×

জাতীয়

যেভাবে ইউনেস্কোর তালিকায় ৭ই মার্চের ভাষণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২০, ০১:১৮ এএম

যেভাবে ইউনেস্কোর তালিকায় ৭ই মার্চের ভাষণ

৭ই মার্চে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু। ছবি: ফাইল।

“আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়, তোমাদের ওপর আমার অনুরোধ রইলো, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।”

এটি স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের অগ্নিঝরা ভাষণের একটি অংশ। বঙ্গবন্ধুর সেদিনের ভাষণটি ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। যা এখন আন্তর্জাতিক সম্পদ। বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর কালজয়ী এই ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো।

এর আগে ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের বৈশ্বিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপর দীর্ঘ নয় বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পাওয়া যায়।

ইউনেস্কোর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সভা- সেমিনার ও কর্মশালায় এই ভাষণের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সুদূরপ্রসারী প্রভাব, মর্মার্থ ও তাৎপর্য তুলে ধরা হয়।

২০১১ সালে ইন্দোনেশিয়ায় আয়োজিত এক কর্মশালায় ভাষণটির ওপর একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের (বিএনসিইউ) তৎকালীন প্রোগ্রাম অফিসার ও শিক্ষাবিদ রোকেয়া খাতুন।

একটি জাদুকরী ভাষণ কীভাবে একটি দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে পারে ওই প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তা তুলে ধরা হয়। প্রেজেনটেশনটি ব্যাপক প্রশংসা পায়।

২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল প্যারিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলাম ইউনেস্কোতে ভাষণটির বৈশ্বিক স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেন। মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে আন্তর্জাতিক তাৎপর্য রয়েছে এমন বিষয়গুলোকেই তালিকাভুক্ত করা হয়। এই তালিকায় ঠাঁই পেতে হলে পর্যাপ্ত গ্রহণযোগ্যতা ও ঐতিহাসিক প্রভাব থাকতে হয়।

১৯৯২ সালে মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রাম চালু করে ইউনেস্কো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দালিলিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও ব্যবহারে সচেতনতার তাগিদে এটি চালু হয়। ৭ মার্চের ভাষণ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রেরণা। ভাষণটি পৃথিবীর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর মধ্যে অন্যতম ভাষণ হিসেবে বিশ্বের ইতিহাসে অনেক আগেই স্থান করে নিয়েছে।

প্যারিসের ইউনেস্কো সদর দপ্তরে সংস্থাটির তৎকালীন মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী তথ্যচিত্রের তালিকা ‘ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ অন্তর্ভুক্তের ঘোষণা দেন। এ সংক্রান্ত তালিকাভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি (আইএসি)। রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলামের আবেদনের পর ২০১৭ সালের ২৪ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত বৈঠক করে এই কমিটি। এই কমিটিতে ছিলেন ১৫ জন বিশেষজ্ঞ। তারা ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

অ্যাডভাইজরি কমিটি ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড (এমওডব্লিউ) কর্মসূচির অধীনে আন্তর্জাতিক তালিকায় (ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার) মোট ৭৮টি দলিলকে মনোনয়ন দিয়েছে। এ তালিকায় ৪৮ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটিকে স্থান পায়। এ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণসহ আন্তর্জাতিক দলিলে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে তালিকাভুক্ত ঐতিহ্যের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪২৭টি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App