×

জাতীয়

পাহাড়ে ফের হিংসার ঢেউ

Icon

nakib

প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২০, ১০:০৬ এএম

পাহাড়ে ফের হিংসার ঢেউ

পাহাড়ে সংঘাত

 অশান্ত পাহাড়ে ফের রক্তের হোলি খেলা। থামছে না সবুজ পাহাড়ের কান্না। পাঁচটি রক্তাক্ত নিথর দেহ নিয়ে কাঁদছে পার্বত্য জনপদ। অস্ত্রের ঝনঝনানিতে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার গাজীনগর গ্রামে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিবির সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষে একজন বিজিবি সদস্যসহ নিহত পাঁচজন এবং আহত হয়েছেন আরো অন্তত ১৫ জন।

উত্তপ্ত পাহাড়ে শান্তির বারতা দিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি হয়েছিল প্রায় দুই যুগ আগে, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমা) নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি সঙ্গে এই শান্তিচুক্তি সই হয়। তবুও অস্থিতিশীল রয়ে গেছে পাহাড়, শান্তি আসেনি। প্রতিনিয়ত ঝরছে রক্ত। সবুজের পাহাড় জুড়ে শান্তির পায়রা কবে উড়বে কেউ জানে না। নৃ-তান্ত্রিক জনগোষ্ঠীর কান্না থামবে কবে তাও জানে না কেউ।

শান্তিচুক্তির দুই যুগেও পার্বত্য অঞ্চলে কেন সন্ত্রাসী হামলা এবং হত্যাকাণ্ড বেড়েই চলেছে, তা থামানো যাচ্ছে না কেন, এই প্রশ্ন উঠছে বারবার। পার্বত্য অঞ্চলে নাগরিক অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীরা বলছেন, ক্ষমতা ও সম্পদ নিয়ন্ত্রণে পাহাড়ি সংগঠনগুলোর দ্ব›েদ্ব এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। চাঁদাবাজি এবং অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই আঞ্চলিক দল এবং গোষ্ঠীগুলো বিভক্ত হয়ে পড়ছে এবং সংঘাত থামানো যাচ্ছে না। বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতির কারণে পার্বত্য এলাকায় পাহাড়িদের রাজনৈতিক সংগঠনগুলো অধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে ঝুঁকেছে। এজন্য তাদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরকারী সন্তু লামার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতিও বিভক্ত হয়েছে। ভাগ হয়েছে চুক্তি বিরোধী পাহাড়িদের একটি সংগঠন ইউপিডিএফ। পাহাড়ে আধিপত্য বিস্তারকারী সংগঠনের মধ্যে রয়েছে- জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), জনসংহতি সমিতি (জেএসএস-এম এন লারমা), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এবং ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)। নিজেদের পেশিশক্তির জানান দিতেই পাহাড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে মানবাধিকার কর্মী ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ ভোরের কাগজকে বলেন, পাহাড়ে অশান্তির অনেক কারণ রয়েছে। মূল কারণ নেতৃত্বের আধিপত্য বিস্তার।

পাহাড়িদের মধ্যেও অনৈক রয়েছে। অনেক গ্রুপ। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এবং ইউপিডিএফের মধ্যে সংঘর্ষ, সংঘাত লেগেই থাকে। রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষ বেশি হচ্ছে। এমন রক্তপাত কারো কাম্য হতে পারে না মন্তব্য করে প্রবীণ এই গবেষক বলেন, এই রক্তপাত বন্ধ করার জন্য স্থানীয়দের সংযত থাকা উচিত। রাজনৈতিক সংগঠন এবং সরকারকেও এই নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।

স্থানীয়দের মতে, পাহাড়ে অশান্তির মূল কারণগুলো হচ্ছে- শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়া, আঞ্চলিক ও পার্বত্য পরিষদের নির্বাচনসংক্রান্ত জটিলতা, ভূমি সমস্যা, সেনাবাহিনীর উপস্থিতি, পাহাড়িদের বিভেদ, বাঙালিদের বসতি ও অবিশ্বাস, দুর্গম এলাকায় উন্নয়ন ও বঞ্চনার শিকার হওয়া। এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়াকেই দায়ী করছেন পাহাড়িরা। এ ব্যাপারে জনসংহতি সমিতির নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার বলেন, চুক্তির বেশিরভাগই বাস্তবায়ন না হওয়ায় সংকট কাটছে না। যে উদ্দেশ্য নিয়ে চুক্তি হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্য বা আদর্শের ধারে কাছে যাওয়া কি সম্ভব হয়েছে? চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হলে এখানে শান্তি আসবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App