×

সারাদেশ

চেয়ারম্যানের গ্রাসে দুঃস্থদের চাল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২০, ০৮:৪৭ পিএম

চেয়ারম্যানের গ্রাসে দুঃস্থদের চাল
কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ছক্কুর বিরুদ্ধে ৪০ টি দুঃস্থ পরিবারের চাল আত্মসাতসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে । বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ না করেই সে অর্থ ভূয়া ভাউচার সমন্বয় করে তুলে নেন চেয়ারম্যান। এছাড়াও গত এক বছর ধরে পরিষদের মাসিক উন্নয়ন সভা হয় না। চেয়ারম্যান পরিষদের সদস্যদের বাদ দিয়ে মনগড়া ভাবে সকল কার্যক্রম করেন। পরিষদের ১০জন সদস্যের লিখিত অভিযোগে এসব তথ্য জানাগেছে। তেররশি পাড়া গ্রামের মহির উদ্দিনের স্ত্রী বিউটি বেগম কার্ড নম্বর ১৬১, আব্দুর রশীদের স্ত্রী নুরজাহান বেগম কার্ডনং- ১৬৬, আলম মিয়ার স্ত্রী রাশেদা বেগম কার্ডনং- ৮৭৭, ৮নং ওয়ার্ডভুক্ত এলাকা আনন্দপাড়ার নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী রজুফা বেগম কার্ডনং- ৭২৯, একই গ্রামের শাহা আলমের স্ত্রী সাবানা খাতুন এর কার্ডনং ৭৩০ ও শংকরমাদবপুরের শাহা আলমের স্ত্রী আকলিমা খাতানের কার্ডনং ৮৯৯। এদের নামের প্রতিমাসের চাল তুলে নেন চেয়ারম্যান নিজেই। কার্ডধারী ওইসব দুঃস্থরা জানান, আমাদের নাম রয়েছে অথচ আমরা কিছুই জানি না। অপরদিকে ৫নং ওয়ার্ডভুক্ত চরসাজাই গ্রামের আবুল কাশেমের স্ত্রী কবিতা খাতুন কার্ডনং-৪৩৫, শের আলীর স্ত্রী নাছিমা খাতুন কার্ডনং-৪৩৭, আব্বাস উদ্দিনের স্ত্রী রেখা খাতুন কার্ডনং-৪৬৩ এদেরকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। তালিকাভুক্ত কার্ডধারী দুঃস্থদের গ্রামে গিয়ে জানা গেছে ভুয়া নাম ব্যবহার করে প্রতিমাসের চাল তোলা হচ্ছে। একই ভাবে ৮নং ওয়ার্ডভুক্ত আনন্দপাড়া গ্রামের ৭২৬ নং কার্ডধারী শামসুল হকের মেয়ে রোসানা খাতুন, সাজাই সরকার পাড়া গ্রামের কার্ডধারী ২৭০নং বিউটি খাতুন ও কার্ডধারী ১৭০ শ্রী মতি রানীদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এভাবে ভুয়া নাম ব্যবহার করে চেয়ারম্যান দুঃস্থদের চাল আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন চেয়ারম্যান। ওয়ার্ড মেম্বার ফরিদুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। রাজীবপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধিনে উপজেলার তিন ইউনিয়নে ২০১৯-২০২০ সালের দুইবছর মেয়াদি তিন হাজার ২ শ ৯২ জন দুঃস্থ মহিলাকে ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় আনা হয়। এতে প্রতি দুঃস্থ মহিলা ২৪ মাস সরকারি ভাবে ৩০ কেজি করে চাল সুবিধা পাবে। ওই কর্মসূচীর আওতায় কোদালকাটি ৯ শ০০ দুঃস্থ পরিবারকে ভিজিডি কর্মসূচীর আওতায় তালিকাভুক্ত করা হয় এবং গত বছরের জানুয়ারী মাস থেকে প্রতিমাসে সরকারি ভাবে ওই সহায়তা প্রদান করা হয়। কোদালকাটি ইউনিয়ন পরিষদের ১০জন সদস্যের দেয়া লিখিত অভিযোগে আরো জানা গেছে ভিজিডি ছাড়াও অনেক দুর্নীতি রয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সরকারি ভাবে বরাদ্দকৃত অর্থ কাজ না করেই চেয়ারম্যান আত্মসাৎ করেছেন। যেমন শংকর মাদবপুর বাজারে হাটশেট তৈরির নামে, সাজাই সদরপাড়া আবুলের বাড়ির সামনে ব্রীজ নিমার্ণের নামে সরকারি অর্থ তুলে নেয়া হয়েছে। ফরিদুল ইসলাম ও পাপু মিয়া নামের ইউপি সদস্য জানান, আমাদের চেয়ারম্যান হলেন ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি। নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান। সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে ওইসব অনিয়ম দুর্নীতি করছে। যদি কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে তাহলে তাকে নানা ভাবে হয়রানি করা হয়।’ পরিষদের সদস্য মর্জিনা বেগম, শাহিনা বেগম, বিলকিস বেগম, আনোয়ার হোসেন, আবু সাঈদ মধু, উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করার পরও নিবার্হী কর্মকর্তার রহস্যজনক নীরবতা স্থানীয়দের হতাশ করেছে । অথচ জেলা প্রশাসক অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ইউএনও কে । অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ছক্কু বলেন, ‘আমার পরিষদের মেম্বার চক্রান্ত শুরু করেছেন। মিথ্যা অভিযোগ করেছেন আমার বিরুদ্ধে। যেসব ভিজিডি কার্ডের অভিযোগ করেছেন তা আমি সংশোধনের জন্য চিঠি দিয়েছি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে। কিছু ভুয়া নাম হয়েছে তা ঠিক করে নেয়া হবে।’ এ প্রসঙ্গে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘অভিযোগের তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকতার্কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’ তদন্ত কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়া হবে।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App