×

শিক্ষা

ইবিতে ‘শব্দসন্ত্রাস’ পড়ালেখায় বিঘ্ন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৪:১৩ পিএম

ইবিতে ‘শব্দসন্ত্রাস’ পড়ালেখায় বিঘ্ন
ইবিতে ‘শব্দসন্ত্রাস’ পড়ালেখায় বিঘ্ন

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল ছবি

ইবিতে ‘শব্দসন্ত্রাস’ পড়ালেখায় বিঘ্ন

শিক্ষার্থীদের ভুভুজেলা উৎসব।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শব্দ দূষণের মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনযোগা হারাচ্ছেন। অনেকেই শারীরিক-মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। বর্তমানে ইবিতে পুরোদমে চলছে মেগা প্রকল্পের কাজ। ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, মীর মশাররফ হোসেন ভবন, এস ওয়াজেদ আলী বিজ্ঞান ভবন সহ কয়েকটি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ চলছে হরদম। ভবনের উপরে শ্রমিকদের কাজে ঠুকঠাক, পাশে ইট ভাঙার শব্দ, নিচে কয়েকটি অনুষদের শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা। ব্যাপক শব্দ দূষণের কারনে শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠে মন বসাতে পারেন না বলে অভিযোগ অধিকাংশ শিক্ষার্থীর। আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাখি বলেন, ক্যাম্পাসের উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে, খুব ভালো লাগছে। কিন্তু অতিরিক্ত শব্দের ফলে আমরা ক্লাসে মন বসাতে পারি না। অতিরিক্ত শব্দের কাজগুলো ক্লাস টাইমে না করে যদি অন্য টাইমে করা হয় তাহলে আমাদের এ দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনের মধ্যে রয়েছে ইবি প্রেসক্লাব, ইবিসাস, কেন্দ্রীয় ক্যাফে, ডিবেটিং সোসাইটি, রোভার স্কাউট সহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের অফিস। যার সামনে প্রায় বছরব্যাপী চলছে বিভিন্ন অফিস ও বিভাগগুলোর চেয়ার- টেবিলের প্রস্তুতকাজ। এসব প্রস্তুত কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রের শব্দে ব্যহত হচ্ছে সংগঠনগুলোর দৈনন্দিন কার্যক্রম। রোভার স্কাউট গ্রুপের সহ-সভাপতি শামিমুল ইসলাম সুমন বলেন, টিএসসিসি হলো মুক্তজ্ঞান চর্চা অন্যতম স্থান। সেখানে মাসের পর মাস কাঠের বিভিন্ন সামগ্রি তৈরির কাজ চলছে। অতিরিক্ত শব্দ দূষণের কারণে আমরা ঠিকমতো মিটিংগুলোও করতে পারিনা। কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল ক্যাম্পাসের কোন একপাশে এ কাজটি করা। এ বিষয়ে স্টেট (সম্পত্তি) অফিসের প্রধান সাইফুল আলম বলেন, আমরা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এটির কাজ কেন্দ্রীয় মসজিদের নিচে নিয়ে করব। মসজিদের কাজ চলমান থাকায় আমরা এখানে করেছি। সম্প্রতি বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা হইহুল্লোড়ে মেতে উঠে, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে দিনব্যাপী র‌্যাগ ডে-র‌্যাম ডে পালন করছেন। এসময় তারা উচ্চস্বরে ভুভুজেলা, বাঁশি বাজিয়ে, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সমস্ত ক্যাম্পাসে এক আড়ম্বরপূর্ণ উৎসবে মেতে ওঠেন। ব্যাপক শব্দ দূষণের কারনে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেয়া অন্যদের জন্য যা অধিক বেদনাদায়ক এবং কষ্টকর বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এদিকে কেন্দ্রীয় ক্রিকেট মাঠে বর্তমানে চলছে বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিভাগ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। খেলায় বিভিন্ন রাউন্ডে বিজয়ী বিভাগ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নিজ বিভাগে পৌঁছায়। এসময়ও তারা উচ্চশব্দে মিছিল নিয়ে, ভুভুজেলা বাজিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন। যা শব্দ দূষণের অন্যতম কারণ। সন্ধ্যা নামলেই আবাসিক হলগুলোতে কিছুদিন পরপর চলে উচ্চ শব্দে গান-বাজনা। হল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে গভীর রাত অবধি কিছু শিক্ষার্থীরা এ গান-বাজনা চালিয়ে থাকে। এতে হলে অবস্থানরত অন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার ব্যাঘাত ঘটে বলে অভিযোগ করেন অধিকাংশ সচেতন শিক্ষার্থী। [caption id="attachment_205576" align="aligncenter" width="1280"] শিক্ষার্থীদের ভুভুজেলা উৎসব।[/caption] তারা জানান, হলগুলোতে সাধারণত নবীন বরণ-প্রবীণ বিদায় সহ বিভিন্ন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং আমরাও সেখানে অংশ নেই। কিন্তু উচ্চ শব্দে গান-বাজিয়ে নেচে-গেয়ে হইহুল্লোড়ে মেতে উঠে অন্য শিক্ষার্থীদের কষ্ট দেয়া ঠিক না। হল কর্তৃপক্ষের উচিত এসব বন্ধ করা। জানতে চাইলে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার জোদ্দার বলেন, আমার এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ দেয়নি। শিক্ষার্থীরা কোন প্রোগ্রাম করতে চাইলে হল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই করতে হবে। আগামী প্রভোস্ট কাউন্সিলের মিটিংয়ে আমি এব্যাপারে নির্দেশ দিব।’ অতিরিক্ত শব্দ দূষণের প্রভাব মানুষের ওপর মারাত্বকভাবে পতিত হয় বলে জানালেন ইবির ভারপ্রাপ্ত চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শব্দদূষণের কারণে শ্রবণশক্তি হ্রাসের পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্য এবং আচার-আচরণ উভয় ক্ষেত্রেই সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত শব্দের কারণে মানুষের শারীরিক ও মানষিক কার্যকলাপ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। পাশাপাশি দুশ্চিন্তা, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে মানবদেহে। অতিরিক্ত শব্দের দূষণের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদীও হতে পারে।’ ইবি ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান বলেন, ক্লাস টাইমে ভবনগুলোর উপরে উচ্চ শব্দে কাজ না করার ব্যাপারে আমি কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো। ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাজানো যাবে না এবং এগুলো বাজিয়ে, মিছিল নিয়ে একাডেমিক ভবনগুলোতে প্রবেশ করতে পারবে না শিক্ষার্থীরা। আমরা এব্যাপারে নোটিশ ইস্যু করতে পারি এবং ক্যাম্পেইনের ব্যবস্থা করতে পারি। র‌্যাগ ডে-র‌্যাম ডে-ব্যাচ ডে’র ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এ কালচারটা আমরা আগামী বছর থেকে বন্ধ করব। উপাচার্য স্যারের সাথে এব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। প্রতিবছর কেন্দ্রীয়ভাবে একটিমাত্র ডে পালিত হবে।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App