×

জাতীয়

নারীর মর্যাদা ও সম-অধিকার চায় সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২০, ০৬:৩১ পিএম

নারীর মর্যাদা ও সম-অধিকার চায় সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম

সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম

নারীর মর্যাদা ও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারী-শিশু ধর্ষণ-নির্যাতন-হত্যার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম। ১১০তম আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ রবিবার (৮ মার্চ )শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের উদ্যোগে সমাবেশ ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এর কেন্দ্রীয় সভাপতি রওশন আরা রুশো এবং পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শম্পা বসু ।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ ঢাকা নগর শাখার সদস্য সচিব জুলফিকার আলী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুস্মিতা মরিয়ম। সমাবেশ শেষে সারাদেশে নারী-শিশু ধর্ষণ-নির্যাতন-হত্যার প্রতিবাদে মশাল মিছিল শাহবাগ মোড় থেকে টিএসসি মোড় প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাষ্কর্যে শেষ হয়। বক্তাগণ বাংলাদেশে নারী সমাজের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বলেন, নারী দিবস ঘোষণার ১০৯ বছর পরেও আমাদের দেশের নারীরা রাষ্ট্রীয়ভাবেই আইনী বৈষম্যের শিকার হয়ে সমান অধিকার থেকে বঞ্চিত। এখনও সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়নি। ‘সমকাজে সমমজুরি’ আইনে থাকলেও, প্রায় সকল অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে তার বাস্তবায়ন নেই। পোশাক কারখানায় ৮০ শতাংশ নারী শ্রমিক যৌন নিপীড়নের শিকার হন। তাদের মজুরীও পৃথিবীর মধ্যে সর্বনিম্ম। চা বাগানের অধিকাংশ শ্রমিক নারী। তারা দিনে ২৩ কেজি চা পাতা তুললে ১০২ টাকা মজুরী পান। অমানবিক নিম্ম মজুরি ও নিরাপত্তাহীন কর্মপরিবেশের মধ্যে নারী শ্রমিকদের জীবন কাটে। নারীরা সারাদিন গৃহস্থালির কাজ করেন, তারপরও তাদের শ্রমের স্বীকৃতি মেলে না। অন্যদিকে সারাদেশে নারী-শিশু নির্যাতন-ধর্ষণ-হত্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই খুন-ধর্ষণ-অপহরণ-নির্যাতনের ঘটনা। একটি নির্যাতনের ঘটনা বিভৎসতায়, বর্বরতায় আগেরটিকে ছাপিয়ে যাচ্ছে।

বক্তাগণ আরও বলেন, পুঁজিবাদ টিকে থাকে মুনাফার উপর। পুঁজিবাদী সমাজে নারীর শ্রম সস্তা আর তার দেহ বাজারের পণ্য; দুই-ই মনুফার উৎস। নারীকে তারা অধস্থন করে রাখতে চায়, তারা চায় না নারী তার অধিকার আদায়ে সরব হোক, যেন তাদের মুনাফার সাম্রাজ্য ধ্বসে না পড়ে। সেজন্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো, বুর্জোয়া শাসকশ্রেণি এবং তাদের দোসর বুর্জোয়া মালিক শ্রেণি নারী দিবসের সংগ্রামী চেতনাকে ভুলিয়ে দিতে চাই। তারা নারী দিবসকে কেবলমাত্র আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবশিত করতে চায়।

নারী দিবসের সংগ্রামী চেতনাকে উর্দ্ধে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মুনাফাভিত্তিক ভোগবাদী সমাজব্যবস্থা নারীকে অধিকার দেয় না, মর্যাদা দেয় না; পুরুষতন্ত্রকে জিইয়ে রাখে। বক্তাগণ এক নতুন মানবিক সমাজ-রাষ্ট্র গড়ে তোলার আহ্বান জানান, যেখানে প্রত্যেক মানুষ পাবে তার মানবিক অধিকার ও মর্যাদা; প্রতিষ্ঠিত হবে আইনের শাসন তথা সামাজিক সুবিচার; যা ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা ও অঙ্গিকার। আন্তর্জাতিক নারীদিবসের চেতনার মূলেও ছিল শোষণ-বৈষম্যহীন সাম্য সমাজ গড়ার আহ্বান।

সমাবেশ থেকে দাবি জানান হয়- সারাদেশে নারী ও কন্যা শিশু হত্যা, ধর্ষণ, ফতোয়া, যৌতুক, উত্ত্যক্তকরণসহ ঘরে-বাইরে সর্বত্র সকল প্রকার নারী নির্যাতন রুখে দাঁড়ানো। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান করা, ১৮৬১ সালের ধর্ষণ আইন পরিবর্তন করে যুগোপোযোগী করা, স্বাক্ষ্য আইনে ধর্ষিত নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করার বিধান বাতিল করা, কৃষিসহ সকল ক্ষেত্রে ও স্তরে সমকাজে নারী-পুরুষের সমমজুরি নিশ্চিত ও গৃহ শ্রমিক সুরক্ষা নীতিমালা বাস্তবায়ন করা, সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত ও ইউনিফর্ম সিভিল কোড চালু এবং সিডও সনদের দুটি ধারা থেকে আপত্তি তুলে নেয়া, গৃহস্থালি কাজকে অর্থনৈতিক কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া, জিডিপি’র হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা, জেলায় জেলায় দুঃস্থ নারী পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ , সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূর করে সকল প্রতিষ্ঠানে ৬ মাস সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি কার্যকর, ঢাকাসহ সকল নগর ও পৌর এলাকায় সরকারিভাবে ডে-কেয়ার সেন্টার চালু, নগরে নারীদের জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক গণপরিবহণের ব্যবস্থা , নারীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, প্রতি উপজেলায় সরকারিভাবে নারী হোস্টেল নির্মাণ, বিজ্ঞাপন-নাটক-সিনেমা-ওয়াজ মহফিলে নারীকে অশ্লীল ও পণ্যরূপে উপস্থাপন বন্ধ করা, দুঃস্থ নারী মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পুনর্বাসন, মুক্তিযুদ্ধে নারীদের বীরগাথা, বেগম রোকেয়া, প্রীতিলতা, জাহানারা ইমাম, লীলা নাগ, সুফিয়া কামাল, ইলা মিত্রসহ মহিয়সী নারীদের জীবন-সংগ্রাম এবং গণ-অন্দোলনে নারীদের ভূমিকা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভূক্ত করা, অপসংস্কৃতি, অশ্লীলতা, পর্নোগ্রাফি ও মাদকের ছোবল থেকে নর-নারী, ছাত্র-যুব সমাজকে রক্ষা করা, সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা, পাঠ্যপুস্তকসহ সর্বত্র সাম্প্রদায়িকীকরণ রোধ করা প্রভৃতি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App