×

মুক্তচিন্তা

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষাও একটি অর্জন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২০, ০৬:১১ পিএম

দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে কয়েক বছর ধরে আলোচনা হলেও কার্যক্ষেত্রে এর প্রয়োগ ঘটানো যায়নি। চলতি বছরেও প্রথমে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ধারণাটি আসলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে এবং আরো আনুষঙ্গিক কয়েকটি কারণে নেয়া হয়েছিল। একজন শিক্ষার্থী এবং তার অভিভাবক দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে এভাবে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রায় সময়ই নানা বিড়ম্বনার শিকার হন। যানজট অনেক ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে। এসব কারণে জোর দাবি ছিল সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার। মেডিকেল কলেজগুলো সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে।

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিতে সম্মত হয়েছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও কৃষিতে প্রাধান্য থাকা ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়। চলতি বছর তা গুচ্ছ পরীক্ষায় রূপ নিল। এটি একটি অগ্রগতি। প্রতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় শেষ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এই সময়টা কাটে ছাত্রছাত্রীদের টেনশনের ভেতর। কোথাও ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত তার মধ্যে এই দুশ্চিন্তা কাজ করে। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়া, সেখানে থাকার চিন্তা সবমিলিয়ে বেশ সংগ্রাম করতে হয় এ সময়। জীবনযুদ্ধে থেকে কোনো অংশে কম না এই ভর্তিযুদ্ধ। প্রতি বছর যে হারে পাসকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সংখ্যা তার থেকে কম।

তারপর আবার রয়েছে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়, পছন্দের বিষয় নির্বাচন। সব মিলিয়ে বিশাল চাপ। উচ্চশিক্ষার জন্য তাই তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয় তাদের। এই তীব্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তারা নিজেদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চায়। কিন্তু তারা এই তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনার মুখোমুখি হন। এইচএসসি পাসের পরই তারা পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে প্রথমেই মোটা টাকা দিয়ে কোচিংয়ে ভর্তি হয়। তারপর মাস দুয়েক ভর্তি কোচিং শেষ করে ভর্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়। এই সময়ে যাদের আর্থিক অবস্থা দুর্বল তারা এই কোচিং করার সুযোগ পায় না। প্রচলিত ধারণা এটাই যে কোচিং ছাড়া কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পায় না। অবশ্য প্রচলিত ধারণাই আজ ধ্রুব সত্যি।

অভিভাবকদের মধ্যে তাই নামি-দামি কোচিংয়ে সন্তানকে ভর্তি করাতে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। কোনো বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য বিশেষ কোনো বই বা কোচিংয়ের প্রচার চলে তখন তা সম্ভব হবে না। ভর্তি পরীক্ষা হবে সমন্বিতভাবে। মেধা অনুযায়ী শিক্ষার্থী কোনো এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে।

কোচিংয়ে ভর্তি হওয়ার পর আবার শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম তোলার পালা। আলাদা আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে আলাদা আলাদা ফরম তুলতে হয়। ফরমের কেনার সাধ্যও অনেক পরিবারের থাকে না। সেখানেও গরিব মেধাবীরা পিছিয়ে পড়ে। যে কোনো পদ্ধতি প্রয়োগে সমস্যা আসতে পারে। তবে তা সমাধান করতে আলোচনা করতে হবে। আমরা কেবল ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ঝামেলা লাঘব করতে চাই। তাদের শারীরিক ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দিতে হবে।

বর্তমানে শুধু মেডিকেল কলেজগুলোতে এই পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা প্রচলিত আছে। যদি এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হতো তাহলে কোনো পরীক্ষার্থী সিলেট বা যশোর যে কোনো এক স্থান থেকেই অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা দিতে পারত। সেক্ষেত্রে মেধা তালিকাও আবেদনের বিশ্ববিদ্যালয় অনুযায়ী করা হবে। যদিও কয়েক বছর ধরেই কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিতে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজন। এর পক্ষে-বিপক্ষে অনেক মত থাকলেও আমাদের বিরাট এই কর্মযজ্ঞ যে ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হয় তাদের স্বার্থকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দিতে হবে। যানজট যদি নাও সমস্যা করে তাহলেও দীর্ঘ পথের ক্লান্তি থেকে তাদের মুক্তি দেয়া প্রয়োজন। অপরিচিত স্থান, আবাসন অনিশ্চয়তা, যাত্রার যানবাহন সমস্যা ইত্যাদি থেকে মুক্তি দিতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। আশা করি আগামীতে আমরা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মতো একটি মহৎ কর্মযজ্ঞ দেখতে পারব।

শিক্ষক ও লেখক, পাবনা।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App