×

মুক্তচিন্তা

রাজধানীর বিপন্ন খাল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২০, ০৭:১৭ পিএম

রাজধানী ঢাকা থেকে একে একে উধাও হয়ে যাচ্ছে একসময়ের প্রাণবন্ত খালগুলো। ঢাকার যোগাযোগ ক্ষেত্রে যে খালগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত তার সিংহভাগ এখন দখলদারদের কবলে পড়ে অস্তিত্ব হারিয়েছে। বাদবাকি অংশ দখল ও দূষণে পরিণত হয়েছে নোংরা নালায়। নদী, খাল, লেকসহ প্রাকৃতিক জলাশয় সুরক্ষায় বর্তমান সরকার আমলে অঙ্গীকারবদ্ধ ভূমিকা রাখার কথা বারবার বলা হলেও তা রক্ষায় কাক্সিক্ষত সাফল্য আসেনি বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলায়। গত ৮ বছরে ঢাকার ১১টি খাল নর্দমা আর ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ৩০-৩২ বছর আগেও ঢাকার প্রান্তসীমায় স্রোতবাহী যেসব খালে পণ্যবাহী বড় বড় নৌকার আনাগোনা ছিল, সে খালগুলো এখন দুই-আড়াই ফুট চওড়া নর্দমার আকার ধারণ করেছে।

ঢাকা ওয়াসার তথ্যানুযায়ী, দখলবাজদের আগ্রাসী থাবায় মাত্র ৩০ বছরেই অন্তত ৩৯টি খালের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এমনকি সরকারি ওই দপ্তরে খালগুলোর কোনো নথি নেই। ওয়াসার এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশেই প্রভাবশালী মহল বছরের পর বছর ধরে খাল দখলের মচ্ছব চালিয়ে আসছে। তারা প্রথমেই খালের নির্দিষ্ট কোনো পয়েন্টে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়। পরে বাঁধঘেঁষে রাতারাতি গড়ে তোলা হয় একের পর এক বস্তিঘর। ওয়াসা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে খালের মূল নথিপত্র বের করে সে আদলেই মালিকানা-সংক্রান্ত জাল কাগজপত্র বানিয়ে নেয় তারা। এর পরই বস্তিবাসীকে খালের অন্য অংশে সরিয়ে সে জায়গা প্লট আকারে বিক্রি করে দেয় প্রভাবশালী দখলবাজরা। রাজধানীর খাল, বিল, লেক, বিলঝিল ভরাট ও অপদখলের শিকার হওয়ায় পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। যে প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো মানুষের হৃদরাজ্য ভালো লাগার অনুভ‚তি সৃষ্টি করত সেগুলোর মধ্যে যেগুলো টিকে আছে তা মশা উৎপাদনের ক্ষেত্র হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে। দখল-দূষণে সেগুলোরও অস্তিত্ব এখন বিপন্নের পথে। রাজধানীতে মানুষ বসবাসের পরিবেশ টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশনের সুবিধা নিশ্চিত করতে অপদখলকৃত খালগুলো উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়া দরকার। যেগুলোর অস্তিত্ব এখনো কোনোরকমে টিকে আছে সেগুলোর সংস্কারও জরুরি। এ ব্যাপারে সরকার, সিটি করপোরেশন সবার অঙ্গীকারবদ্ধ ভ‚মিকা প্রত্যাশিত।

ঢাকার প্রাণ সঞ্চারকারী নদী বুড়িগঙ্গার সঙ্গে এক সময় সরাসরি নৌপথের সংযোগ ছিল ঢাকার বিভিন্ন খালের। পুরো ঢাকার জলযান যাতায়াত করত এসব খাল দিয়ে। কিন্তু সে দৃশ্য এখন কল্পনাতীত। আর হবেই বা না কেন, খাল কোথায়? চোখেই তো পড়ছে না। কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে তা নেই। যে কারণে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা হুমকির মুখে। পানি নিষ্কাশনের দুটি পথ রয়েছে। প্রথমত ভ‚গর্ভে পানি শোষণ করে নেয়া এবং অন্যটি খাল-বিল ও ড্রেন দিয়ে নদীতে চলে যাওয়া। রাজধানী ঢাকায় এই দুটি পথের একটিও কার্যকর নেই। যে কারণে জলাবদ্ধতা বাড়ছে। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে জনগণকে সম্পৃক্ত করে পরিকল্পিত উপায়ে সরকারকে খাল উদ্ধার করতে হবে।

খাল-দূষণে শীর্ণ রাজধানীর খালগুলো দিন দিন অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। ড্রেনের মতো বয়ে চলা এসব খাল একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ করছে, আবার এর ভেতরে পড়ে প্রাণহানির ঘটনাও কম ঘটছে না। মানুষের অসচেতনতার কারণে গৃহস্থালি ও শিল্প বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে রাজধানীর লেক ও খালগুলো। যে কারণে রাজধানীতে টানা বর্ষণে পানির প্রবাহ আটকে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য বৃদ্ধি করতে হবে জনসচেতনতা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে হতে হবে কর্মতৎপর। যতটুকু খাল রয়েছে সেগুলো উদ্ধার করেও যদি তা খালের আকার ধারণ করানো যায় তাহলেও কমবে জলবদ্ধতা। ঢাকাকে বাঁচাতে হলে দখলদারদের হাত থেকে খালগুলো উদ্ধার করে সেসব পুনর্খনন করতে হবে।

সহসভাপতি, এফবিসিসিআই

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App