×

মুক্তচিন্তা

প্রবীণদের জন্য আনন্দ আশ্রয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২০, ০৭:৫০ পিএম

সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং ধর্মীয় অনুশাসনের অভাবে আমাদের দেশে বৃদ্ধ মা-বাবা কত যে অসহায় অবস্থায় জীবনযাপন করছেন বাইরে থেকে সেটা বোঝা যায় না। অসহায় প্রবীণদের কল্যাণের বিষয়ে এখনই আমাদের উদ্যোগী হওয়া জরুরি। কেননা বার্ধক্য হচ্ছে মানুষের অবধারিত সমস্যা। আজকের নবীনই আগামী দিনের প্রবীণ। তাই শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রবীণদের দেখভাল করতে হবে। আর এখন থেকেই নিজেদের স্বস্তিময় বার্ধক্যের প্রস্তুতি নিতে হবে। দয়া দাক্ষিণ্য বা করুণার দৃষ্টিতে নয়, মানবাধিকারের ভিত্তিতে এবং প্রাপ্য মর্যাদার যুক্তিতে প্রবীণদের চাওয়া-পাওয়া সমাধান করা প্রয়োজন। এর জন্য দরকার গণসচেতনতা, আর এই গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রবীণদের অবহেলা, অযত্ন, দুর্ব্যবহার, নির্যাতনের ঘটনা এবং সবার করণীয় বিষয়গুলো সব শিক্ষা পাঠ্যসূচিতে এবং গণমাধ্যম কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে প্রবীণদের প্রতি কিছুটা হলেও সম্মান প্রদর্শন করা হবে।

যে প্রবীণ যৌবনে তার মেধা, মনন, দক্ষতা দিয়ে সমাজের অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন, জীবনের সব সুখ বিসর্জন দিয়ে সন্তানদের মানুষ করেছেন, মানব কল্যাণে অবদান রেখেছেন, বৃদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই মানুষটি অযত্ন অবহেলার আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। আপাতদৃষ্টিতে সমাজের বা সরকারের ন্যূনতম দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তায় না। শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও সুন্দর জীবন গড়ার জন্য পিতা-মাতা ও সরকারের যেমন দায়িত্ব আছে অনুরূপভাবে প্রবীণদের জন্য সন্তান, সমাজ ও সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে।

প্রবীণদের এই অসহায় দুর্দশা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর সমাধান না করলে প্রত্যেককেই বৃদ্ধ বয়সে এই অবহেলা ও কষ্টের স্বাদ নিতে হবে। অনেক সন্তান তাদের কর্মব্যস্ততার কারণে কর্মস্থল ত্যাগ করে বাবা-মার পরিচর্যা বা সেবা যত্ন করতে পারে না। অনেক মা-বাবা নিজের ভিটা মাটি ছেড়ে বিদেশে সন্তানের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করে না। এসব নানা কারণে দিন দিন সন্তানদের সঙ্গে বাবা-মার সুসম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া অনেক মা-বাবার পুত্র সন্তান না থাকায় জামাই-মেয়ের বাড়িতে থাকতে পছন্দ করেন না।

এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একটাই উপায়; কষ্টের বৃদ্ধাশ্রম নয়, প্রত্যেক উপজেলায় আনন্দের সঙ্গে বসবাস করার জন্য ‘আনন্দ আশ্রয়’ গড়ে তুলতে হবে। যেখানে স্বেচ্ছায় প্রবীণরা থাকতে চাইবেন।

প্রত্যেক উপজেলার শহরের কাছাকছি কমপক্ষে পাঁচ একর জমির ওপর এই আনন্দ আশ্রয় গড়ে তুলতে হবে। আনন্দ আশ্রয়ে থাকবে প্রবীণদের সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতাল, থাকবে ভালো নার্সিং ব্যবস্থা, থাকবে ভালো মানের খাবার, থাকবে বিনোদনের ব্যবস্থা, থাকবে প্রার্থনার জন্য মসজিদ, মন্দির, খেলার মাঠ, ব্যায়ামাগার ইত্যাদি। থাকবে ভালো আবাসনের ব্যবস্থা। এখানে যে কোনো প্রবীণ স্বেচ্ছায় থাকতে পারবেন। যাদের দেখার কেউ নেই, স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে বা একা একা থাকতে পারবেন। ধনী-প্রবীণরা ভাড়া বা খরচ দিয়ে থাকতে পারবেন।

একই বয়সে অনেকে একসঙ্গে থাকার কারণে প্রবীণরা আনন্দে থাকতে পারবেন। এতে সন্তান, আপনজনরা দেশে-বিদেশে যেখানেই থাকুক না কেন বাবা-মা ভালো আছেন ভেবে তারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। প্রয়োজনে সন্তান, আপনজন বিদেশ থেকে এসে কিছুদিন আনন্দ আশ্রয়ে বাবা-মাকে সঙ্গ দিতে পারবেন। গরিব অসহায় প্রবীণরা সরকারি খরচে থাকবেন। প্রয়োজন হলে স্বেচ্ছায় কিছুদিন বাড়িতে, কিছুদিন আনন্দ আশ্রয়ে থাকতে পারবেন।

অসহায় প্রবীণদের বিষয়টি জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে, জনসচেতনতা ও প্রচারের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আনন্দ আশ্রয় গড়ে তোলার জন্য নিজ দায়িত্বে সবাই এগিয়ে আসলেই সত্বর বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে এই মহৎ উদ্যোগকে বেশিরভাগ সচেতন মানুষ ও ভুক্তভোগী প্রবীণরা স্বাগত জানিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়কে বাস্তবায়নের জন্য সমাজে দানশীল ও বিত্তবানরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে চায়। এখন সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে।

ঝিনাইদহ। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App