×

সারাদেশ

হাতিয়া গণহত্যার মূল হোতাসহ ১৩ রাজাকার গ্রেপ্তার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২০, ০৬:১৮ পিএম

হাতিয়া গণহত্যার মূল হোতাসহ ১৩ রাজাকার গ্রেপ্তার

উলিপুরে অভিযান চালিয়ে ১২ রাজাকার দালাল গ্রেপ্তার। ছবি: প্রতিনিধি।

উলিপুরের হাতিয়া গণহত্যার প্রধান নেপথ্য নায়ক, আকবর মাওলানাসহ ১৩ রাজাকারকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন রাজারহাট উপজেলা থেকে।

জেলার উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের দাগারকুটি, রামখানা, নীলকণ্ঠসহ আশপাশ গ্রামে, ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর মাত্র ২ ঘণ্টার ব্যবধানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, রাজাকার-আলবদর ও স্থানীয় দালালরা মিলে প্রায় সাতশ নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে।

শুধু তাই নয়, পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যার পর একের পর এক গ্রাম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। সেদিন তাদের হাত থেকে শিশু ও বৃদ্ধরাও রক্ষা পায়নি। ১৩ দালাল রাজাকার গ্রেপ্তারের খবরে হাতিয়ার শহীদ পরিবারগুলো ও মুক্তিযোদ্ধারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

উলিপুর থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি তদন্তকারী দল বহুল আলোচিত হাতিয়া গণহত্যার তদন্ত শুরু করে। দুই দফা তদন্ত শেষে মামলা করার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে অপরাধীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

এরই প্রেক্ষিতে শনিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ১২ জন অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরা হলেন, উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের হাতিয়া ভবেশ গ্রামের মৃত তাহের উদ্দিনের ছেলে মাও. আকবর আলী (৭৮), ডোবার পাড় (তৎকালীন রামখানা) গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে শাহাজাহান আলী (৬৮), ওই গ্রামের মৃত নজিম উদ্দিনের ছেলে সাইদুর রহমান ওরফে সৈয়দ মাওলানা (৬২), দূর্গাপার ইউনিয়নের গোড়াই গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে নুর ইসলাম (৫৮), ইরফান আলীর দুই ছেলে ইছাহাক আলী (৬৩) ও ইসমাইল হোসেন (৬৬), মৃত আমান উল্লার ছেলে ওসমান আলী (৬৮), মতিউল্লার ছেলে আব্দুর রহমান (৬৩), বছিয়ত উল্লার ছেলে সোলেমান আলী (৭২), আব্দুল জব্বারের ছেলে আব্দুর রহিম (৬৩), মৃত ফজল উদ্দিনের ছেলে আব্দুল কাদের (৬৫), ধরনীবাড়ি ইউনিয়নের দিগর মালতিবাড়ি গ্রামের মৃত সামসুদ্দিন সরকারের ছেলে মফিজুল হক (৮০)।

অন্যদিকে, একই মামলায় রাজারহাট উপজেলার উমর মজিদ ইউনিয়নের নলকাটা বালাকান্দি গ্রামের মৃত শরফ উদ্দিনের ছেলে মকবুল হোসেন দেওয়ানীকে (৭০) গ্রেপ্তার করে রাজারহাট থানা পুলিশ।

হাতিয়া ইউনিয়নের নীলকণ্ঠ গ্রামের গণহত্যার শিকার বক্তার আলীর চাচা হায়দার আরী জানান, আমরা কোনোদিন কল্পনা করতে পারি নাই বিচার পাবো। এখন আশান্বিত। অপরাধীদের কঠিন সাজা হওয়া উচিৎ। একই গ্রামের নুরু মিয়া জানান, এদের বিচার হলে, আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুড়িগ্রাম জেলা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আমিনুল ইসলাম বলেন, ৪৯ বছর পর এই গণহত্যার বিচার হচ্ছে। এতে আমরা খুশি। তবে আরো অনেকে এই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। তাদের নাম মামলায় এলে আরো খুশি হতাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই এলাকার চাঁদ কোম্পানির সেকেন্ড ইন কমান্ড রবিউস সামাদ বলেন, আমরা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছি।

পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান জানান, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি পরোয়ানামূলে উলিপুরে যুদ্ধাপরাধ মামলায় উলিপুর ও রাজারহাট উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কোর্টে পাঠানো হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App