×

মুক্তচিন্তা

বাঙালির মার্চ ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২০, ০৮:২৬ পিএম

বিগত শতবর্ষ ধরে বিশ্বব্যাপী যে মানুষের নামটি মৃত্যুর পর সর্বাধিক আলোচিত হয়েছে তিনি আর কেউ নন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা আমাদের ভালো ভালো কাজের দ্বারা এই মহামানবের জন্মোৎসবের আয়োজনকে যেন উজ্জ্বল করতে পারি। শত-সহস্র আবেগ নিয়ে মুজিববর্ষ উদযাপন করব ঠিকই কিন্তু বিতর্কিত ও দৃষ্টিকটু কোনো আয়োজনে মুজিববর্ষের একটি দিনও আমরা ক্লেদাক্ত করব না। এও যেন ব্রত হয় আমাদের সবার। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

৭ মার্চকে ‘জাতীয় দিবস’ হিসেবে পালনের জন্য মহামান্য উচ্চ আদালতের নির্দেশের ফলে এবারের মার্চ তাৎপর্যে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি এক রিটের শুনানিকালে আগামী এক মাসের মধ্যে ৭ মার্চকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রজ্ঞাপন জারি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণস্থলে ভাস্কর্য স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন মহামান্য উচ্চ আদালত। মুজিববর্ষ শুরুর প্রাক্কালে উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনামূলক রায় এবারের মার্চকে আরো ভিন্ন মর্যাদায় উন্নীত করল। ৭ মার্চের মতো এমন দিন বাঙালির জীবনে আর একটিও নেই। ভবিষ্যৎ বাঙালির জীবনে আর আসবে কিনা তা আমরা জানি না। বাংলাদেশ ও বাঙালির জীবনে মার্চ এক অনন্য মাসের নাম। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসকে পাল্টে দিয়ে নতুন মেরুকরণের জন্য মার্চ নানাভাবে বাঙালির চিত্তকে উদ্বেলিত করে- মথিত করে তোলে।

দিনপঞ্জিকার শতবর্ষের পাতা উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে দুর্দান্ত দাপটে এসেছে মার্চ মাস। ২০২০ সালের মার্চ মাস এসেছে বহু বর্ণিল পঞ্জিকা আর ক্যালেন্ডারের পাতায় পাতায়। বাঙালির জীবনে মার্চ মাস বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনায় দ্যোতিত হয়ে আসে। আপামর বাঙালি মার্চের উদ্দাম হওয়ায় যেন নৃত্যপর চঞ্চল হয়ে ওঠে। মার্চ আসে আগুন ঝরা বসন্ত বাতাস নিয়ে, মার্চ আসে বাঙালির ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তি ও স্বাধীনতার উচ্চকিত ঘোষণার ব্যঞ্জনা নিয়ে। মার্চ আসে সশস্ত্র সংগ্রামের উদ্দীপিত প্রেরণার শাশ্বত ঝঙ্কার নিয়ে। মার্চ আসে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনের শুভ বারতা নিয়ে। মার্চ আসে উত্তাল ঝড়ের উদ্দামতা নিয়ে।

এ রকম উদ্দামতার মার্চ এসেছিল ১০০ বছর আগে ১৯২০ সালে- শুরু সেদিন থেকেই। মার্চ আর মার্চে কী অদ্ভুত মেলবন্ধন! ১৯২০ সালের সেদিনের সেই মার্চ না এলে, ১৯৭১ সালের মার্চ সৃষ্টি হতো না। সৃষ্টি হতো না ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ, সৃষ্টি হতো না ২৬ মার্চও। শতবর্ষ আগে ১৭ মার্চ এসেছিল বলে আমরা পেয়েছি ৭ মার্চ, আমরা পেয়েছি ২৬ মার্চ। ৭ ও ২৬ মার্চ মিলে যৌবনের তেজোদীপ্ত সংগ্রামের পথ বেয়েই ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মুক্তি অর্জিত হয়েছিল। স্বাধীন ও সার্র্বভৌম রাষ্ট্র অর্জিত হয়েছিল। সাফল্য অর্জিত হয়েছিল ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- ৭ মার্চের এরূপ গর্বিত ঘোষণার। এবারের মার্চ ভিন্নতর দ্যোতনা নিয়ে এলো আমাদের জীবনে। একদিকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ অপরদিকে ৭ মার্চকে জাতীয় দিবস হিসেবে পালনের উচ্চ আদালতের নির্দেশনা। আমরা আবারো আবেগে উদ্বেল হলাম।

বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিন সামনে রেখে আমরা আবেগে উদ্বেল হলাম। বঙ্গবন্ধু এই বাংলায় জন্মেছিলেন বলে, বাঙালির সব দুঃখ-ব্যথার সঙ্গী ছিলেন বলে তাঁর জন্মদিনের উৎসব হয়ে উঠেছে সব বাঙালির সর্বজনীন উৎসব হিসেবে। বাংলাদেশে এবার মার্চ এসেছে বলে ক্যালেন্ডারের পাতাও উচ্চ নিনাদে ঘোষণা করে চলেছে অনবরত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম মাসের- জন্মশতবর্ষের উচ্ছ¡াস ও আনন্দ। মার্চ এখন কোনো এক বিশেষ মাসের ব্যাপ্তি ছাপিয়ে ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে বিস্তৃত ও নিনাদিত হয়ে পড়েছে সাধারণের অন্তরে অন্তরে। দশদিশি নিনাদিত হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর জন্মের শতবর্ষের বারতার নানামাত্রিক ব্যঞ্জনায়। কারণ এই মার্চেই এবার বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিন। এই মহাপুরুষের জন্মের শততম বর্ষের মাহেন্দ্রক্ষণ বলে মার্চ মাস আসার সঙ্গে সঙ্গে সর্বত্রই শুরু হয়ে গেছে অমিয় সংগীতের মহড়া। বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মোৎসব পালনের উদ্দীপনা সমগ্র বাঙালিকে উৎফুল্ল করে তুলেছে। বাংলাদেশের আকাশ-বাতাস বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের সংগীতের আবহে যেন নৃত্যপরা! রুনুঝুনু নূপুরের সুর যেন বেজে চলেছে সর্বত্র! শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্বের ১১৭টি দেশ বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিন উদযাপনের আয়োজনে আজ ব্যস্ত। তাই এবারের মার্চ ভিন্ন ব্যঞ্জনা ও দ্যোতনায় ভাস্বর।

আমরা সেই মাহেন্দ্রক্ষণের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে কেবল অপেক্ষার প্রহর গুনছি। সরকার আগেই ঘোষণা করেছে বঙ্গবন্ধুর জন্মের শততম বছরের দিন অর্থাৎ আসন্ন ১৭ মার্চ থেকে পরবর্তী এক বছর দেশব্যাপী এবং আন্তর্জাতিকভাবে উদযাপিত হবে ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে। সে লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দপ্তর, অধিদপ্তর ও সংস্থাগুলো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শুরু করেছে জনকল্যাণমুখী নানা ধরনের কর্মকাণ্ড; শুরু করেছে বিচিত্র অনুষ্ঠানের। ভূমিহীনকে ভ‚মি দান, গৃহহীনকে গৃহ দানসহ বিদ্যুৎহীন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ এগিয়ে চলছে মুজিববর্ষ সামনে রেখে। এসব সরকারের মহৎ উদ্যোগ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুকূল।

আমরা জানি, স্বাধীনতার মাত্র তিন বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধুসহ মুক্তিযুদ্ধের মূল নেতাদের হত্যা করা হয়। হত্যাকারীরা এ দেশে প্রতিক্রিয়াশীল ও এক অন্ধকার যুগের সূচনা করেছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালির হৃদয় থেকে তাঁকে একেবারে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তানি আদর্শের চেতনাপুষ্ট এ দেশীয় স্বার্থান্বেষী মহল। কিন্তু তাদের সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। নানারূপ ভয়ভীতি আর সামরিক অস্ত্রের মুখে বঙ্গবন্ধুকে ভুলিয়ে রাখার সেই অপচেষ্টা আমরা দেখেছি। একদা এ দেশেই বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ পর্যন্ত ছিল কঠিন অপরাধ! অথচ এই বাংলাদেশের বিনির্মাণের অনন্য শিল্পী ও স্থপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু আমরা এও দেখেছি যে, সময়ের ব্যবধানে, মহাকালের অমোঘ বিধানে এ দেশের মানুষ শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকেই মনে রেখেছে। পক্ষান্তরে মানুষ ভুলে গেছে ইতিহাসের কলঙ্কিত অপনায়কদের। এ দেশের ইতিহাস সেইসব লোভী ও স্বার্থান্বেষীদেরই নিক্ষেপ করেছে ক্লেদ-পঙ্কিল আঁস্তাকুড়ে। সব ষড়যন্ত্রের রাজনীতিকে ছাপিয়ে, সব অন্ধকার ইতিহাসকে ছাপিয়ে বঙ্গবন্ধুই দীপ্তিমান হয়ে উঠেছেন। আবার কেবল দীপ্তিমান হয়েই ক্ষান্ত হননি- বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও আদর্শ এখন অনেকেরই সাধনায় পরিণত। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে ‘অসমাপ্ত সোনার বাংলা’ বিনির্মাণের কাজ চলছে কালপার্বিক রোডম্যাপ মেনে চলে।

কিন্তু মুজিববর্ষ নিয়ে কিছু বাড়াবাড়ি ইতোমধ্যে অনেকের নজরে এসেছে। বাঙালির চিরকালের মহানায়ক, রাজনীতির মহাপুরুষ, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সরকার ঘোষিত মুজিববর্ষ আয়োজনকে সামনে রেখে এক শ্রেণির মানুষ নানারূপ ফন্দি-ফিকিরেও উঠেপড়ে লেগেছে বলে পত্র-পত্রিকায় খবর বেরোচ্ছে। এসব খবরে আমরা যারপরনাই বিমর্ষ বোধ করি। বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিবসের নানা অনুষ্ঠানের অজুহাতে যদি এ রকম একটি ঘটনা কোথাও ঘটে থাকে তবে এর চেয়ে দুঃখজনক বিষয় আর হতে পারে না! যে দেশের মানুষকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর উচ্চ আশার কোনো শেষ ছিল না সে দেশের মানুষই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। পৃথিবী অন্যান্য রাষ্ট্রের মানুষ ১৫ আগস্টের ঘটনায় বিস্মিত হয়েছে! যে বাঙালিকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আত্মবিশ্বাস, উচ্চাশা এবং অহঙ্কারের শেষ ছিল না তাদেরই উত্তরপুরুষের কেউ কেউ এবার মেতেছে মুজিববর্ষ উদযাপনের উসিলায় নিজেদের ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক ‘নাম’ কামানোর প্রতারণামূলক অনুষ্ঠান আয়োজনের।

এভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মোৎসব পালনের চেয়ে বরং তাঁকে পুনরায় হত্যাই করা হয়! মুজিববর্ষ নিয়ে কোনো ধরনের অনৈতিক, করপোরেট মনোবৃত্তির ব্যবসায়িক ফন্দি-ফিকির করা যাবে না। যারা এরূপ মানসিকতা লালনের মাধ্যমে মুজিববর্ষের আয়োজনে অংশ নিতে ইচ্ছুক সরকারের পক্ষ থেকেও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা থাকা জরুরি। এরূপ যে ঘটছে সে কথা স্পষ্ট হয়েছে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণায়। জাতীয় সংসদে মন্ত্রী-এমপিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে তিনি কঠোর বার্তা দিয়ে বলেছেন মুজিববর্ষ নিয়ে যেন ‘বাড়াবাড়ি’ করা না হয়। তাঁর কথায় এটিও স্পষ্ট হয়েছে যে, মুজিববর্ষ নিয়ে কোথাও কোথাও বাড়াবাড়ি হচ্ছে।

মুজিববর্ষ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে বক্ষে ধারণ করুন। যারা বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পশ্চাতে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা জানে না তাদের কাছে তাঁর অবদান তুলে ধরুন। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন সবাই মিলে সেই সোনার বাংলা গড়ে তোলার প্রত্যয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হোন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু বাঙালি ও বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর স্বপ্ন আজো মরেনি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই তাঁকে গভীরভাবে অনুভব ও উপলব্ধি সম্ভব। যারা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন অথচ বঙ্গবন্ধুকে ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবে মানেন না, ‘জাতির পিতা’ হিসেবে মানেন না তাদের জন্য ধিক্কারের ভাষা আমাদের জানা নেই। আদৌ তাদের ধিক্কার জানানোরও প্রয়োজন আছে বলেও মনে করি না! কারণ আমরা ইতিহাস থেকে যে শিক্ষা পেয়েছি তা হলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা এই বিশ্বভুবন থেকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা হলেও বাস্তবে দেখা গেছে যে, বিগত শতবর্ষ ধরে বিশ্বব্যাপী যে মানুষের নামটি মৃত্যুর পর সর্বাধিক আলোচিত হয়েছে তিনি আর কেউ নন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বিগত ১০০ বছরে মৃত্যুর পর যে মানুষটিকে জীবিতরা বেশি অভিষিক্ত করেছেন তিনি আর কেউ নন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। বাংলাদেশ ও বাঙালিকে যিনি কাতরে-অকাতরে নিঃস্বার্থ ভালোবেসে গেছেন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা আমাদের ভালো ভালো কাজের দ্বারা এই মহামানবের জন্মোৎসবের আয়োজনকে যেন উজ্জ্বল করতে পারি। শত-সহ¯্র আবেগ নিয়ে মুজিববর্ষ উদযাপন করব ঠিকই কিন্তু বিতর্কিত ও দৃষ্টিকটু কোনো আয়োজনে মুজিববর্ষের একটি দিনও আমরা ক্লেদাক্ত করব না। এও যেন ব্রত হয় আমাদের সবার। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

আহমেদ আমিনুল ইসলাম, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App