×
Icon ব্রেকিং
ইরানের ভূখণ্ডে মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, ইরানের বিভন্ন শহরে বিমান চলাচল বন্ধ

জাতীয়

কোনো মেজরের বাঁশির ফুঁতে দেশ স্বাধীন হয়নি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২০, ০৯:১২ পিএম

কোনো মেজরের বাঁশির ফুঁতে দেশ স্বাধীন হয়নি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সকলকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হবে। দেশে একটি গেরিলা যুদ্ধে হবে। কোন মেজরের বাঁশিতে দেশ স্বাধীন হয়নি। শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রচার সম্পাক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আব্দুল মান্নান, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ড. হাছান মাহমুদ, কেন্দ্রীয় সদস্য পারভীন জামান কল্পনা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহম্মেদ মন্নাফী, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচিসহ অন্যরা। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন শিমুল মোস্তফা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর জিয়া-এরশাদ-খালেদা সবাই ৭ মার্চের ভাষণ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করেছিলেন। ইতিহাস বিকৃতি করে যাকে স্বাধীনতার ঘোষক যাকে সাজানো হয়েছে, সে সরকারের চারশ টাকা বেতনের কর্মচারী ছিল। যেন কোনো এক মেজর বাঁশিতে ফুঁ দিল আর অমনি যুদ্ধ হয়ে গেলো, দেশ স্বাধীন হয়ে গেলো। তিনি বলেন, আমার ভাবলে দুঃখ হয় যে ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের দেশে নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। আমি জানি না যারা এই ভাষণ মুছে ফেলতে চেয়েছিল তারা এখন লজ্জা পায় কিনা। অবশ্য তাদের লাজলজ্জা আছে বলে মনে হয় না। তারা যে ভাষণ নিষিদ্ধ করলো, আর ইউনেস্কো সেটাকে সেরা ভাষণ হিসেবে গ্রহণ করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার (শেখ মুজিব) ভবিষ্যৎবাণী করার অদ্ভুত শক্তি ছিল। জাতির পিতার ভবিষ্যৎ বাণী বলার একটা অদ্ভুদ শক্তি ছিল উল্লেখ করে তাঁর কন্যা বলেন, বঙ্গবন্ধু বলতেন যে, আমরা নির্বাচনে জয়লাভ করব। ওরা আমাদের ক্ষমতা দেবে না। আমাদের যুদ্ধ করতে হবে। আমরা বিজয় অর্জন করব। দেশ স্বাধীন হবে। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি সব ধরনের নির্দেশনা দিয়েছেন। বক্তৃতা শেষে তিনি একথাও বলেছিলেন তার ওপর আস্থা আছে কিনা। জনগণও জানিয়েছিল আস্থা আছে। মানুষ তাদের কথা রেখেছিল। তিনি যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন জনগণ তা আক্ষরিকভাবে পালন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ভাষণে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সকলকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হবে। দেশে একটি গেরিলা যুদ্ধে হবে। সেখানে কার কী দায়িত্ব সেকথাও তিনি বলে দিয়েছিলেন। তখন ৩২ নম্বর থেকে যে নির্দেশ আসতো সে অনুযায়ী দেশ চলতো। এমনকি ইয়াহিয়া খান যখন ঢাকায় আসেন তখন বাঙালি বাবুর্চিরা কাজ করবে না বলে জানিয়ে দিলো। তখন ৩২ নম্বরে ফোন আসে আপনারা যখন পর্যন্ত না বলবেন ততক্ষণ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট খাবার পাচ্ছেন না। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মুজিববর্ষ উদযাপনে অনেক কর্মসূচির চিন্তা করছি। জাতির পিতা বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ যেন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান পায়। তিনি সংবিধানে মৌলিক চাহিদার কথা উল্লেখ করে গেছেন। তার স্বপ্ন ছিল একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। এ জন্য তিনি গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। মুজিববর্ষের মধ্যে দেশের একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না।

আওয়ামী লীগের নেতাদের নিজের এলাকায় খোঁজ নেয়ার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যাদের ঘর নেই তাদের আমরা ঘর করে দেবো। আমরা চাই একটি মানুষও যেন গৃহহারা না থাকে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ আমার এই কথাটা দেশের প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। আপনারা চেষ্টা করেন ঘর করে দিতে। না পারলে আমরা টাকা দেবো ঘর করার জন্য। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, একটা দেশকে স্বাধীন করা ও একটি জাতি সৃষ্টি করা, পৃথিবীর খুব কম রাজনৈতিক নেতাই তা করতে পেরেছেন। ৭ মার্চের ভাষণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভাষণ দেয়ার আগে অনেকেই অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু, জাতির পিতা জানতেন কিভাবে কোন পদক্ষেপ নিতে হবে। ভাষণ দিতে যাওয়ার আগে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন আমার মা। যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে আমার মা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। আমার মা বলেছিলেন, ‘তুমি সারাজীবন মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছো। তোমার মনে যে কথা আসবে তুমি সেকথাই বলবে। ভাষণটা দেখলে বুঝবেন তিনি কিন্তু তার মনের কথাই বলেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ সারাবিশ্বের একমাত্র ভাষণ, যা হিসাব করে পাওয়া যাবে না কতজন কত ঘণ্টা এই ভাষণ শুনেছেন। সারা পৃথিবীতে একটি ভাষণ এভাবে দীর্ঘদিন ধরে আবেদন রাখতে পারাটা নজিরবিহীন। তিনি বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার জন্য আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। সারাবিশ্বের স্বীকৃতি পেয়েছি। সারাজীবন তিনি সংগ্রাম করেছেন। পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হওয়ার পরই আমাদের মাতৃভাষার ওপর আঘাত এলো। তারা আমাদের ওপর উর্দু চাপিয়ে দিলো। তখনই বঙ্গবন্ধু সিদ্ধান্ত নিলেন স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

ঐতিহাসিক সেই ভাষণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ মার্চের ভাষণের পটভূমি হয়তো অনেকে জানেন। ওই সময় অনেকে অনেক পরামর্শ দিয়েছিলেন। অনেক জ্ঞানী-গুণীজন লিখিত আকারে ভাষণ তৈরি করে দিয়েছিলেন। আমাদের ছাত্রনেতারা, তাদের অনেকেই পরে আর আমাদের সঙ্গে থাকেনি, তারা বলেছিলেন এখনই স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে হবে, নইলে জাতি হতাশ হবে। কিন্তু জাতির পিতা জানতেন, কখন কোন পদক্ষেপটি নিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App