×

মুক্তচিন্তা

বায়ুদূষণের প্রভাব ও প্রতিকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:১৯ পিএম

সময়ের বহুল আলোচিত একটি বিষয় হচ্ছে বায়ুদূষণ যা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক হারে বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়ার হেলথ ইফেক্ট ইনস্টিটিউট ও ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস এন্ড ইভ্যালুয়েশন ২০১৯, বৈশ্বিক বায়ুদূষণের ঝুঁকিবিষয়ক শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, বিশ্বের যে পাঁচটি দেশের শতভাগ মানুষ দূষিত বায়ুর মধ্যে বসবাস করে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আর বায়ুদূষণজনিত মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম। ২০১৪ সালের (ডঐঙ)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১২ সালে বায়ুদূষণে সারা বিশে^ ৭ মিলিয়ন মানুষ মারা গেছে। ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বারবারই সতর্ক করেছে। আরেকটি সংস্থার জরিপ বলছে, চলতি বছরে বায়ুদূষণের প্রভাবে বিশ্বের প্রায় ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটতে পারে। সেইসঙ্গে বায়ুদূষণ অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রগুলোতে সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করেছে। চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া এবং রাজশাহী অঞ্চলের নগর এলাকাগুলোতে বায়ুদূষণের স্বাস্থ্যগত প্রতিক্রিয়া ঢাকার তুলনায় কম। পৃথিবীর সব দেশে বা সব স্থানে নগরায়ন ও শিল্পায়নের হার বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে পরিবেশ দূষণ বেড়েছে বহুগুণে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, পৃথিবীর শতকরা প্রায় ৯১ ভাগ মানুষ নির্মল বায়ু সেবন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩৩ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হলো বায়ুদূষণ, এসবের মাঝে ৭৫ শতাংশ মৃত্যুই ঘটে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক থেকে, বাকি ২৫ শতাংশ হয় ফুসফুসের রোগে। শুধু তাই নয়, এত মৃত্যুর ৭৫ শতাংশ ঘটে এশিয়া মহাদেশে, যেখানে বায়ুদূষণের মাত্রা ভয়াবহ বিশেষ করে চীন এবং ভারতে। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা এ ব্যাপারটাকে আরো শক্তপোক্ত করেছে যে দূষিত বায়ু বেশ কিছু দিক দিয়ে আমাদের ক্ষতি করতে সক্ষম। যেমন শুক্রাণুর ক্ষতি, জন্মগত ত্রুটি স্ট্রোকের ঝুঁকি, কিডনির রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি। বায়ুদূষণ মানসিক সমস্যাও বাড়ায়। দেখা যায়, বায়ুদূষণের পরিমাণ যত বেশি হয়, মানুষের হতাশা, বিষাদ, অস্থিরতা এবং অন্যান্য নেতিবাচক অনুভ‚তির প্রকোপ ততই বেশি হয়। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন থেকে জানা যায়, দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেয়ার ফলে হতে পারে হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন রোগ। অ্যালকোহল, কফি যেভাবে হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী, বায়ুদূষণও সেভাবেই দায়ী, ৫-৭ শতাংশ হার্ট অ্যাটাকের পেছনে বায়ুদূষণকে দায়ী করা যায় বলেন গবেষকরা। দূষিত বায়ুর কারণে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এ থেকে ক্যান্সার হতে পারে, যা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। তীব্র বায়ুদূষণের সাথে মানুষের বুদ্ধি কমে যাবার সম্পর্ক থাকতে পারে বলে এক নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণাটি যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন যৌথভাবে চীনে চালিয়েছে। বায়ুদূষণের সঙ্গে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ার বেশ গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের এক নতুন গবেষণা থেকে জানা যায়। বায়ুদূষণের ফলে শুধু স্বাস্থ্যের ক্ষতি নয়, পরিবেশ এবং সম্পদও নষ্ট হয়। বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তর পাতলা হয়ে যায়, ফলে এর প্রভাব পড়ে জলবায়ুর ওপর এবং তা বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমান বায়ুদূষণের বিষয়টিতে বিশ্বেও সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সবাই বুঝতে শিখেছে বায়ুদূষণ একটি ভয়াবহ আতঙ্ক। তবুও জনগণের সচেতনতার পর্যায় কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অবধি পৌঁছতে পারেনি। বায়ুদূষণ প্রতিরোধে সরকার, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, অন্যান্য সংস্থা ও জনগণ সমন্বিত উদ্যোগ নিলে সুফল বয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। জাতীয়ভাবে পরিবেশ রক্ষার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত, সচেতন হওয়া উচিত। সর্বোপরি, পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App