×

জাতীয়

ওয়েস্টিন ঘিরেই পাপিয়ার টাকা কামানোর ফাঁদ

Icon

nakib

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২০, ০৯:৫০ এএম

ওয়েস্টিন ঘিরেই পাপিয়ার টাকা কামানোর ফাঁদ

ওয়েস্টিনে পাপিয়ার সাথে খোশগল্পে হোটেলটির মারিক ধনঢ্যি ব্যবসায়ী নূর আলী

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজতে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন। জালটাকা সরবরাহ, মাদক ব্যবসা ও অনৈতিক কাজের অভিযোগে র‌্যাবের হাতে আটক যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃৃত পাপিয়া অপরাধ জগতে তার পদচারণার অনেক তথ্য দিলেও সেগুলো যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। যুব মহিলা লীগ নেত্রী নাজমা-অপু-তুহিনের সঙ্গে সখ্যের সূত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ছিল তার দহরম মহরম। এরপর অনেককে ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ ও ডিনারের দাওয়াত করে ডেকে নেন হোটেল ওয়েস্টিনে। কখনো হোটেল লবিতে, আবার কখনো স্যুটে আড্ডা-আলাপচারিতায় চলত তদবির, লবিং। তিন মামলায় ১৫ দিনের রিমান্ডে থাকা এই দম্পতির পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে গতকাল।

এদিকে পাপিয়া দম্পতির দুই সহযোগীর ফের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলেন- সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)। গতকাল রবিবার পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিদার হোসাইন পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিন শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে সুমনকে এ মামলায় তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে বিচারক তাদের দুজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পুলিশের একাধিক সূত্র মতে, পাপিয়ার আয়ের উৎস ছিল ওয়েস্টিন হোটেল। সেখানে প্রতারণার ফাঁদ

পেতে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর চুক্তির আড়ালে মোটা অঙ্কের টাকা হাতাতেন পাপিয়া। চাকরিতে নিয়োগ, বদলি ও তদবির বাণিজ্যের কাজও চলত সেখানে। নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলার ঠিকাদারি কাজের ভাগবাটোয়ার জন্য পাপিয়া রাজনৈতিক নেতা, এমপি, মন্ত্রীদের কাছে তদবির করতেন। হোটেলে বসে টাকা আয় করে ব্যয়ের পাশাপাশি সঞ্চয় ও বিদেশে পাঠাতেন পাপিয়া। তার দেশি-বিদেশি নেটওয়ার্কে কয়েক হাজার ব্যক্তি রয়েছেন। ওয়েস্টিন মালিক এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল পাপিয়ার। অনেক সময় ধনাঢ্য ব্যবসায়ী নূর আলির সঙ্গে দোতলায় বসে বৈঠক করতে দেখা গেছে তাকে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া ও সুমন এসব বিষয়ে ডিবি পুলিশকে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ডিবির উত্তর জোনের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দর থানার মামলায় পাপিয়াসহ চারজনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। একইসঙ্গে ওই দিন শেরেবাংলা নগর থানার মাদক ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুই মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামী সুমনের পাঁচ দিন করে ১০ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়াসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব ১-এর একটি দল। গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেনÑ পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)। তারা অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, নানা অনৈতিক কাজ, জালনোট সরবরাহ, রাজস্ব ফাঁকি ও অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত বলে জানায় র‌্যাব।

গ্রেপ্তারের পর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে হোটেল ওয়েস্টিনে পাপিয়ার নামে বুকিং করা বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট ও ফার্মগেট এলাকার দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে আরো ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি ব্যাংক চেকবই, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করে র‌্যাব। র‌্যাবের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পাপিয়া-সুমন দম্পতির সুনির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। ঢাকা ও নরসিংদীতে তাদের গাড়ির শোরুম ও কার ওয়াশ সলিউশন সেন্টার থেকে বার্ষিক আয় ১৯ লাখ টাকা। প্রাথমিক অনুসন্ধানে পাপিয়া ও তার স্বামী সুমনের অনেক অপকর্মের তথ্য পাওয়া গেছে। তারা ঢাকা ও নরসিংদী এলাকায় অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, প্রতারণা করে অঢেল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া তাদের আয়ের অরেকটি উৎস হলো নারীদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করানো। সাত নারীকে এ কাজে ব্যবহার করতেন পাপিয়া। এছাড়া হোটেল ওয়েস্টিনে সবসময় পাপিয়ার নামে একটি প্র্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট বুক থাকত।

সর্বশেষ গত বছরের ১২ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে মোট ৫৯ দিন ঢাকা ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে অবস্থান করে পাপিয়া ও তার সহযোগীরা। সেখানে আনুষঙ্গিক খরচসহ সর্বমোট ৮১ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৮ টাকা নগদ পরিশোধ করে পাপিয়া। রাজধানীর ফার্মগেটের ২৮নং ইন্দিরা রোডের ‘রওশনস ডমিনো রিলিভো’ ভবনে দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে পাপিয়া-সুমনের। এছাড়া নরসিংদী শহরে দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদীর বাগদী এলাকায় কোটি টাকার দুটি প্লট রয়েছে। তাদের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য রয়েছে কয়েকটি বিলাসবহুল গাড়ি। এছাড়া তেজগাঁও বিএফডিসি গেটের পাশে অংশীদারিত্বে পাপিয়ার ‘কার একচেঞ্জ’ নামে একটি গাড়ির শোরুম রয়েছে। নরসিংদী জেলায় ‘কেএমসি কার ওয়াশ এন্ড অটো সলিউশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া পাপিয়া-সুমন দম্পতির দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত থাকার তথ্যও রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App