×

সারাদেশ

ধান কেনায় সিন্ডিকেট, বঞ্চিত কার্ডধারী চাষীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৫:৪২ পিএম

ধান কেনায় সিন্ডিকেট, বঞ্চিত কার্ডধারী চাষীরা

ধান বেচাবিক্রি। প্রতীকী ছবি।

চরফ্যাশন উপজেলার দুটি খাদ্যগুদামে ৬ হাজার ৮শ টন ধান কেনার প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও এখানে সাধারণ কৃষকেরা ধান বিক্রি করতে পারছেন না। গুদাম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রভাবশালীদের নিয়ে গড়ে উঠা সিন্ডিকেটের সমঝোতায় সাধারণ কৃষকরা সরকার নির্ধারিত দামে ধান বিক্রির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

সিন্ডিকেট সদস্যদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে গুদাম কর্তৃপক্ষ কৃষকদের থেকে লাখ লাখ টাকা উপরি হিসেবে হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ কৃষক গুদামের ধানক্রয় প্রক্রিয়ার মাঠ পর্যায়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

খাদ্যগুদামের দেয়া তথ্যানুযায়ী, সরকার নির্ধারিত প্রতিকেজি ধান ২৬ টাকা মূল্যে শশীভূষণ খাদ্যগুদামে ৩ হাজার ২শ ৫২ টন এবং মুখারবান্দা খাদ্যগুদামে ৩ হাজার ৫শ ৯৬ টন ধান ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে এই ধান কেনা শুরু হলেও বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত শশীভূষণ খাদ্যগুদামে এক হাজার ৭৫০ টন এবং মুখারবান্দা খাদ্যগুদামে এক হাজার ৫৩৯ টন ধান কেনা হয়েছে। ধান কেনা চলবে শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দিনভর। শশীভূষণ খাদ্যগুদাম এলাকার নির্বাচিত এক হাজার ১০০ এবং মুখারবান্দা খাদ্যগুদাম এলাকার ১ হাজার ১৫০ জন কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার কথা রয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিকে নিয়ে গড়ে উঠা একটি সিন্ডিকেটের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে টনপ্রতি ৩ হাজার টাকা উপরী নিয়ে সিন্ডিকেট থেকেই এই ধান কিনে গুদামজাত করছে। ফলে স্থানীয় কৃষকরা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ২৬ টাকা কেজি মূল্যে গুদামে ধানবিক্রির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

কৃষকদের অভিযোগ, হাতে গোনা কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি গুদামে ধানবিক্রির সুযোগ নিয়েছে। এসব প্রভাবশালী ব্যক্তি গুদামে একশ থেকে দেড়শ বা ২শ টন করেও ধান দিচ্ছে। ভোলা জেলার বাইরের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কিনে গুদাম এলাকার বিভিন্ন মাঠে রেখে প্রক্রিয়া শেষে সিন্ডিকেটের সদস্যরা ধানগুলো গুদামে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। ফলে স্থানীয় কৃষকরা সরাসারি গুদামে ধান বিক্রির সুবিধা হারাচ্ছেন। এমনকি একটু বাড়তি দামে সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছেও ধানবিক্রির সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন কৃষকরা।

শশিভূষণ থানার এওয়াজপুর ইউনিয়নের মৌসুমী লটারির মাধ্যেমে নির্বাচিত কৃষক কামাল হোসেন জানান, আমার নামের কৃষিকার্ড স্থানীয় আলতাফ হোসেন নামের এক ব্যক্তি নিয়ে গেছে। আমিও আমার উৎপাদিত ধান ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারিনি।

কৃষিকার্ড প্রাপ্ত কৃষক কবির হোসেন জানান, কৃষিকার্ড থাকা সত্ত্বেও আমার ধান গুধামে বিক্রি করতে পারিনি। স্থানীয় নেতারা প্রকৃত কৃষকের ধান ক্রয় না করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয় করছেন। প্রকৃত কৃষকরা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

চরফ্যাশন মুখারবান্দা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শৈলেন চন্দ্র দাস জানান, উপজেলা পরিষদ থেকে লটারির মাধ্যেমে কৃষক নির্ধারণ করে যে তালিকা দেয়া হয়েছে সে তালিকা অনুযায়ী খাদ্যগুদাম ধান ক্রয় করছে।

উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, খাদ্যগুদামের চাহিদার তুলনায় ধান উৎপাদন বেশি হয়েছে। তাই সব কৃষিকার্ড প্রাপ্ত কৃষক থেকে ধান কেনা সম্ভব হচ্ছে না। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয় করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লটারিতে কৃষক নির্ধারণ করেই ন্যায্য মূল্যে ধান কেনা হচ্ছে। লটারিতে নির্ধারিত কৃষকদের মধ্যে থেকেও অনেক কৃষকের ধান কেনা যাচ্ছে না বলে বঞ্চিত কৃষকরা এমন অভিযোগ তুলছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App