×

সারাদেশ

আ.লীগ নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে নাটকীয় রদবদল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২০, ১০:১৩ এএম

আ.লীগ নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে নাটকীয় রদবদল

আ জ ম নাছির উদ্দিন

হঠাৎ করেই নাটকীয় পরিবর্তন হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ড. অনুপম সেনকে পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান বা প্রধান সমন্বয়কের পদ থেকে সরিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে। অন্যদিকে সদস্য সচিব পদ থেকে নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুলকে সরিয়ে তার পরিবর্তে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

চসিক নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে রবিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে বিকালে নগরীর কে সি দে রোডে মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে এটি ঘোষণা দেয়া হয়। এদিকে, সার্কিট হাউসে দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বৈঠক চলাকালে বিক্ষোভ করেন কাউন্সিলর পদের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এ সময় প্রার্থীরা অভিযোগ করেন, দলের জন্য কাজ না করে ভুয়া পদ-পদবি দেখিয়ে দলের সমর্থন ভাগিয়ে নিয়েছে অনেকেই। তাছাড়া সাংগঠনিক কাজসহ বিভিন্ন সময়ে অবদান রাখলেও দল তাদের মূল্যায়ন করেনি। তাই বাধ্য হয়ে তারা প্রার্থী হয়েছেন।

প্রসঙ্গত, আসন্ন চসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ এবং স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের আদেশ-অনুরোধ উপেক্ষা করে শ’খানেক বিদ্রোহী নির্বাচন করতে অনড় অবস্থানের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

সূত্র জানায়, চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থীর পাশাপাশি অধিকাংশ বিদ্রোহীই আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী। এই অবস্থায় নাছিরের অনুসারী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণ করে দল মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থীদের জয় নিশ্চিতের কৌশল হিসেবে আ জ ম নাছিরকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে।

এদিকে আ জ ম নাছিরকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব করায় স্বস্তি ফিরে এসেছে তার অনুসারীদের মধ্যে। তবে এই পরিবর্তন স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগের অন্য একটি অংশ। তারা বলছেন, মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় নাছির উদ্দিন আচরণবিধির কারণে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে ঘরোয়াভাবে বসে নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে তাকে। কিন্তু চসিক নির্বাচনে যদি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মাঠে যেতে না পারেন সেক্ষেত্রে নির্বাচনী প্রচারণায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

নতুন করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা রাখা হয়েছে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেনকে। কো-চেয়ারম্যান হয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, উত্তর জেলার সভাপতি এম এ সালাম। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভ‚মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

সার্কিট হাউসে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক ওয়সিকা আয়েশা খান, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন ও মহানগর, উত্তর, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, চসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সিদ্ধান্তই চ‚ড়ান্ত। তিনি যেকোনো প্রয়োজনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে সংশোধন, সংযোজন, পরিবর্তন আনতে পারবেন। তার ওপর এ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। এছাড়া একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। প্রার্থীদের বিজয়ী করতে তারা যৌথভাবে কাজ করবেন।

এর আগে সকালে নগরীর পতেঙ্গায় নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণকাজ পরিদর্শন শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রামের সমস্যা এখানে চট্টগ্রামের নেতারাই সমাধান করবেন। তবে কোনো সমস্যা হলে আমরা কেন্দ্র থেকে অবশ্যই সাজেশন দেব।

এদিকে গতকাল রবিবার বিকালে দলের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিমের নির্বাচনী প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত বর্ধিত সভায় চসিক নির্বাচনে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রার্র্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিদ্রোহীদের অবশ্যই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হবে। সিদ্ধান্ত না মানলে তাদের চিরতরে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে দল।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে বিএনপি-জামায়াত সুযোগ নেয়ার অপচেষ্টা চালাতে পারে। বিরোধীদের সঙ্গে আঁতাত করে কেউ কিছু করার চেষ্টা করলে ঢাকায় বসেই তা জানা যাবে। মনোনয়ন বঞ্চিতরা দলের সিদ্ধান্ত মেনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলে দল অবশ্যই তাদের মূল্যায়ন করবে।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বর্ধিত সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কার্য নির্বাহী সদস্য মো. আনিস, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন আহমদ, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, মেয়র প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App