নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের নবনির্মিত ৯টি শিল্প কারখানা একসঙ্গে উদ্বোধন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এই ৯টি শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠায় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে ৯ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে জানানো হয়েছে।

শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মেঘনা ইকোনমিক জোনে ৩টি, মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে ৩টি, আনন্দবাজারে ২টি ও মেঘনাঘাটে অপর ১টি শিল্প কারখানার উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা এবং বাংলাদেশ ফেডারেশন অব চেম্বার এন্ড কমার্স (এফবিসিসিআই) এর প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল।

উদ্বোধন হওয়া শিল্প কারখানাগুলো হলো- মেঘনা সুগার রিফাইনারি লিমিটেড। জাপান, ফ্রান্স, থাইল্যান্ড, চীন এবং ভারতের সর্বাধুনিক মেশিনারি দ্বারা প্রস্তুত সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় এ কারখানায় বাংলাদেশে প্রথম দানাদার চিনির সঙ্গে তরল চিনি উৎপাদিত হচ্ছে। দৈনিক তিন হাজার ৫০০ টন উৎপাদনের ক্ষমতা সম্পন্ন এ শিল্পে এক হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি নেপাল এবং ভূটানে এ পণ্য রপ্তানি করা হবে।

সোনারগাঁ সীড ক্রাশিং মিলস্ লিমিটেড জার্মানি, সুইডেন, ব্রাজিল, ইটালি, চীন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র এবং থাইল্যান্ডের আধুনিক মেশিনারি দ্বারা প্রস্তুত বাংলাদেশের বৃহত্তম এ সীড্ ক্রাশিং মিলে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো লিকুইড লেসিথিনের পাশাপাশি পাউডার লেসিথিন এই কারখানা থেকে উৎপাদিত হচ্ছে, যা বেকারি, ঔষধ শিল্প কারখানা, ডেইরি এবং ফিডের অপরিহার্য উপাদান সামিল হিসেবে বিবেচিত। এর উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক পাঁচ হাজার ৫০০ টন। এখানে ৩০০ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ, ভারত এবং চীনে এ পণ্য রপ্তানি করা হবে।

মেঘনা বলপেন এন্ড এক্সেসরিজ এমএফজি লিমিটেড দক্ষিণ কোরিয়া, চীন এবং ভারতের আধুনিক স্বয়ংক্রিয় মেশিনে উন্নতমানের বলপেন তৈরির এ কারখানায় প্রতিদিন ৮ লাখ বলপেন উৎপাদিত হচ্ছে। দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি নেপাল এবং ভিয়েতনামে এ বলপেন রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। এখানে ৩০০ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

[caption id="attachment_205771" align="aligncenter" width="800"] মেঘলা গ্রুপের ৯টি কারখানার উদ্বোধন। ছবি: ভোরের কাগজ।[/caption]

মেঘনা নুডুলস এন্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরি লিমিটেড জাপান, টনি এবং ইউরোপের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে (state-of-the-art-technology) প্রস্তুত এ শিল্পে বাৎসরিক ৪০ হাজার টন বিস্কুট, এক হাজার ৯শ টন কেক, ২০ হাজার টন নুডুলস, ৪ হাজার টন ওয়েফার, ৮ হাজার টন চকলেট, ৪ হাজার টন প্রেস, ১২ হাজার টন চানাচুর, ৬ হাজার ৫০০ ক্যান্ডি ও ললিপপ তৈরি হচ্ছে। এখানে ৪ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।

সোনারগাঁ প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড চীন এবং ভারতের আধুনিক স্বয়ংক্রিয় মেশিনারি দ্বারা নির্মিত এ কারখানা মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সাকল শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রিন্টিং এবং প্যাকেজিং সল্যুশান হিসেবে কাজ করবে। দৈনিক ৪ লাখ ৪২ হাজার পিস কার্টুন ও প্যাকেজ উৎপাদনের ক্ষমতা সম্পন্ন। এই কারখানায় ৪৫০ জন লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।

ফ্রেশ ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রডস এন্ড ওয়্যার তুরস্ক, চীন এবং ভারত থেকে আমদানিকৃত সর্বাধুনিক মেশিনারি দ্বারা প্রস্তুত বাংলাদেশে প্রথম ওভেন সিস্টেম ওয়েল্ডিং ইলেকট্রডস (প্রতিমাসে ১০০ টন) ও ফ্লাথ কোর আর্ক ওয়েলিং ওয়্যার (প্রতিমাসে ৪০০ টন) এখানে তৈরি করা হচ্ছে। এখানে ১০০ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।

মেঘনা ফ্রেশ এলপিজি লিমিটেড সর্বাধুনিক ইউরোপিয়ান মেশিনারি দ্বারা স্থাপিত এ কারখানা এলপিজি সিলিন্ডার প্রস্তুত এবং এলপিজি বোতলজাত করার একক বৃহত্তম শিল্প প্রতিষ্ঠান। এখানে ১০ হাজার টন এলপিজি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন গুদাম রয়েছে, যা বাংলাদেশে এলপিজির বৃহত্তম স্টোর হাউজ হিসেবে বিবেচিত। এর উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিদিন ৩০০ টন এবং ১২ কেজি পরিমাণ সিলিন্ডার দৈনিক ৪ হাজার পিস্। এখানে ৩৫০ জন লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।

সোনারগাঁও শিপ বিল্ডার্স এন্ড ইয়ার্ড লিমিটেড নৌ-পথে পণ্য পরিবহণ সুগম রাখার জন্যে ইউরোপের এবং চীনের সর্বাধুনিক মেশিনারি দ্বারা নির্মিত এ কারখানায় ৫ হাজার ডিডাব্লিউটি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন অয়েল ট্যাংকার, কার্গো শিপ, বাল্ক শিপ, গ্যাস শিপ, কন্টেইনার শিপ প্রভৃতি তৈরি করা হয়েছে। দেশীয় চাহিদার পাশাপাশি ইউরোপে এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এ জাহাজ রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। এখানে দেড় হাজার দক্ষ জনবলের কর্মসংস্থান হয়েছে।

ফ্রেশ সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (ইউনিট-২) জার্মানীর সর্বাধুনিক মেশিনার দ্বারা সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নির্মিত এ কারখানায় উন্নত মানসম্পন্ন পরিবেশবান্ধব সিমেন্ট উৎপাদিত হচ্ছে। এখানে দৈনিক ১০ হাজার টন সিমোট উৎপাদনসহ এক হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে এ সিমেন্ট। দেশীয় চাহিদার যোগান শেষে ভারতেও রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।