×

সাময়িকী

এক সাংবাদিকের প্রেমকাহিনী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২০, ০৭:৪০ পিএম

এক সাংবাদিকের প্রেমকাহিনী
সব শিশুরই ছোটবেলা থেকে একটা আশা বা আকাক্সক্ষা থাকে, বড় হলে একটা কিছু হবার। সাধারণত পারিপার্শ্বিক অভিজ্ঞতার আলোকে শিশু তার ভবিষ্যৎ জীবন কল্পনা করে থাকে। এই আকাক্সক্ষা তার যোগ্যতা বা সামর্থ্যরে ওপর নির্ভর করে রচিত হয় না। পুলিশ বা শিক্ষকের ক্ষমতা দেখে সে যেমন ভবিষ্যতে পুলিশ বা শিক্ষক হতে চায়, তেমনি ডাক্তার, প্রকৌশলী, পাইলট, কবি, সাহিত্যিক, মন্ত্রী, ব্যারিস্টার ইত্যাদিও হতে চায়। কিন্তু কেউ সাংবাদিক হতে চায় একথা রাজীব কারো কাছে শোনেনি। অথচ সে তাই হতে চেয়েছে। সাংবাদিকারা কি কাজ করে তা সে শোনেনি। কেমন করে সাংবাদিক হতে হয় তাও সে জানে না। রাজীবের ভাইয়ার বন্ধু সলিমুল্লাহ একজন সাংবাদিক। ঢাকার কোনো এক সংবাদপত্রে চাকরি করেন। মাঝে মাঝে দেশে আসলে তিনি রাজীবদের বাসায় আসেন। দেশ-বিদেশের অনেক গল্প করেন। নানান দেশের নানান ধরনের গল্প। পৃথিবীর নিত্যনতুন আবিষ্কার আর ঘটনার কাহিনী। রাজীবের পারিপার্শ্বিক অভিজ্ঞতার মধ্যে তার কোনো চিহ্ন নেই। রাজীবের মনে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে এক নতুন ধারণা গড়ে ওঠে। সে সাংবাদিক হতে চায়। সাংবাদিক হলে অনেক বিষয় জানতে পারবে। তার কৌত‚হলী মন সাংবাদিক হবার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে। রাজীবদের বাড়িতে কোনো সংবাদপত্র রাখা হয় না। সামনের চায়ের দোকানে একটি পত্রিকা রাখা হয়। সেখানে গিয়ে সে নিয়মিত পত্রিকা পড়ে। নিত্যনতুন খবরে তার অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার পূর্ণ হতে থাকে। একদিন শিক্ষক ছাত্রদের জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা ভবিষ্যতে কে কি হতে চাও। কেউ বলে, আমি ডাক্তার হবো, কেউ বলে ইঞ্জিনিয়ার, কেউ বলে জজ, কেউ বলে শিক্ষক, এমনি কত কি। কিন্তু কেউ সাংবাদিক হবে বলে না। রাজীব বলে, আমি বড় হলে সাংবাদিক হবো। শিক্ষক বলেন, রাজীব তোমার জীবনের উদ্দেশ্য এত ছোট কেন? একজন সাংবাদিক তো একজন পিয়নের সমানও বেতন পায় না। সাংবাদিকতার চাকরি করলে সংসার চালাবে কেমন করে? রাজীব এতো কথা ভেবে দেখেনি। তার জীবনে জানার আকাক্সক্ষা প্রবল। তাই সে সাংবাদিক হতে চায়। অন্য কোনো পেশায়ও যে জ্ঞানের পিপাসা মেটানো যায় তা তার চিন্তায় আসেনি। রাজীবের মনটা দমে গেল। লেখাপড়ায় খুব ভালো না হলেও একেবারে খারাপ ছাত্র ছিল না সে। পরীক্ষায় অঙ্কে কেবল খারাপ নম্বর পেত। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেছে। ঢাকা কলেজ থেকে আইএ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছে। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এতো প্রতিযোগিতা ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর তার মাথায় ভ‚ত চাপে। সে কবিতা লিখতে শুরু করে। কবিতা লিখে সে পত্রিকা অফিসে পাঠায়। কিন্তু ছাপা হয় না। তবু সে হতাশ হয় না। লিখতেই থাকে। কবি তাকে হতেই হবে। একদিন বাসের অপেক্ষায় রাজীব বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। এমন সময় তাদের ক্লাসের একটি মেয়ে, রিকশা থেকে নেমে তার ভ্যানিটি ব্যাগ হাতড়াতে থাকে। কিছু একটা খুঁজছে, পায় না। রিকশাওয়ালা তাড়া দিয়ে বলে, ম্যাডাম ভাড়াটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দেন। আমার বদলির সময় হয়েছে। তখন অনেক রিকশাওয়ালা এক বেলা করে রিকশা চালাতো। মেয়েটি অসহায় দৃষ্টিতে এদিক-ওদিক তাকায়। রাজীব এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করে, কিছু হারিয়েছে? মেয়েটি বলে, ব্যাগের ভিতর আমার পার্টস ছিল। খুঁজে পাচ্ছি না। রিকশাওয়ালার ভাড়া দিতে পারছি না। রাজীব রিকশাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে দিলে মেয়েটি তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে বললো, আমি কালকেই আপনার টাকাটা ফেরত দেব। রাজীব বললো, আমি জানি, আপনি আমার টাকা নিয়ে পালাবেন না। কৃতজ্ঞতার হাসি হেসে মেয়েটি বিদায় নিল। মেয়েটি রাজীবের সঙ্গে পড়ে। এতদিন তাদের মধ্যে কোনো আলাপ ছিল না। আজ প্রথম পরিচয় হলো। এরপর থেকে মাঝে মধ্যে দেখা হলে কুশল বিনিময় হয়। মেয়েটির নাম আবিদা নাফিস। গত কয়েকদিন ধরে দেশে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চলছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে সারা দেশ সোচ্চার। আজ সেটা তীব্র আকার ধারণ করেছে। ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এগুতেই পুলিশের সাথে ছাত্রদের সংঘর্ষ শুরু হয়। একটি পুলিশ ভ্যান ছাত্র-জনতার মিছিলের ওপর চালিয়ে দেয়া হয়। ফলে সেলিম এবং দেলোয়ার নামে দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাথে সাথে মৃত্যুবরণ করে। আহত হয় আরো অনেক। পুলিশের লাঠির আঘাতে রাজীবের বাম হাত ভেঙে যায়। তাকে ভর্তি করানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। খবর পেয়ে ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা রাজীবকে দেখতে আসে। আবিদাও তাদের মধ্যে ছিল। অসময়ে হাসপাতালে রোগী দেখতে আসায় কর্তব্যরত নার্স দর্শনার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। অন্যান্য ছাত্রছাত্রী তাদের অপরাধ মেনে নিলেও আবিদা তার তীব্র প্রতিবাদ করে। আবিদার প্রতিবাদের ভঙ্গি দেখে রাজীবের শকুন্তলার কথা মনে পড়ে যায়। তার চোখে ভেসে ওঠে রাজা দুষ্মন্তের দরবারে রাজার সাথে শকুন্তলার তীব্র বাক্য বিনিময় এবং রাজাকে ভর্ৎসনার দৃশ্য। কী উদ্ধত তার ভঙ্গি, কী স্পষ্ট তার কণ্ঠস্বর। বাক্যবাণে শকুন্তলা রাজাকে জর্জরিত করছে। রাজীব মুগ্ধ এবং অপলক চোখে আবিদাকে দেখতে থাকে। আবিদা চলে যাবার পরও রাজীব তার রুদ্রমূর্তি ভুলতে পারে না। এই শান্ত মেয়েটির মধ্যে এতো আগুন! আবিদা কবিতা লেখে। তার কবিতা ঢাকার বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি হিসেবে তার একটা পরিচিতি আছে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সে স্বরচিত কবিতা পাঠ করে। একদিন কথা প্রসঙ্গে আবিদা রাজীবকে জিজ্ঞাসা করে, আপনি গল্প কবিতা লেখেন না? রাজীব বলে, এক সময় লিখতাম। এখন আর লিখি না। লেখা ছেড়ে দিয়েছি। আবিদা বলে, কেন লেখা ছেড়ে দিলেন? রাজীব বলে, লিখে কী লাভ! কেউ ছাপাতে চায় না। ঢাকার প্রায় সব পত্রিকায় গল্প কবিতা পাঠিয়েছি। কেউ ছাপেনি। আবিদা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, আগামী কাল আমার জন্য আপনার দুটো কবিতা আর একটা গল্প নিয়ে আসবেন। দেখি কি করা যায়। দিন কয়েক পর পত্রিকায় রাজীবের দুটি কবিতা আর একটি গল্প ছাপা হয়। পত্রিকায় ছাপার অক্ষরে কোনো গল্প কবিতা এই প্রথম দেখতে পেয়ে রাজীব আনন্দে আত্মহারা। সে আবিদাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানালো। আদিবা বলে, ধন্যবাদ জানাবার কিছু নেই। এখানে আমার কোনো কৃতিত্ব নেই। আপনার লেখা ভালো হয়েছে, তাই ওরা ছেপেছে। রাজীব বলে, এতদিন ছাপালো না কেন? আবিদা বলে, অপরিচিত লেখকের লেখা সব পত্রিকা ছাপাতে চায় না। কবিতার চেয়ে তারা কবির ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। পরিচিত লেখকের লেখার গুণাগুণ ওরা বিচার করে না। ওদের লেখা পেলেই ছেপে দেয়। এরপর থেকে রাজীবের লেখা সব পত্রিকায় ছাপা হতে থাকে। এমনকি যেসব লেখা এতোদিন ছাপা হয়নি সেগুলোও প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। রাজীব আপন মনে বলে, দূর শালার, লেখার চেয়ে লেখকের মূল্য যেখানে বেশি সেখানে আর না লেখাই ভালো।ইতোমধ্যে এমএ ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। রাজীব এখন চাকরির খোঁজে ব্যস্ত। পাস করার পর কয়েকটি কলেজে অধ্যাপনার জন্য আবেদনপত্র পাঠিয়েছে। কয়েকটি মফস্বল কলেজ থেকে সাড়া পাওয়া গেলেও ঢাকা শহরের কোনো কলেজ থেকে ডাক আসেনি। রাজীব ঢাকা ছাড়তে চায় না। সে ঢাকায় থেকে সাংবাদিকতার চাকরি নেবে। সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিতে চায়। ছোটবেলা থেকে এটাই তার স্বপ্ন ছিল। একদিন রাজীব সাংবাদিক সলিম ভাইয়ের শরণাপন্ন হলো। সলিম ভাই তাকে এক পত্রিকা অফিসে নিয়ে সম্পাদকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। দু’একটি কথার পর সম্পাদক তাকে বললেন, তুমি আগামীকাল থেকে যোগদান কর। রাজীব সাব-এডিটর হিসেবে যোগদান করে। প্রথম তিন মাস প্রবেশনাল পিরিয়ড। ভালো করলে স্থায়ী করা হবে। আপাতত বেতন মাসিক পাঁচশত টাকা। তবে ওভার টাইমেরও সুযোগ থাকবে। টেলিপ্রিন্টারে ইংরেজিতে নিউজ আসে। সেগুলো বাংলায় তর্জমা করতে হবে। রাজীবের ইংরেজি জ্ঞান ভালো। সে একটা নিউজ তর্জমা করতে গিয়ে বুঝলো, কাজটা যতো সহজ ভেবেছিল ততো সহজ নয়। কিছুতেই অনুবাদ তার মনমতো হয় না। অনুবাদ তার নিজের কাছেই বোধগম্য নয়। ভিন্ন অর্থ বহন করে। শিফট ইন-চার্জ রাজীবের লেখা দেখে বলেন, আরে মিয়া, বাংলায় এমএম পাস করলেই ভালো বাংলা জানা হয় না। সাংবাদিকতার বাংলা আলাদা। সাহিত্য দিয়ে সাংবাদিকতা হয় না। সংবাদকে ভালো করে হৃদয়ঙ্গম করতে হয়, ইংরেজি শব্দের উদ্দেশ্যকে ভালোভাবে বুঝে অনুবাদ করে পাঠকের বোধগম্য করতে হয়। যত সুন্দর ভাষাই ব্যবহার করা হোক না কেন পাঠক তোমার ভাষা না বুঝলে পত্রিকা ছুড়ে ফেলে দেবে। ‘গ্রেইভ সিচুয়েশনকে’ কবর পরিস্থিতি বললে হবে না। লিখতে হবে, গুরুতর পরিস্থিতি কিংবা ককটেল পার্টির অনুবাদ মোরগের লেজের পাটি না লিখে ‘ককটেল পাটি লিখতে হবে। রাজীব মাথা নত করে চলে আসে। সে জেনেছে, শিফট ইন-চার্জ মাত্র ম্যাট্রিক পাস। দীর্ঘদিনের চর্চা ও অভিজ্ঞতায় কী সুন্দর লেখেন, কী সাবলীল তার গতি। সাংবাদিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি বড় কথা নয়। রাজীব হাল ছেড়ে দেয় না। ভালো করার জিদ তাকে পেয়ে বসে। সে দিনের পর দিন চর্চা করে যায়। ধীরে ধীরে তার উন্নতি হতে থাকে। রাজীবের বেতন মাত্র পাঁচশত টাকা। তার সাথে ওভার টাইমের যে টাকা যোগ হয় তাতে ঢাকায় থাকা এবং খাওয়াদাওয়া সম্ভব নয়। সে তার বন্ধু ভুলুর সাথে একটা মেসে শেয়ার করে থাকে। তাতে কোনো রকমে চলে যায়। সেদিন ছিল রাজীবের ‘অফ ডে’। সে বিকালে রমনা পার্কে বসে বাদাম চিবুচ্ছে, এমন সময় তার বহুদিনের পুরাতন বন্ধু মাহতাব সস্ত্রীক এসে হাজির। মাহতাব ম্যাট্রিক পাস করার পর আর লেখাপড়া করেনি। জমি বেচাকেনার দালালি করে অনেক অর্থ উপার্জন করেছে। বর্তমানে ফ্ল্যাট কেনা বেচারও দালালি করে। ঢাকায় গাড়ি বাড়ি করেছে। ছেলেমেয়েদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ায়। স্কুল জীবনের মাহতাবের কবিতা লেখার বাতিক ছিল। কিন্তু সেসব কবিতা হতো না। সকলে বলতো, গবিতা। সে কবিদের মতো লম্বা চুল রাখতো। সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা পরে কাঁধে ঝোলা ব্যাগ নিয়ে চলাফেরা করতো। সকলে বলতো, কবি কবি ভাব, ছন্দের অভাব। সব অপমান, টিটকারী মাহতাব নীরবে সহ্য করতো। কিন্তু রাজীব তাকে কবিতা লেখায় উৎসাহ দিত। রাজীব বলতো, তোমার কবিতা খুব সুন্দর। অন্যেরা বুঝতে পারে না। তুমি চালিয়ে যাও। মাহতাব রাজীবের কথা বিশ্বাস করতো। সে জানে রাজীবও একজন ভালো কবি। মাহতাবের সঙ্গে রাজীবের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মাহতাব রাজীবকে বলে, তুই এখনো কবিতা লিখিস? রাজীব বলে, না, কবিতা লেখা ছেড়ে দিয়েছি। মাহতাব বলে, কেন ছেড়ে দিয়েছিস? রাজীব বলে, কবিতা লিখলে পেটে ভাত পড়বে না। মাহতাব সঙ্গে সঙ্গে বলে, তোর ভাতের দায়িত্ব আমার ওপর ছেড়ে দে। রাজীব বলে, তাতে কি হবে? মাহতাব বলে, তুই কবিতা লিখে আমার নামে ছাপাবি। আমি তোকে প্রতি কবিতার জন্য পাঁচশত টাকা করে দেব। তবে একটা কথা, ব্যাপারটা সম্পূর্ণ গোপন রাখতে হবে। এমন কি আমার বৌকেও বলা চলবে না। আমার বৌ কবিতা পড়তে ভালোবাসে। মাহতাবের বৌ তখন অদূরে একটা জবা ফুলের গাছ ধরে টানাটানি করছে ফুল পাড়ার জন্য। রাজীব প্রস্তাবটা নিয়ে একটু ভাবলো। এসব ছাই কবিতা লিখে কী লাভ! অর্থাভাবে অনেক মা-বাবা তো নিজের সন্তানকেও বিক্রি করে দেয়। কবিতা লিখলে কত টাকাই বা সে পাবে। বড় কবি হবার স্বপ্ন তার কখনো ছিল না। সে কেবল শখের বশে কবিতা লিখতো। সে হিসেবে করে দেখলো, মাসে আটটা করে কবিতা লিখলে চার হাজার টাকা পাবে। সে তখন রাজার হালে থাকতে পারবে। রাজীব মাহতাবের প্রস্তাবে সানন্দে রাজি হলো। রাজীবের এখন অর্থাভাব নেই। কবিতা লিখে প্রতি মাসে যথেষ্ট আয় হচ্ছে। সে সাংবাদিকতার পেশায় মনোযোগী হয়। শিফট ইন-চার্জের উপাদেশ মেনে চলে। তিনি বলেছেন, সাহিত্যের ভাষা আর সংবাদপত্রের ভাষা এক নয়। সাহিত্য চর্চা করে লেখক নিজের সন্তুষ্টির জন্য। আর সংবাদপত্রের লেখা পাঠকের সন্তুষ্টির জন্য। সংবাদপত্রের লেখার একটা নিজস্ব স্টাইল আছে। পাঠকের বোধগম্য করার জন্য ভাষাকে, শব্দকে ভেঙে গড়তে হয়। প্রয়োজনে নতুন শব্দ, নতুন বাক্য তৈরি করতে হয়। সংবাদপত্রের ভাষা ব্যাকরণ অনুসরণ করে চলে না। ‘হাজার হাজার জনতা’ কথাটা ভুল। তবু পাঠকের মনে বিশালতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সাংবাদিকরা কথাটা চালু করেছে। সাংবাদিকরা হচ্ছে শব্দের, ভাষার কারিগর। রাজীব দিন রাত পরিশ্রম করতে থাকে। তার ডিউটি শেষ হলেও সে ছুটি নেয় না। ওভারটাইম করতে থাকে। যদিও এখন তার ওভারটাইমের প্রয়োজন নেই। কিন্তু সহকর্মীরা ভাবে তার বিপরীতটা। সাংবাদিকতা রাজীবকে নেশার মতো পেয়ে বসেছে। ফলে তার বেশ উন্নতিও হয়েছে। এক ছুটির দিনে রাজীব ঘরে বসে তার বইপত্র গোছাচ্ছে। এমন সময় একটি নোট বইয়ের ওপর তার চোখ পড়ে। প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা রয়েছে ‘তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারি দান, গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায় হে বন্ধু, বিদায়।’ রবি ঠাকুরের কবিতা। নিচে স্বাক্ষর আবিদা নাফিস। ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হবার পর প্রতি বছর ক্লাশের বিদায়ী ছাত্রছাত্রীরা মিলিত হয়ে একে অপরের খাতায় বা নোট বইয়ে স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে একটা কিছু লিখে দিয়ে থাকে। রাজীব লিখেছিল আবিদার খাতায়, “তোমার সে ভালোলাগা মোর চোখে আঁকি, আমার নয়নে তব দৃষ্টি গেছ রাখি।” এটাও রবি ঠাকুরের কবিতা। রাজীব খাতটা বুকের ওপর রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। স্বপ্ন দেখে, ভিড়ের মধ্যে আবিদা দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে মিটমিটে হাসছে। কাছে যেতেই সে সরে যায়। রাজীব সাংবাদিকতায় যথেষ্ট উন্নতি করেছে। এখন সে একজন শিফট ইন-চার্জ। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র আট ঘণ্টা ডিউটি। তিন শিফটে ভাগ করা ডিউটি। অবসর সময় তার কাটতে চায় না। জীবনটা শূন্য বলে মনে হয়। একদিন দুপুরে আবিদা হঠাৎ তার অফিসে এসে হাজির। সঙ্গে তার এক বান্ধবী। দুজনে মফস্বল শহরে এক কলেজে অধ্যাপনা করে। আবিদার মুখে আগের সেই কমনীয়তা আর নেই। চেহারায় বয়সের ছাপ পড়েছে। কথাবার্তায় সাবলীল। সংকোচনহীন। এ এক অন্যরকম আবিদা। আবিদা বলে, আপনার বন্ধু মোজাম্মেল হক আমার সহকর্মী। তার কাছে আপনার খবরাখবর পাই। রাজীব বলে, আপনার খবর জানার জন্য আপনার কোনো বন্ধুর সঙ্গে আমার পরিচয় নেই। রাজীব ওদের চা খেতে বললো। ওরা চা না খেয়ে গল্প করে হাসি মুখে বিদায় নিল। কয়েক মাস পর মোজাম্মেল হকের উদ্যোগে রাজীব ও আবিদার বিয়ে হয়। ফুলশয্যার রাতে রাজীব আবিদাকে বলে, তোমাকে আমি ভালোবাসি। আবিদা বলে, কথাটা এতোদিন বলোনি কেন? রাজীব বলে, সাহস হয়নি, পাছে প্রত্যাখ্যাত হই। প্রত্যাখ্যানের জ্বালা সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই। তারপর বলে, তুমিও তো কখনো বলোনি, আমাকে তুমি ভালোবাস। আবিদা বলে, মেয়েরা কখনো আগে ভালোবাসার কথা বলে না। তাদের ভালোবাসা পুরুষকে বুঝে নিতে হয়। মেয়েদেরও তো প্রত্যাখ্যানের ভয় থাকে। আসলে তুমি একটা হাঁদারাম, একটা কাপুরুষ। রাজীব বলে, কাপুরুষ না হলে এতদিন তোমার প্রতীক্ষায় থাকতে পারতাম না। আবিদা বলে, প্রতীক্ষা? মিথ্যা কথা। তুমি কখনো আমার প্রতীক্ষায় ছিলে না। এতোদিন মনের মত মেয়ে পাওনি বলেই বিয়ে করোনি। এতোদিনে মনের মতো মেয়ে পেয়েছি বলেই তো বিয়ে করেছি বলে রাজীব আবিদাকে জড়িয়ে ধরে তার ঠোঁটে চুমু খায়। বাধা না দিয়ে অনুচ্চ স্বরে আবিদা বলে, ছাড়ো। বিয়ের পর রাজীব আর আবিদা সারা দেশ ঘুরে বেড়ায়। অনেকগুলো বছর তাদের নির্বুদ্ধিতার জন্য নষ্ট হয়ে গেছে। জীবন এতো সুন্দর তা তাদের আগে জানা ছিল না। একদিন রাজীব আর আবিদা কেনাকাটা করে একটি শপিংমল থেকে বেরুচ্ছে এমন সময় পায়জামা আর ময়লা সাদা শার্ট পরা এক ভদ্রলোক কাছে এসে সংকুচিতভাবে বললো, আমাকে একটু সাহায্য করতে পারেন? আমার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ। গতকাল ডাক্তারকে বারোশ টাকা ফিস দিয়ে দেখিয়েছি। ডাক্তার এমআরআইসহ কয়েক ধরনের রক্ত পরীক্ষা করতে বলেছে। সেগুলো আজ পরীক্ষা করিয়েছি। বিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আগামীকাল রিপোর্টগুলো ডাক্তারকে দেখাতে হবে। তখন আবার ফিস দিতে হবে। লোকটাকে দেখে রাজীবের অভাবী লোক বলেই মনে হলো। প্রতারক মনে হলো না। রাজীব বললো, আমার পকেটে এখন বেশি টাকা নেই। আপনি বিকালে আমার সঙ্গে দেখা করুন, বলে পকেট থেকে তার একটা ভিজিটিং কার্ড বের করে লোকটির হাতে দেয়। গাড়িতে বসে আবিদা রাজীবকে বলে, প্রথমবার ফি নিয়ে চিকিৎসা না করে রিপোর্ট দেখার সময়, ডাক্তার আবার ফি নিবে কেন? রাজীব বলে, সাধারণত সব ডাক্তার নেয় না। যে সব অসাধু ডাক্তার দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছে কেবল তারাই নেয়। তারাই রোগীদের শোষণ করে। আবিদা বলে, আমাদের দেশে বেশির ভাগ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আমলা, ব্যবসায়ী দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছে। সারাজীবন তারা দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছে। অভাবে তাদের স্বভাব নষ্ট হয়েছে। এখন তো তাদের কোনো অভাব নেই, তবুও স্বভাবের পরিবর্তন হয় না কেন? রাজীব বলে, বাঙালি জাতি দীর্ঘদিন পরাধীন ছিল। পরাধীন জাতির প্রত্যেক মানুষের ভিতর একটি ভিক্ষুক বাস করে। সে কেবল নিতে যানে, দিতে জানে না। ক্ষেত্রবিশেষে ভিন্ন ভিন্নভাবে তার প্রকাশ পায়। অভাব না থাকা সত্তে¡ও তারা ঘুষ খায়, প্রতারণা করে, খাদ্যে ভেজাল মিশায়, ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ করে এবং নানান ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হয়। আমাদের পেশাজীবীরা এই দূষিত সমাজেরই তো অংশ। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ভিক্ষক জাতির আত্মসম্মানবোধ থাকে না। আবিদা বলে, এখন তো আমরা পরাধীন নই, স্বাধীন জাতি। তবু আমাদের মানসিকতার পরির্বতন হয় না কেন? রাজীব বলে, কথায় বলে না, ‘কয়লা ধুলেও ময়লা যায় না।’ তবে এবার যে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে তা নিরপেক্ষভাবে চালাতে পারলে ময়লা দূর হবে বলে মনে হচ্ছে। আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। হঠাৎ একটা রিকশা গাড়ির সামনে এসে পড়ায় রাজীব হার্ড ব্রেক করে। আচমকা গাড়ি থেমে যাওয়ায় আবিদা সামনে ঝুঁকে পড়ে সামান্য আঘাত পায়। নিজেকে সামলে নিয়ে আবিদা ঠিক হয়ে বসে। রাজীব জিজ্ঞেস করে, লেগেছে? আবিদা বলে না। রাজীব আবার বলতে থাকে, অসাধু ডাক্তাররা, অসাধু আমলা বা অসাধু ইঞ্জিনিয়ারদের মতো ঘুষ খেতে পারে না, অসাধু ব্যবসায়ীদের মতো খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে অর্থ কামাই করতে পারে না। অসাধু ডাক্তাররা তাদের মতো করে মানুষকে শোষণ করে। একটু হেসে বলে, হতাশ হবার কিছু নেই। একদিন সব কিছুর পরিবর্তন হবে। আমাদের সামনে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। একদিন তাদের অবস্থা আমাদের চেয়েও খারাপ ছিল। যোগ্য নেতৃত্ব পেলে আমাদের অস্থার পরিবর্তন হতেও বেশি দেরী হবে না। যার পিছু টান নেই সে এগিয়ে যায়, সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যায় তার দেশকেও। বাসায় এসে খাবার টেবিলে বসে রাজীব বলে, তোমাকে আজ একটা নতুন অভিজ্ঞতার কথা বলি, আমার বন্ধু মালেক তার বাড়ির অসুস্থ কাজের মহিলাকে নিয়ে এক প্রবীণ খ্যাতনামা ডাক্তারের কাছে যায়। গত এক মাস ধরে মহিলার জ্বর ছাড়ছে না। ডাক্তার রোগীর পরিচয় জানলেন। বারোশ টাকা ফি নিয়ে প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়ে কয়েকটি প্যাথলজিক্যাল টেস্ট করার জন্য নির্দিষ্ট এক ক্লিনিকের নাম বলে দিলেন। ক্লিনিক থেকে ডাক্তাররা যে কমিশন পেয়ে থাকে সে কথা মালেক জানে। মালেকের সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ডাক্তার বললেন, একটু বসুন। আপনার সঙ্গে একটু গল্প করি। আপনারা হচ্ছেন জ্ঞানীগুণী মানুষ। এই বলে ডাক্তার তার ড্রয়ার থেকে একটি মসজিদের বড় ছবি বের করলেন। বললেন, আমি তিন কোটি টাকা ব্যয় করে দেশের বাড়িতে এই মসজিদ নির্মাণ করেছি। একেবারে আধুনিক ডিজাইনের। আমার বাবার নামে মসজিদ। ডাক্তারের চোখেমুখে গর্ব আর উচ্ছ¡াসের ভাব ফুটে উঠলো। মালেক ডাক্তারের মহৎ কীর্তির ভূয়সী প্রশংসা করে বললো, আপনার কথা গ্রামবাসী চিরকাল স্মরণ করবে। ডাক্তার বিগলিত হাসি হাসলেন। ডাক্তারের কপালে নামাজ পড়ার বড় কালো দাগ। তিনি যে নিয়মিত নামাজ পড়েন তার সাক্ষ্য বহন করছে। আবিদা বললো, নামাজ তো যে কোনো স্থানেই পড়া যায়। আমাদের ধর্মে আছে, মসজিদের চেয়ে মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। রাজীব সংক্ষেপে বললো, সেটা এসব আহাম্মকদের বুঝাবে কে? রাজীব প্রতিদিন বাজারে যাবার সময় পায় না। এক মুরগি ওয়ালাকে বলে দিয়েছে, প্রতি শুক্রবার বাসায় মুরগি নিয়ে আসতে। শুক্রবার তার ‘অফডে’। মুরগি ওয়ালা মাথায় ঝুড়ি ভরতি মুরগি নিয়ে আসে। ঝুড়ি নামবার সময় হঠাৎ একদিন পলিথিনে মোড়ানো কিছু কাগজপত্র বেরিয়ে আসে। রাজীব বলে, এগুলো কি? মুরগিওয়ালা বলে, ওগুলো আমার বাবার মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট। আমার বাবা একজন বড় মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দেশে ফিরে আসার পর সরকার তাকে এ সার্টিফিকেট দেয় এবং মাসে পাঁচশত টাকা করে ভাতা দেয়। বাবার মৃত্যুর পর আমি তাঁর সার্টিফিকেট সযতেœ রক্ষা করি। রাজীব বলে, তোমার বাবার কি হয়েছিল? মুরগিওয়ালা বলে, যুদ্ধের সময় বাবার পায়ে গুলি লাগে। তখন সুচিকিৎসার অভাবে পায়ে গ্যাংরিন ধরে। দেশ স্বাধীন হবার পরে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর নতুন সরকার তাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়, তাঁর পাঁচশত টাকা ভাতাও বন্ধ করে দেয়। বাবা আর বেশি দিন বাঁচেননি। মুরগিওয়ালা কথাগুলো এমনভাবে বললো, যেন তার আক্ষেপ, দুঃখ, ক্ষোভ কিংবা কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। সব কিছুই স্বাভাবিক ঘটনা। রাজীব তাকে সান্ত¡না দেয়ার ভাষা খুঁজে পায় না। ধীরে ধীরে সময় এগিয়ে চলে। রাজীব আর আবিদার বয়সও বাড়তে থাকে। তাদের দুটি সন্তান হয়। একটি ছেলে, একটি মেয়ে। তারা স্কুলে পড়ে। বারান্দায় বসে দুজন অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করে। আবিদা বলে, মনে পড়ে? তুমি যখন এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করে জেলে গিয়েছিল আমি তখন জেলখানায় তোমার জন্য কিছু নোট এবং বই পাঠিয়েছিলাম। মাস দুয়েক পরেই ছিল আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা। রাজীব বলে ভুলবো কেমন করে? তোমার নোট এবং বই না পেলে সেবার আমার পক্ষে পাস করা সম্ভব ছিল না। তারপর আবার বলে, জেল থেকে বেরিয়ে আসার পর লাইব্রেরির বারান্দায় তোমার সাথে দেখা হলে আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালে তুমি কোনো কথা না বলে আমার দিকে একবার তাকিয়ে চলে গিয়েছিলে। আবিদা বলে আমি তোমার ওপর ভীষণ রাগ করেছিলাম। তুমি কখনো আমার রাগ ভাঙাতে আসোনি। রাজীব চেয়ার ছেড়ে ওঠে দুহাত জোড় করে কৃত্রিম দুঃখের সঙ্গে বলে, ক্ষমা করো দেবী, ক্ষম মোর অপরাধ। তারপর আবৃত্তি শুরু করলো, রবি ঠাকুরের ‘সাধনা’ কবিতার কিছু অংশ : “দেবী অনেক ভক্ত এসেছে তোমার চরণতলে অনেক অর্ঘ্য আনি আমি অভাগ্য এনেছি বহিয়া নয়নজলে ব্যর্থ সাধনখানি। তুমি জানো মোর মনের বাসনা যত সাধ ছিল সাধ্য ছিল না, তবু বহিয়াছি কঠিন কামনা দিবস নিশি।” কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর আবিদা বলে, তুমি সারাক্ষণ রবি ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তি করো কেন? তোমার নিজের কবিতা আবৃত্তি করতে পারো না? তুমি নিজেও তো কবি। তখন তো ভালোই কবিতা লিখতে। রাজীব বলে, আমার সব কথা রবি ঠাকুর লিখে গেছেন। তারপর কৃত্রিম দুঃখের সুরে বলে, আমরা কাব্য দেবী মারা গেছে। আমার কবিতা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমার কবিতার মালিকানা হস্তান্তরিত হয়ে গেছে। সে আর আমার কাছে আসবে না। আবিদা বলে, হেয়ালী করো না। কাল থেকে আবার কবিতা লিখতে শুরু করবে। রাজীব বলে, দুঃখ কষ্ট হচ্ছে কবিতার উৎস। যে মানুষ জীবনে যত বেশি কষ্ট পায় সে মানুষ তত বেশি কবিতা লিখতে পারে। সে কষ্ট বাস্তবে হোক আর কল্পিতই হোক। তুমি সেবা-যত্ন করে আমার জীবন অতি সুখে কানায় কানায় ভরে দিয়েছো। আমার জীবনে কোনো দুঃখ কষ্ট নেই। আমাকে দিয়ে আর কবিতা লেখা হবে না। সক্রেটিস আর টলস্টয়ের স্ত্রীরা তাঁদের স্বামীদের কষ্ট দিতেন বলেই তো তারা বিখ্যাত হতে পেরেছিলেন। স্ত্রীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে টলস্টয় গৃহত্যাগী হয়েছিলেন। সক্রেটিসের স্ত্রী বকতে বকতে একদিন সক্রেটেসের মাথায় এক বালতি ময়লা পানি ঢেলে দিয়েছিলেন। সক্রেটিস হাসতে হাসতে বলেছিলেন, এতোক্ষণ গর্জন হচ্ছিল, এবার বর্ষণ শুরু হয়েছে। আবিদা কোনো কথা না বলে চুপিচুপি বাথরুমে গিয়ে এক বালতি পানি এনে রাজীবের মাথায় ঢেলে দিয়ে বলে, এবার কবিতা লিখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App