×

মুক্তচিন্তা

সরকারের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে চাই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২০, ০৮:৩৩ পিএম

প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে পরের দিন শুক্রবার পর্যন্ত সড়কে দুর্ঘটনায় নারী-শিশুসহ ২৭ জন নিহত হয়েছেন। এমন কোনো দিন নেই যে, সংবাদমাধ্যমে কোনো সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর থাকে না। সড়কে এ রকম প্রাণহানি মর্মান্তিক, অনাকাক্সিক্ষত। দেশে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। নিরাপদ সড়কের দাবিতে সামাজিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সংগঠন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’র (নিসচা) তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিককালে প্রতি বছরই গড়ে ২ হাজারের ওপরে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। এসব দুর্ঘটনায় বছরে গড়ে ৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। সংখ্যা যাই হোক, সড়কে মৃত্যুর মিছিল যে থামানো যাচ্ছে না তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (এআরআই) গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের বেপরোয়া গতি। কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কে ছোট যানবাহন বন্ধ ও বেপরোয়া যানবাহন চলাচল বন্ধে সাফল্য নেই। এখনো দেশের সড়ক-মহাসড়কে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে ১০ লাখ নছিমন-করিমন-ইজিবাইক। অবাধে আমদানি হচ্ছে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক। দেশব্যাপী অন্তত ৫ লাখ ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, হিউম্যান হলার অবাধে চলছে। নিবন্ধনবিহীন কয়েক লাখ অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে সড়ক-মহাসড়কে। এসব যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান উৎস। দুর্ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির নজিরও তেমন নেই। যার ফলে চালকরা ইচ্ছামতো গাড়ি চালান। হাই রিস্ক নিয়ে ওভারটেক করেন। এছাড়া চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে, যা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। ফুটপাত দিয়ে মানুষ চলাচলের অবস্থা নেই। কাজেই মানুষ বাধ্য হয়ে মূল রাস্তায় হাঁটছে এবং দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। ইদানীং মোবাইল ফোন কানে রেখে গাড়ি চালানো যেন ফ্যাশন অনেক চালকের কাছে। যদিও এ কাজ থেকে বিরত রাখতে আইন আছে। কিন্তু সে আইনের ব্যবহার হয় না। এ কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনার জন্য যা-ই দায়ী হোক না কেন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে হবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতিসংঘ ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়কে ‘সড়ক নিরাপত্তা দশক’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ সময়ের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ও প্রাণহানি অর্ধেকে নামিয়ে আনার বিষয়ে সদস্য দেশগুলো একমতও হয়েছে। এটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাতে (এসডিজি) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বহু দেশে সড়ক নিরাপত্তায় দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। সড়ক নিরাপত্তায় যুক্ত বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সরকারের ইতোপূর্বে নেয়া পরিকল্পনাগুলো ছিল গতানুগতিক। এর মাধ্যমে কী অর্জিত হয়েছে আর কী অর্জিত হয়নি বা কী অর্জন করা প্রয়োজন তার সঠিক কোনো ব্যাখ্যা নেই। আমরা সড়ক নিরাপত্তায় সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। সড়কে মৃত্যুর মিছিল আর যেন দীর্ঘ না হয়। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নিতে হবে। দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিরাপদ চলাচলের বিষয়টি পরিবহন সংশ্লিষ্ট সবার উপলব্ধিতে আনতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App