×

সারাদেশ

মাদারীপুরে বিদ্যালয়ের সম্পদ হরিলুট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২০, ০৬:৪০ পিএম

মাদারীপুরে বিদ্যালয়ের সম্পদ হরিলুট

মাদারীপুরে চরমুগরিয়া ২নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

মাদারীপুর সদর উপজেলার পৌরসভাধীন ১১১নং চরমুগরিয়া-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে অনিয়মের মহোৎসব। খোদ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা এসব অনিয়মের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় এনে বিচারের দাবি স্থানীয় অভিভাববক ও সচেতনমহলের। অনুসন্ধানে জানা যায়, বিদ্যালয়টির গত বছরের মে মাসের মাসিক বিবরনীতে উঁচুবেঞ্চ ছিল ১১৫টি, নিচুবেঞ্চ ১২৩টি, চেয়ার ১৮টি, টেবিল ৮টি, আলমারি ৩টি এবং ফ্যান ছিল ২৫টি। অথচ চলতি বছরের জানুয়ারির মাসিক বিবরনীতে উঁচুবেঞ্চের পরিমাণ দাড়িয়েছে ৭৬টি, নিচুবেঞ্চ ৬৬টি, টেবিল ৭টি এবং ফ্যান মাত্র ১০টি। মাত্র আট মাসের ব্যবধানে বিদ্যালয়ের ব্যাপক সম্পদ লুটের অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অলকা রায় ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে। বিষয়টি এরই মধ্যে অভিভাবক ও সচেতন মহলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারহানা আক্তার বিএড প্রশিক্ষণে থাকাকালিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি আইয়ুব খান নানা অনিয়ম করে। পরে এবছরের ১৩ জানুয়ারি ফারহানা আক্তার প্রশিক্ষণ শেষে বিদ্যালয়ে যোগদান করলেও তাকে অজ্ঞাত কারণে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করলেও প্রভাবশালী একটি মহলের ইশারায় প্রধান শিক্ষক ফারহানা আক্তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে না। সরকারি সম্পদ লুটের ঘটনা প্রকাশ করায় প্রধান শিক্ষক ফারহানা আক্তার রয়েছেন বদলি আতঙ্কে। এছাড়াও গত বছরের ০৬ নভেম্বর সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে যে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হতে হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে স্নাতক পাস। এই বিদ্যালয়টির তিন বছর মেয়াদী ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। সে অনুযায়ী উপজেলা শিক্ষা অফিসার গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী তফসীল ঘোষণাও করেছেন। কিন্তু সম্প্রতি জানাজানি হয় গত বছরের অক্টোবরে মেয়াদ থাকার পরেও অগ্রীম ম্যানেজিং কমিটি করা হয়েছে। সেখানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর রয়েছে।  অথচ ওই কমিটির সভাপতি আইয়ুব খান স্নাতক ডিগ্রীধারী নয় বলে জানা গেছে। একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করে জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অলকা রায় ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আইয়ুব খানের সম্পত্তি আত্মসাতের বিষয়টি আড়াল করতেই প্রধান শিক্ষক ফারহানা আক্তার যোগদানের পরেও দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে না। এই ঘটনার সাথে খোদ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রাশেদা খাতুন ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মোকলেছুর রহমান জড়িত। তারা বিষয়টি জেনেও চুপ রয়েছে। এবিষয় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজরদারী দাবি অভিভাবকদের। অভিযোগের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অলকা রায় জানান, ‘উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নিষেধ করায় প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেইনি। কিছু মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের বিষয় মোবাইল ফোনে কথা বলতে রাজি নই।’ আর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আইয়ুব খান সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন। এসব অভিযোগের বিষয় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে তিনি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রাশেদা খাতুনের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। এব্যাপারে রাশেদা খাতুন জানান, প্রধান শিক্ষক ফারহানা আক্তারকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে বলা হয়েছে। আর বিদ্যালয়ের মালামাল লোপাটের বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে হবে। বিষয়টি এখনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। এ বাপারে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো: ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। যাই হোক প্রধান শিক্ষককে কোন রাজনৈতিক চাপে দায়িত্ব না দেওয়াটা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি আরো বলেন, আগামীকাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে আমি বসবো, তার সাথে বিষয়টি নিয়ে আমি কথা বলবো।”

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App