×

মুক্তচিন্তা

মানুষের অস্বস্তি বাড়াবেন না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৬:২৬ পিএম

বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের পক্ষ থেকে মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পাইকারি দাম ইউনিটপ্রতি গড়ে ৪০ পয়সা এবং খুচরা ৩৬ পয়সা বাড়ানোর আদেশ কার্যকর হবে ১ মার্চ থেকে। বিদ্যুতের দাম বাড়ার প্রভাব পড়বে শিল্প উৎপাদনে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে। এই দাম বাড়ার কারণে গ্রাহকদের কাছ থেকে বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বাড়তি আদায় করা হবে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় চলছে আগে থেকেই। এ নিয়ে গণশুনানি হয়েছে। শুনানিতে অংশগ্রহণকারীদের কেউ বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেননি, দাবি করেননি। বরং দাম বাড়লে কী কী সমস্যা হবে, ক্ষতি হবে সেসব যুক্তিতর্কই হয়েছে। বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর সব যুক্তি, অনুরোধ, দাবি উপেক্ষা করা হলো। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় শিল্পকারখানায় সংকট দেখা দেবে, নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের ওপর চাপ বাড়বে। এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী। চাল-ডাল-তেলসহ অনেক কিছুরই দাম বেড়েছে। ফলে মানুষের ব্যয় বেড়েছে, বাড়ছেই। সব মানুষের আয় কিন্তু সে অনুপাতে বাড়ছে না, বাড়েনি। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অস্বস্তি আছে। আছে ক্ষোভও। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিদ্যুৎ খাতে যে বিরাট অনিয়ম ও দুর্নীতি তা বন্ধ করতে পারলেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না। দুর্নীতি-অনিয়ম দূর বা দমন করা সহজ কাজ নয়। তাই দাম বাড়ানোর সহজ পথটিই গ্রহণ করা হলো। কিন্তু এই সহজ পথ অনুসরণের ফলে মূল্যবৃদ্ধির চাপটি সাধারণ মানুষকেই বহন করতে হবে। এর আগে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছিল ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে। মার্চ মাস থেকে নতুন মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর হলে সরকার কতটা লাভবান হবে, সেটা আমরা জানি না। তবে এর ফলে মানুষ যে সরকারের প্রশংসা করবে না সেটা বলাই যায়। ব্যাপক আয়োজনে মুজিববর্ষ উদযাপনের ক্ষণগণনা যখন চলছে, তখন বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সরকার খুব সুবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে বলে মনে হয় না। মানুষের কাছে এই ভুল বার্তা পৌঁছতে পারে যে, সরকার জনগণের পকেটে হাত দিয়ে মুজিববর্ষ উদযাপনের ব্যয় নির্বাহ করবে! সরকারের সিদ্ধান্ত বরং এটাই হওয়া উচিত ছিল যে, ‘মুজিববর্ষে কোনো মূল্যবৃদ্ধি নয়, মানুষের ওপর কোনো চাপ নয়’। সঠিক পরিকল্পনা ও আন্তরিকতা থাকলে বিদ্যুৎ যে বিনামূল্যেও ভোক্তাদের দেয়া যায় সেটা দেখিয়েছেন ভারতের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কোথাও থেকে কোনো ভালো দৃষ্টান্ত গ্রহণে আমাদের উদ্যোগ নেই। আমরা কুযুক্তিতে পারদর্শী। মানুষ সেবা নেবে, সেটা কেন বিনামূল্য বা ভর্তুকি দামে? আমাদের যুক্তি এ রকম। আমরা চোখের সামনেরটা অকারণ বড় করে দেখি। কিন্তু একটু দূরের অনেক বড়টাও আমাদের চোখে ছোট লাগে। সরকার সমর্থক নিচের দিকের দুই নেতা বাসায় ‘টাকার গুদাম’ বানিয়ে ফেলতে পারেন, একজন নারীনেত্রী একটি পাঁচতারা হোটেলে অনৈতিক কাজের ‘মহল’ বানাতে পারেন এসব ঘটনায় সরকার বিব্রত হয় কিনা আমরা জানি না। তবে আমরা বিব্রত। এভাবে চলতে পারে না, চলতে দেয়া উচিত নয়। সরকার কোষাগার পূর্ণ করবে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে, পানির দাম বাড়িয়ে আর একদল দুর্বৃত্ত ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান গিলে খাবে, নিজেদের জিল্লা-তরক্কি বাড়াবে, সেটা কি করে মেনে নেয়া যায়? দুই. বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন হাইকোর্ট আবারো বাতিল করেছেন। হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ মিলিয়ে চারবার খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন বাতিল হলো। শেষবার গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জামিন আবেদন খারিজ করে উচ্চ আদালত বলেছেন, খালেদা জিয়া একজন বন্দি এবং দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। একজন সাধারণ মানুষের মতো সুযোগ-সুবিধা একজন বন্দি পেতে পারেন না। তবে তিনি (খালেদা জিয়া) উন্নত চিকিৎসার জন্য সম্মতি দিলে, তা হতে পারে। তিনি সম্মতি দিলে মেডিকেল বোর্ডকে দ্রুত চিকিৎসা দিতে বলেছেন আদালত। শোনা যাচ্ছে, জামিন সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে অসম্মতি জানিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। আইনি লড়াই করে তাদের নেত্রীকে যে মুক্ত করা সম্ভব নয় এটা ভালোভাবেই বিএনপির আইনজীবীরা বুঝেছেন। আবার আইনি ব্যবস্থা ছাড়া তাদের সামনে কোনো পথও নেই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মনে করেন, সরকারের ইচ্ছার বাইরে কিছুই হচ্ছে না। পুরোটাই রাজনৈতিক বিবেচনায় হচ্ছে। সর্বশেষ জামিন আবেদন বাতিল হওয়ায় বিএনপির মধ্যে চরম হতাশা নেমে এসেছে। সরকার যে খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রশ্নে শক্ত অবস্থানেই আছে এটাও তাদের বোঝা হয়ে গেছে। বেগম জিয়া নিজে প্যারোলে মুক্তির দাবি না জানালে সরকারের দিক থেকে নমনীয়তা দেখানো হবে না। প্যারোলে মুক্তির কথা একাধিকবার সামনে এসেছে। কিন্তু নানা গুজব-আলোচনার মধ্য দিয়ে প্রতিবারই প্যারোল-প্রসঙ্গের সমাপ্তি ঘটেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে টেলিফোনে কথাও বলেছেন। তবে তারা কী কথা বলেছেন, সেটা নিয়ে পরে আবার কিছু বিতণ্ডাও হয়েছে। বিএনপি খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে। তারা সরকারের কাছে একটা ‘স্পেস’ চায় কিন্তু সেটা আবার প্রকাশও করতে চায় না। কিছুটা রাজনৈতিক সুবিধা না পেলে দলটি ‘সবহারা’ অবস্থায় চলে যায়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও বিএনপিকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়ার অবস্থানে নেই। বিএনপির এতদিনের রাজনীতি ছিল মূলত আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিহিংসামূলক। তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে শত্রু র মতো আচরণ করেছে। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করাই ছিল বিএনপির টার্গেট। এখন রাজনীতিতে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগ বদলা নেয়ার নীতি অনুসরণ না করলেও বিএনপিকে কোনো ধরনের ছাড় দিতে আগ্রহী নয়। খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ অতীত বক্তব্য নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগকে এখনো তাড়া করে। তাই রাজনৈতিকভাবে মিলমিশের জায়গায় নেই দল দুটি। বিএনপিকে অতীত ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে এখন। এটা স্পষ্ট যে, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে মুক্ত হতে হলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে নিজেকেই। তিনি নিজে যদি প্যারোলে রাজি হন তাহলেই হয়তো সরকার বিষয়টি সহানুভ‚তির সঙ্গে বিবেচনা করবে। বিএনপির রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক দুর্বলতা আওয়ামী লীগের জানা। কথার হুল ফুটিয়ে আওয়ামী লীগকে ঘায়েল করার সুযোগ বিএনপির নেই। প্যারোলে মুক্তির প্রশ্নে বিএনপিতে বরাবরই দুই মত। একপক্ষ প্যারোলবিরোধী। আরেক পক্ষ যে কোনো উপায়ে তাকে কারামুক্ত করতে চায়। খালেদা জিয়ার পরিবারও এখন তার মুক্তিকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তবে খালেদা জিয়া নিজে এখনো প্যারোলবিরোধী। তিনি অপরাধ স্বীকার করে সরকারের কাছে দরখাস্ত করে মুক্তি চান না। তিনি মনে করেন, এভাবে মুক্ত নিলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বলে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। তিনি আপসহীন নেত্রীর ইমেজ হারাতে চান না। বিএনপি আন্দোলন করে তাকে মুক্ত করে আনতে পারবে না এই সত্যটাও এখন স্পষ্ট। তাই প্রশ্ন হলো, কী করবে এখন বিএনপি? কী করবেন বেগম জিয়া নিজে? বিভুরঞ্জন সরকার : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। নরনযঁ৫৪@ুধযড়ড়.পড়স

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App