×

মুক্তচিন্তা

মুঠোফোন শিল্পে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২০, ০৭:২৯ পিএম

তাইওয়ান, যা পূর্বে জলদস্যুদের স্বর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। চীন সমুদ্র দিয়ে যারা বাণিজ্য করত, তাদের জন্য রীতিমতো আতঙ্কের বিষয় ছিল তাইওয়ান। বর্তমানে সেই চেহারা পাল্টে গেছে তাইওয়ানের। এখন প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বের অন্যতম প্রধান দেশ তাইওয়ান। গত ৩০ বছরে তাইওয়ানে ঘটে গেছে শিল্পবিপ্লব। এটিই সারা বিশ্বের কাছে ‘তাইওয়ান মিরাকল’ নামে পরিচিত। তাইওয়ানে এখন তৈরি হয় বিশ্ববিখ্যাত সব কোম্পানির হার্ডওয়্যার। যেমন- ASUS, ACER, HTC  ইত্যাদি। কিন্তু তাইওয়ানের খ্যাতির মূলে আছে তাইওয়ানের সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানির নাম TSMC বা Taiwan Semiconductor Manufacturing Company, যা কিনা তাইওয়ানে অবস্থিত। এবং কোম্পানিটি পুরো তাইওয়ানের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পকে পরিচালনা করছে। তাইওয়ান যেভাবে শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিতে উঠে এসেছে তেমন বাংলাদেশের জন্যও এখন হতে পারে সুবর্ণ সুযোগ। চীনের অর্থনীতি অচল হওয়ায় সুযোগ এসেছে অন্যান্য দেশের জন্য। বাংলাদেশ এখন পারে মোবাইল বাজারে সফলতা অর্জন করতে। বাংলাদেশে এখন মোট ৯টি কারখানা আছে, যেখানে মুঠোফোন তৈরি বা সংযোজন করা হয়। সর্বপ্রথম বাংলাদেশে ২০১৮ সালে মোবাইল তৈরি শুরু করে ওয়াল্টন। এরপর একে একে সিম্ফনি, টেকনো, অপো, ভিভো ইত্যাদি কোম্পানি মোবাইল সংযোজন শুরু করে। বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রীত মোবাইল কোম্পানি স্যামসাংয়ের মোবাইলও এখন সংযোজন করে বাংলাদেশের ফেয়ার ইলেকট্রনিকস লিমিটেড। ইতোমধ্যে স্যামসাংয়ের লেটেস্ট ফ্ল্যাগশিপ মোবাইল ‘গ্যালাক্সি এস ২০’-এর সংযোজনও বাংলাদেশে হয়েছে। জানা গেছে, কয়েক মাসের মধ্যে স্যামসাংয়ের মাদারবোর্ড বাংলাদেশে তৈরি করা হবে। টেকনো এর কারখানায় এখন তৈরি হচ্ছে মাদারবোর্ড। এছাড়া সিম্ফনির কারখানায় মুঠোফোনের যন্ত্রাংশ, চার্জার, হেডফোন তৈরি হচ্ছে। মুঠোফোনের বাজারে কোনো আনুষ্ঠানিক সমীক্ষা নেই। তবে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হিসাবে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে মোট ৩ কোটি ২৮ লাখ মুঠোফোন বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে তৈরি বা সংযোজিত প্রায় ১ কোটি ৪২ লাখ ডিভাইস, যার শতকরায় হিসাব ৪৩ শতাংশ। বাংলাদেশের শুল্কব্যবস্থা এখন মুঠোফোন রপ্তানিকারকদের জন্য অনুক‚ল, কিন্তু আমদানিকারকদের জন্য প্রতিক‚ল। মুঠোফোন তৈরি ও সংযোজন হতে পারে বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা। বাংলাদেশে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেটে মুঠোফোনের ৪৪টি যন্ত্রাংশ আমদানির ওপর শুল্ক কমিয়ে ১ শতাংশে নিয়ে আসা হয়েছে, যা আগে ছিল ৫ থেকে ২৫ শতাংশ। তৈরি মুঠোফোন আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করে ২৫ শতাংশে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে তৈরি স্মার্টফোন এখন বিদেশেও রপ্তানি হবে। ওয়ালটনে তৈরি একটি ব্যাচ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হচ্ছে। ওয়ালটন দাবি করছে, ‘অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার’ হিসেবে তারা স্মার্টফোন রপ্তানি করছে। ফলে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ খচিত স্মার্টফোনগুলো এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিক্রি হবে। টেকনো ব্র্যান্ডের মুঠোফোন বাজারজাতকারী ট্রানশান বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘চীনের খরচ বাড়ছে। সেখানে একজন শ্রমিকের মজুরি ৩০ হাজার টাকা, যেখানে বাংলাদেশে ৮ হাজার টাকা। তাই ভারত ও ভিয়েতনামের পাশাপাশি বাংলাদেশও মুঠোফোন তৈরির কেন্দ্র হতে পারে।’বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত যেমন ধীরে ধীরে কমে আসছে তেমনি আশার আলো দেখাচ্ছে মুঠোফোন ইন্ডাস্ট্রি। বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতিকে ধরে রাখার জন্য প্রযুক্তিগত শিল্পে এগিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তাইওয়ান যদি মাত্র ৩০ বছরে শূন্য থেকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান হার্ডওয়্যার প্রস্তুতকারী হতে পারে, তবে বাংলাদেশের জন্যও এটি অসম্ভব কিছু হবে না। শিক্ষার্থীদ্বয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App