×

মুক্তচিন্তা

কতটা পেরেছি নারীর অধিকার দিতে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২০, ০৮:১২ পিএম

প্রতি বছরের মতো এ বছরও আন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়ে কর্মসূচি চলছে। নারী দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘প্রজন্ম হোক সমতার : সকল নারীর অধিকার’। এছাড়া সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি ধর্ষণসহ সকল প্রকার সহিংসতা বন্ধ কর’। নারীর অধিকার তো কতটা দিতে পারছি তা নিযে প্রশ্ন রয়েছে। শুধু পুলিশ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০১৯ সালে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৪০০টি। এ তথ্য অনুযায়ী প্রতি ১ লাখ নারীর মধ্যে প্রায় ৪ জন নারী-শিশুকেই ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে, যা স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। এরপরও হার না মানা অদম্য শক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। নিজের সর্বশক্তি আর সাহস দিয়ে অর্জন করছে সফলতা। সব জায়গায় পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকছে এবং বিজয়ও ছিনিয়ে আনছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লিঙ্গ সমতা দূর করার দিক থেকে বাংলাদেশ এশিয়ায় দ্বিতীয়। বর্তমানে কৃষি, সেবা ও শিল্প খাতে কাজ করছেন ২ কোটি নারী। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ষষ্ঠ। সংসদেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরা। দ্য গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট অনুযায়ী, নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে ১৪৪টি রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭তম। বর্তমানে বিচারপতি, সচিব, ডেপুটি, রাষ্ট্রদূত, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মানবাধিকার কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সমীক্ষা অনুযায়ী কর্মজীবী পুরুষের তুলনায় কর্মজীবী নারী কাজ করেন তিনগুণ। দেশের অভ্যন্তরে অর্থনীতির মূল কর্মক্ষেত্রগুলোতে নারীর অবদান ক্রমাগত বাড়ছে। সমীক্ষা অনুসারে, মূলধারার অর্থনীতি হিসেবে স্বীকৃত উৎপাদন খাতের মোট কর্মীর প্রায় অর্ধেকই এখন নারী। বিবিএসের তথ্য মতে, গত ১০ বছর কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে ১০৮ শতাংশ। আর পুরুষের অংশগ্রহণ কমেছে ২ শতাংশ। চিংড়ি, চামড়া, হস্তশিল্পজাত দ্রব্য, চা ও তামাক শিল্পসহ অন্যান্য পণ্যের মোট রপ্তানি আয়ের ৭৫ শতাংশ অর্জনের মূল চালিকাশক্তিই নারী। পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৪০ লাখ কর্মীর মধ্যে ৮০ শতাংশই নারী। বাংলাদেশের পুরুষের পাশাপাশি বৈশ্বিক শ্রমবাজারে নারীরাও কাজ করছেন। এছাড়া নারীদের কাজের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতেও সহায়ক উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মাতৃত্বকালীন ছুটি তিন মাস থেকে দুই ধাপে ছয় মাস করা, সন্তানের পরিচয়ে বাবার সঙ্গে মায়ের নাম যুক্ত করা, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে ছেলের পাশাপাশি একজন নারী উদ্যোক্তা নিশ্চিত করা, মেয়েদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে ‘তথ্য আপা’ প্রকল্প চালু, নগরভিত্তিক প্রান্তিক মহিলা উন্নয়ন প্রকল্প, নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্প, অতি দরিদ্র ১০ লাখ মহিলার দক্ষতা উন্নয়ন ও কারিগরি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেয়া, নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য ও সেবা দেশে বিক্রির জন্য নারীবান্ধব বিপণন নেটওয়ার্ক ‘জয়িতা’ গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া তৃণমূলের নারীদের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশব্যাপী ১২ হাজার ৯৫৬টি পল্লী মাতৃস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, মা ও শিশুর যত্নসহ যাবতীয় বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণ ও সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ দেয়া হচ্ছে। নারীদের এগিয়ে যেতে হবেই। সরকারের পাশাপাশি নারীদের সহযোগিতা করতে হবে পুরুষদেরও। আমরা যদি নারীদের প্রতিপক্ষ না ভেবে মানুষ ভাবি তবেই একসঙ্গে কাজ করতে পারব। খুলশী-১, চট্টগ্রাম ৪২০২। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App