×

সাময়িকী

বাঙালি সত্তার শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি বঙ্গবন্ধু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২০, ০৮:৩৫ পিএম

বাঙালি সত্তার শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি বঙ্গবন্ধু

বঞ্চিত বাঙালির মুখে হাসি ফোটানোই বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লক্ষ্য ছিল। শ্যামল বাংলাদেশে টুঙ্গিপাড়ার যে সন্তান জন্ম নিয়েছিলেন, তিনি তার শৈশব-কৈশোরে বাংলার কৃষক, শ্রমিক, গৃহবধূ, ছাত্র-শিক্ষকের যে বঞ্চনা, না পাওয়ার বেদনা, যে অধিকারহীনতার সংস্কৃতি, বিকশিত হওয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক, রাষ্ট্রীয় যে সব অন্তরায় দেখতে পেয়েছিলেন সেটি তাঁর হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করেছিল। পরবর্তীতে তিনি যখন কলকাতায় কলেজ জীবনে লেখাপড়া করতে যান, সেখানে গিয়ে তিনি দুইবাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে, সামাজিক সংকট এবং সম্ভাবনার সঙ্গেও পরিচিত হয়েছিলেন। পাশাপাশি তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের অনেক বিশিষ্ট রাজনীতিবিদদের সঙ্গেও কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু ছাত্রজীবন থেকেই অনেক দৃঢ়চেতা, মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন, স্বপ্নচারী ছাত্র রাজনীতিক হিসেবে মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিবেদন করেছিলেন। তিনি হাজারো বাঙালির সাথে একইভাবে ভেবেছিলেন যে, ব্রিটিশদের কাছ থেকে মুক্তি পেলে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি মিলবে। কিন্তু ’৪৭-এ ধর্মের কথা বলে যে দুটি পৃথক রাষ্ট্র তৈরি হলো, সেখানে তৎকালীন পাকিস্তানের পূর্বাংশের মানুষ যেভাবে বঞ্চিত হয়েছে ঠিক একইভাবে না বলে বরং নতুনভাবে, নতুন প্রশাসনিক অবয়বে এবং সাদা চামড়ার পরিবর্তে ধূসর চামড়ার ব্যক্তিদের দ্বারা শাসিত হওয়ার কারণে তৎকালীন পূর্ববাংলার মানুষ বঞ্চনার নতুন মাত্রায় আবার আবদ্ধ হলো। নতুন শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে তাদের যে সম্ভাবনা ছিল সেই সম্ভাবনা কোনোভাবেই কাজে লাগানো যাচ্ছিল না বলে বঙ্গবন্ধু প্রত্যক্ষ করেছিলেন।

বাংলার প্রকৃতি, বাংলার আবহাওয়া, বাংলার মাটির উর্বরতা শত শত বছর যাবৎ বিশ্বে যৌক্তিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশ বারবার শাসিত হয়েছে বিজাতীয়দের দ্বারা। খোদ বাঙালি কখনো নিজের ভাগ্য গড়ে তোলার সুযোগ পায়নি। বঙ্গবন্ধু দেখেছেন, পাকিস্তানি শাসকরা শুধু অর্থনৈতিকভাবেই নয়, সামাজিকভাবে, সাংস্কৃতিকভাবে, আমাদের ঐতিহ্যকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে।

ধর্মের নাম করে বাংলাকে দুই অংশে ভাগ করার পরে বঙ্গবন্ধু খুব কাছ থেকে দেখেছেন, যে প্রত্যাশা নিয়ে বাংলার মানুষ সে সময় ব্রিটিশ ভারতের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন তার প্রায় কিছুই পূর্ণ হয়নি। অনেকেই বাংলাদেশের মানুষকে সংগঠিত করে তাদের রাজনীতিক, অর্থনীতিক, সামাজিক মুক্তির জন্য কাজ করেছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ব্যতিক্রমীভাবে একজন সফল রাজনীতিক ছিলেন। এর কারণ, তিনি যেমন খুব কাছ থেকে সাধারণ মানুষদের দেখেছেন তেমনি রাজনৈতিক নেতাদের সীমাবদ্ধতাকেও দেখেছেন। রাজনৈতিক নেতারা মানুষের মন জয় করার, মানুষের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে, মানুষের মনের ভাষা বুঝতে না পারার ব্যর্থতা- সবকিছুই বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। যে কারণে তিনি শিখেছিলেন অন্য নেতাদের সীমাবদ্ধতা থেকে। তিনি খুব সহজে জয় বাংলা শব্দটি উচ্চারণের মাধ্যমে গোটা বাংলাদেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, চিকিৎসক থেকে শুরু করে আবালবৃদ্ধবনিতা- এক কথায় দেশের সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এক কাতারে শামিল করার যে সম্মোহনী শক্তি সেটি বঙ্গবন্ধু অর্জন করেছিলেন।

তিনি কাউকে আলাদাভাবে বলেননি। বলেছিলেন, আমি বাংলার মানুষকে মুক্ত করতে চাই। বঞ্চিত বাঙালির মুখে হাসি ফোটাতে চাই। তার এ বক্তব্যে অর্থনৈতিক মুক্তির কথাও ছিল, ছাত্র-শিক্ষকের কথাও ছিল, এমনকি নারীর সামাজিক সংকটের চিত্রও ছিল। কাজেই সব কিছুকে ধারণ করার মতো একটি স্বাভাবিক ও সাধারণ শব্দের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে যাওয়ার যে বিশাল ক্ষমতা এটি বঙ্গবন্ধুর ছিল। এর মূল কারণ ছিল, প্রকৃতই মনের গভীর থেকে তিনি সেই কথাটি বিশ^াস করতেন এবং এ ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন বাংলার প্রকৃতি থেকেই। তিনি প্রকৃতির পাঠশালা থেকেই শিখতে পেরেছিলেন- বাংলাদেশের মানুষকে কি করে সংগঠিত করতে হবে, নিরস্ত্র বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বশস্ত্র পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে অধিকতর শক্তিশালী করে গড়ে তুলে বিজয় লাভ করার সমস্ত রণকৌশল বঙ্গবন্ধুর জানা ছিল।

আজকে ২০২০ সালে মুজিববর্ষে এসে বঙ্গবন্ধুর জীবন, তাঁর কর্ম, তাঁর ছাত্রজীবন, জেলজীবন, পারিবারিক-সামাজিক জীবন- তাঁর জীবনের সব অনুষঙ্গকে আলাদা আলাদাভাবে বিবেচনা করি, তাহলে দেখা যাবে, বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনার মূল বিষয় ছিল বঞ্চিত বাঙালির মুখে হাসি ফোটানো। এ বঞ্চনা শুধু অর্থনৈতিক বঞ্চনা নয়, এটি সংস্কৃতির বঞ্চনা, এটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার সীমাবদ্ধতার বঞ্চনা। উদার বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিকশিত হওয়ার যে সম্ভাবনা ছিল যা বারবার শাসকগোষ্ঠী দমন করেছে। সে সম্ভাবনাকে তুলে ধরার জন্য বঙ্গবন্ধু সমস্ত শক্তি, সমস্ত জ্ঞান, সমস্ত সুকুমার চেতনাকে তিনি নিবেদন করেছেন।

বঙ্গবন্ধু সবসময় বাংলার কৃষকদের কথা ভেবেছেন। কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্যসহ, কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়গুলো ভেবেছেন। তাঁর ভাবনায় ছিল- কী করে আমরা আমাদের উৎপাদিত পণ্য বেশি দামে বাজারজাত করতে পারি, বিদেশে রপ্তানি করতে পারি। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অনেক অবদান ছিল। তিনিই প্রথম গ্রামপর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবাকে প্রসারিত করেছেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। চিকিৎসকদের যেমন তৃতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দিয়েছেন, তেমনি শিক্ষকদের জাতীয়করণের মাধ্যমে চাকরির নিশ্চয়তা দিয়েছেন। দেশের সর্বস্তরের শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকাকালীন অবস্থাতেই স্বাধীন দেশের উপযোগী একটি শিক্ষানীতি তৈরি করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেছিলেন। সেটি সাধারণভাবে হয়তো বিচ্ছিন্ন উদাহরণ বলে মনে হবে। কিন্তু এটির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সমাজতান্ত্রিক চেতনা ছিল।

বঙ্গবন্ধু কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ তৈরি করেছিলেন বাংলাদেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে বাঙালির ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। আপামর জনসাধারণের শক্তিমত্তাকে কীভাবে বেশি করে দেশের কাজে লাগানো যায় সেটি ছিল এ মহৎ কর্মের পেছনের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা দেখলাম, যারা দেশের স্বাধীনতা মানতে পারেনি, যারা গরিব বাঙালির ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বঙ্গবন্ধুর এ মহৎ কর্মকে পছন্দ করেনি, সে সব দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App