প্রান্তিক থেকেও প্রান্তিকতার নীচে রয়েছে। তারা সমতলে এবং পাহাড়ে নির্যাতীত এবং বঞ্চিত। দেশে নারীর ক্ষমতায়নের এ সময়েও নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে।

মো. জাহেদ হাসান বলেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের রিপোর্ট অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে আদিবাসী নারীর উপড় সহিংসতার মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেড়ে চলেছে। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে একসাথে আন্দোলন করার জন্য আহ্বান জানান। সঞ্জিব দ্রং বলেন, আদিবাসীরা পৃথিবীর জন্য, পৃথিবীর মানুষের জন্য, পৃথিবীকে বসবাসযোগ্য করে তোলার জন্য পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই আদিবাসীদের মৌলিক অধিকারকেও খর্ব করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে আদিবাসীদের বিভিন্ন অধিকারের কথা বলা থাকলেও স্থানীয় পর্যায়ে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুসারে একটা মানবিক মর্যাদার রাষ্ট্র গড়ে তোলার কথা বলা হলেও তা আজও অনুপস্থিত। তিনি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে ভবিষ্যত পৃথিবী বিনির্মাণের জন্য তরুণ প্রজন্মকে আহ্বান জানান।

ঈশানী চক্রবর্তী বলেন, আজকের পৃথিবীর বাস্তবতায় স্লোগান সর্বস্ব অনুষ্ঠান না করে প্রকৃত অর্থে নারীদের সমঅধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্দোলন পরিচালনা করতে হবে। এখনো পৃথিবীর ৯০ ভাগ পুরুষ নারীদের সমানাধিকারে বিশ্বাস করেনা যার কারণে পৃথিবীব্যাপী নারীর উপড় সহিংসতার মাত্রা বেড়ে চলেছে। তাই নারী অধিকার সুরক্ষার আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।

নিরুপা দেওয়ান বলেন, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ বাস্তবতায় সমাজের নারীরা অনেক কিছু করার চেষ্টা করলেও করতে পারেনা। অথচ সমাজ, রাষ্ট্র গঠনে, মানব সভ্যতা উন্নয়নে নারীর ভূমিকা প্রশ্নাতীত। পার্বত্য চট্টগ্রামে অ-আদিবাসী দ্বারা আদিবাসী নারী ধর্ষণের শিকার হলে সেই ধর্ষককে বাঁচানোর জন্য সেখানকার সামরিক, বেসামরিক প্রশাসন উঠেপড়ে লেগে যায়। সামাজিক বাস্তবতা ছাড়াও প্রশাসনের এমন সাম্প্রদায়িক। অনুষ্ঠানে সফল তিন আদিবাসী নারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। তাঁরা হলেন, প্রথম আদিবাসী নারী আইনজীবি এ্যাডভোকেট সৃজনি ত্রিপুরা, নারী অধিকার কর্মী বিচিত্রা তির্কী এবং উদ্যোক্তা হেবাং রেষ্টুরেন্ট এর বিপলী চাকমাকে।

আলোচনা সভা শেষে বাংলাদেশ আদিবাসী কালচারাল ফোরাম, নবনীতা চৌধুরী, ইউ মিনি মারমা সূচি এবং আদিবাসী নারী ব্যান্ড ক্রেমলিন ব্যান্ডের পরিচালনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপহার দেয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App