×

সরকার

নারী নির্যাতন রোধে পুরুষকে এগিয়ে আসতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২০, ০৩:১৫ পিএম

নারী নির্যাতন রোধে পুরুষকে এগিয়ে আসতে হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নারী ধর্ষণের ঘটনা শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বব্যাপী একটা সমস্যা। নারী নির্যাতন রোধে আমাদের যেমন সচেতনতা দরকার, সেই সঙ্গে পুরুষদেরও এগিয়ে আসতে হবে। কারণ, নারী ধর্ষণকারী পুরুষরাই। কাজির পুরুষ সমাজকেও সোচ্চার হতে হবে যারা এই ধরণের পাশবিক অত্যাচার করে তারা সমাজের সবচেয়ে জঘন্য পশুর চেয়েও অধম।

রবিবার (৮ মার্চ) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন দেখা যায় পড়াশোনার ক্ষেত্রে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশি এগিয়ে। রেজাল্টে মেয়েদের সংখ্যাই বেশি। শিক্ষামন্ত্রীকে বলবো এই যে জেন্ডার গ্যাপ এটা কেন হচ্ছে সেটা যেন খুঁজে দেখা হয়। জয়িতা পুরস্কার প্রাপ্তরা আমাদের দৃষ্টান্ত। তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ভবিষ্যতে নারীরা আরো এগিয়ে যাবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। নারীর অধিকার নিশ্চিত করেছেন। সংবিধানে নারীর অধিকার সমুন্নত রেখেছেন।

তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সংগ্রামে আমাদের নারী সমাজের বিরাট অবদান রয়েছে। ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে মেয়েরা সবসময় ভূমিকা রেখে আসছে। নারীরা লেখাপড়া শিখেছি। নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছি। আমাদেরকে এই পথ দেখিয়েছেন বেগম রোকেয়া। আমি তার কথা স্মরণ করছি। তিনি যদি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা টা করে না দিতেন। তাহলে নারী সমাজ এই সুযোগ পেত না।

নিজের মায়ের অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবার প্রতিটি সংগ্রামী তার পাশে ছিলেন আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তিনি কখনো সাধারণ নারীদের মত শাড়ি গহনা ও কোনো কিছুই আমার বাবার কাছে দাবি করেননি। সংসার চালাবার ঝামেলাও আমার বাবাকে তিনি দেননি। বরং পাশে থেকে প্রেরণা যুগিয়েছেন শক্তি যুগিয়েছেন। উৎসাহিত করেছেন। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাবা যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তখন তাকে সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। যার জন্য আমরা আজকে স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি। সংসার ও সংগঠনের দায়িত্ব যদি না নিতেন আর আমাদেরকে মানুষ করার দায়িত্ব না নিতেন। তাহলে আমার বাবা নিশ্চিন্তে দেশের সেবায় কখনো আত্মনিয়োগ করতে পারতেন না।

তিনি বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের পর পরেই জাতির পিতা নারীর অধিকার নিশ্চিত করেছেন সংবিধানে। শুধু পুরুষ নয়, নারীর অধিকারও সমানভাবে নিশ্চিত করেছেন। তার লেখা নয়াচীন বইটিতেও তিনি নারীর অধিকার সম্পর্কে কথা বলেছেন। তিনি সবসময় এ কথাটি বলেছেন যে, মেয়েদের শুধু অধিকার নিশ্চিত করলে হবে না। তাদের অর্থনৈতিক অধিকারটুকুও প্রয়োজন। মেয়েরা যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, অর্থ উপার্জন করতে পারে তাহলে সংসারের হাল ধরতে পারবে। পরিবারের কাছে তার গুরুত্বটা বেড়ে যাবে। নারীরা যত শিক্ষিত হবে, স্বাবলম্বী হবে সমাজ তত উন্নত হবে। সমাজের একটা অংশকে অকেজো রেখে দিয়ে একটি সমাজ কখনো চলতে পারে না। সে সমাজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলবে। নারীরা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য আমরা বিভিন্ন আইন করেছি। তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নারীদের উপর পাশবিক অত্যাচারের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানি দোসররা আমাদের নারীদেরকে পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিয়েছিল। দিনের পর দিন মেয়েদের উপর পাশবিক অত্যাচার করত। ক্যাম্পে নিয়ে রাখত। ১৬ ডিসেম্বরের পর বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে মেয়েদেরকে উদ্ধার করা হয়েছিল। অনেকেই তখন প্রেগন্যান্ট ছিল। অনেকেই অসুস্থ মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। একটা ভয়াবহ চিত্র ছিল। জাতির পিতা তখন নারী পুনর্বাসন বোর্ড করলেন। তাদের চিকিৎসার জন্যসুইজারল্যান্ড ইংল্যান্ড জার্মানি থেকে ডাক্তার ও নার্স নিয়ে আসলেন। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তাদেরকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সম্মাননা স্বরূপ এই নারীদেরকে বীরাঙ্গণা হিসেবে উপাধি দেন। কারণ আমাদের স্বাধীনতায় তাদের মহান অবদান রয়েছে।

তিনি বলেন, অনেক বাবা-মা তাদের মেয়েদেরকে পরিচয় দিতে চায়নি। ঘরে তুলতে চায়নি। তাদেরকে একঘরে করে রাখা হতো। তখন আমার মা নিজে উপস্থিত থেকে তাদেরকে বিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের কাবিনে তাদের বাবার নামটা কি লিখবেন, সেটা নিয়ে দ্বিধা ছিল। তখন জাতির পিতা বলে দিয়েছিলেন যে লিখে দাও তাদের বাবার নাম শেখ মুজিবুর রহমান। বাড়ি নম্বর হচ্ছে ৩২ নম্বরের ৬৫৭ নং বাড়ি, ধানমন্ডি। তাদের অনেক সন্তানকে বিদেশিদের কেউ কেউ দত্তক নিয়েছিল। আবার কাউকে তাদের বাবা-মা ঘরে ফিরিয়ে নিয়েছিল। এখন ধীরে ধীরে সেই মানসিকতা অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে মেয়েদের ১০ ভাগ কোটা নিশ্চিত করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App