×

মুক্তচিন্তা

নিয়ন্ত্রণে চাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২০, ০৮:২৪ পিএম

কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করলে এবার বর্ষার মৌসুমে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ গত বছরের চেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বলা হয়েছে, এবার এ রোগে আক্রান্তদের জীবন বাঁচানোই দায় হয়ে পড়বে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাম্প্রতিক এক জরিপেও উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে। জরিপে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১২ শতাংশ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১০ শতাংশ এলাকায় এডিস লার্ভার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতির চিত্রও উঠে এসেছে। তবে ডেঙ্গুর প্রকোপ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। গত বছর দেশে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফেরেন ১ লাখ ১ হাজার ২৭ জন। ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশব্যাপী ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৪১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে ২৪০ জন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে যান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু যেহেতু একটি ভাইরাসজনিত জ্বর, অন্যান্য অনেক ভাইরাস রোগের মতো সরাসরি এরও কোনো প্রতিষেধক নেই, টিকাও নেই। লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে এর মোকাবিলা করা হয়। আইইডিসিআরের তথ্য মতে, সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার থাকে। তবে জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত পরিস্থিতি বেশি খারাপ থাকে। তবে চলতি মাসে ঢাকায় মশার ঘনত্ব অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাধারণত মশক নিধন কার্যক্রমের স্থবিরতা, গাইডলাইনের অভাব এবং মানুষের অসচেতনতাই ডেঙ্গুর প্রকোপের জন্য দায়ী। হঠাৎ থেমে থেমে স্বল্পমেয়াদি বৃষ্টিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা খুব বেশি মাত্রায় প্রজনন সক্ষমতা পায়। ফলে এডিস মশার বিস্তারও ঘটে বেশি।

এমতাবস্থায় রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ভ‚মিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য তাদের দায় নিতে হবে। গত বছর মশা নিধনে ওষুধ ছিটানোতে গাফিলতিসহ মেয়াদোত্তীর্ণ অকার্যকর ওষুধ ছিটিয়েও লাভ হয়নি। রাজধানীর ১৩৪ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে প্রায় ৬ বর্গকিলোমিটার জলাশয় রয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এসব জলাশয়ের মালিক। সিটি করপোরেশনসহ সব সংস্থার নিজ নিজ জলাশয় পরিষ্কার করার দায়িত্ব থাকলেও কোনো সংস্থা তা করে না। একই চিত্র অন্তত ৩০০ কিলোমিটার কার্পেটিং ড্রেনের ক্ষেত্রেও। দুই সিটি করপোরেশন এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করলে ঢাকাসহ সমগ্র দেশবাসীকে গতবারের চেয়ে বেশি খেসরাত দেয়া লাগতে পারে। আগামী দুই মাসের মধ্যে দুই সিটি করপোরেশন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে টেকসই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। নইলে এবার গত বছরের চেয়ে চরম মূল্য দিতে হবে।

করপোরেশন এলাকার বাইরেও স্থানীয় প্রশাসন ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ কাজে তৎপর হওয়া দরকার জরুরিভিত্তিতে। এছাড়া ডেঙ্গুর প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরি, ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে মানুষকে ওয়াকিবহাল করা, ডেঙ্গু হলে করণীয় সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা জোরদার করাও দরকার। রাজধানী ও জেলা সদরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ ও চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা রাখার কথাও বিবেচনায় আনতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App