×

সাময়িকী

জলশিশু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০২:২৪ পিএম

জলশিশু

তার সেবিকা চিৎকার শুনে ঘরে চলে এল। টমকে চোর মনে করে চেপে ধরল।টম অনেকবার পুলিশের হাতে পড়েছে এবং সেখান থেকে বের হয়েছে। তাই মহিলাটির হাত থেকে তার ছোট্ট শরীরটা মোচড় দিয়ে বের করে নিয়ে আসতে কষ্ট হলো না। সে জানালার দিকে ছুটে গেল। জানালাটার নিচে একটি ম্যাগনোলিয়া গাছ। লাফ দিয়ে গাছের ডাল ধরে মুহূর্তে নিচে নেমে গেল সে। তারপর লনের মধ্য দিয়ে, গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে দৌড়ে চলে যেতে লাগল। চাকর-বাকরেরা বের হয়ে ‘চোর চোর’ বলে ধাওয়া করল তাকে।

যদিও টম কখনও জঙ্গলে ছিল না, তবু সে এটা বুঝে গেল যে গাছ এবং জঙ্গল তাকে লুকিয়ে পড়ার জন্য যথেষ্ট সাহায্য করবে। কিন্তু সে যখন জঙ্গলে ঢুকল তখনই সে নিজেকে একটি কাঁটাময় ঝোপের ভেতর আবিষ্কার করল। তার গতি কমিয়ে দিতে লাগল কাঁটাগুলো। এত বাধার পরও সে প্রাণপণে একটা দেয়ালের দিকে ছুটে গেল। তার মাথায় তখন প্রচণ্ড ব্যথা। তবুও ওই দেয়ালটি বেয়ে উঠে অপর পাশে লাফ দিল। টম দৌড়ে মাঠ পেরিয়ে অনেক দূরের এক জায়গায় পৌঁছাল। যারা তাকে ধাওয়া করেছিল, তারা পড়ে রইল অনেক পেছনে। কেবলমাত্র আইরিশ মহিলা দেখল, টম কোন্দিকে গেল। সে সবাইকে দেখতে পায়। মাঠের ওপর দিয়ে তার পা এত দ্রæতগতিতে ছুটে চলেছে, যেন বাতাসে ভেসে যাচ্ছে। সে টমকে দেয়ালের ওপর থেকে অনুসরণ করে আসছে। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা সবাইকে অনেক পেছনে ফেলে এক জায়গায় উপস্থিত হলো।

৩. টম ক্ষুধার্ত এবং তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ল। কারণ সে অনেক দূর চলে এসেছে। তার খালি পা ছিঁড়েছুড়ে গেছে। সূর্য মাথার ওপর। বাতাস গরম হয়ে উঠেছে। এসব কিছু তাকে অস্থির করে তুলল। তখন তার মনে হলো কোথাও গির্জায় ঘণ্টা বাজছে। সে ভাবল, তাহলে কাছেপিঠে অবশ্যই মানুষ আছে। কারও কাছ থেকে কিছু খাবার পাওয়া যেতে পারে। পাহাড়ের ওপর থেকে সে হার্থোভার দেখতে পেল। আরও দেখতে পেল ঘন জঙ্গল এবং নদী। বামপাশে দেখতে পেল ধোঁয়া নির্গমনের চিমনিসমৃদ্ধ শহর। নদীটি বয়ে চলে বহু দূরের সমুদ্রের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য। তার সামনে একটি মানচিত্র খুলে আছে, যেখানে সে দেখতে পাচ্ছে খামার, সমতলভ‚মি এবং গ্রাম। আরও দেখতে পেল গুচ্ছ গুচ্ছ ঘন বনের ছবি এবং পাহাড়। তার সামনে একটির পর একটি ভেসে উঠতে লাগল। তার মনে হলো সব গিয়ে নীলাকাশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে টম এবং সমতলভ‚মির মাঝখানে এমন একটি জিনিস আছে, যা সে এইমাত্র লক্ষ করল। সঙ্গে সঙ্গে সে সিদ্ধান্ত নিল সেখানে যেতে। এটি একটি নিচুু সবুজ উপত্যকা। তার ওপর দিয়ে একটি রুপোলি জলের ধারা বয়ে চলেছে। তখনই মনে মনে সে নেমে পড়তে চাইল ওই নদীতে। নদীর পাড়ে সে একটি ছোট্ট কুঁড়েঘর দেখতে পেল। ঘরটির পাশে একটি বাগানও আছে। একটি ছোট্ট লাল বিন্দু ওই ঘরে চলাফেরা করছে। টম কাছে গিয়ে দেখল ওই লাল বিন্দু আসলে লাল পেটিকোট পরা একজন মহিলা। তার কানে আবার চার্চের ঘণ্টাধ্বনি আসল। সে ভাবল গ্রামে নেমে যাওয়া তার জন্য নিরাপদ হবে। হার্থোভার থেকে তার পালিয়ে যাওয়ার খবরটি এখনও সেখানে পৌঁছেনি। সে নিশ্চিত যে পাঁচ মিনিটের মধ্যে সে গ্রামটিতে পৌঁছাতে পারবে। সে নামতে শুরু করল। যদিও তার পা এবং শরীরের সমস্ত হাড়ে ব্যথা। তবু সে চলতে লাগল। সে জানত না যে কুটিরটি কাছে মনে হলেও ওটি কমপক্ষে এক মাইলের মতো দূরে হবে। নামতে হবে হাজার ফুটের মতো। টম পাথরে, জঙ্গলে হোঁচট খেয়ে, পিছলে পড়ে আস্তে আস্তে নামতে লাগল। যেসব ঢালগুলো ছোট ছোট ঔষধি গাছ ও ফুলে ভরা, সেসব জায়গা দিয়ে সে নামছে। আরও নিচে খাড়া পাহাড়, বড় পাথরের চাঁই। তার ভেতর দিয়ে বয়ে চলেছে ঝকমকে জলের ধারা। সে ভয়ানক ক্লান্ত হয়ে পড়ল। সে উপত্যকার পাদদেশে পৌঁছাল। সে নিজেকে খুব দুর্বল ও রিক্ত মনে করল। এখন তার এক পা-ও এগুনোর মতো অবস্থা আর রইল না। দীর্ঘক্ষণ সে আর নড়তে পারলও না। তারপর সে একটি ছোট দেয়াল পার হয়ে কুটিরের দুয়ারে উপস্থিত হলো। ঘরের ভেতর উঁকি দিয়ে দেখল, আগুনের পাশে এক বৃদ্ধ মহিলা বসে আছেন। এমন সুন্দর মহিলা জীবনে সে আর দেখেনি। তিনি একটি লাল পেটিকোট এবং সাদা টুপি পরে আছেন। তার পায়ের কাছে বসে আছে একটি বড় বিড়াল। তার সামনে দুটো বেঞ্চে বারো-চৌদ্দজন পরিচ্ছন্ন, কোমল শিশু পড়ছে। মনে হচ্ছে যেন তারা হাসছে। ছেলেরা টমের ময়লা চেহারার দিকে তাকাল। কিন্তু টম এতই ক্লান্ত ছিল যে তাতে ভ্রুক্ষেপ করতে পারল না। ‘তুমি কে? কী চাও?’ বৃদ্ধ চিৎকার করে বললেন। টম ক্ষীণস্বরে বলল, ‘পানি।’ ‘পানি! তোমার পেছনে প্রচুর পানি আছে।’ তিনি বললেন। ‘কিন্তু আমি সেখানে যেতে পারছি না, পানি!’ বলতে বলতে টম দরজার সামনে পড়ে গেল। ‘পানি তোমার জন্য ভালো হবে না। আমি তোমাকে দুধ দিচ্ছি।’ বলতে বলতে মহিলা পাশের ঘরে গিয়ে এক কাপ দুধ আর কিছু রুটি নিয়ে এলেন। টম এক ঢোকে দুধটুকু খেয়ে চোখ মেলে তাকাল। ভদ্রমহিলা বললেন, ‘তুমি কোত্থেকে এলে?’ টম আকাশের দিকে আঙুল তুলে বলল, ‘ওইখান থেকে।’ ‘হার্থোভার থেকে? মিথ্যে বলো না কিন্তু!’ ‘মিথ্যে বলব কেন?’ এই বলে সে তার মাথাটি খুঁটির সঙ্গে এলিয়ে দিল। ‘তুমি সেখানে কীভাবে উঠলে?’ ‘আমি সেখানকার প্রাসাদ থেকে এসেছি।’ টম এত ক্লান্ত ছিল যে সে কয়েকটি শব্দে সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। ‘তোমার মঙ্গল হোক! তাহলে তুমি চুরি করোনি?’ ‘না।’ ‘হে ঈশ্বর তোমার এ পবিত্র আত্মার মঙ্গল করো! ছেলেটি দুর্বল।’ তারপর টমকে বললেন, ‘আমার সঙ্গে এসো। আমি তোমাকে কোথাও রেখে আসি। তুমি কিছুটা পরিষ্কার হলে তোমাকে বিছানায় শোয়াব।’ টম যখন উঠতে চেষ্টা করল, তখন সে খুব দুর্বল ছিল। ওই মহিলার সাহায্য ছাড়া সে উঠতে পারল না। তিনি তাকে ঘরের বাইরে একটি নরম খড়ের বিছানায় শুইয়ে দিলেন। বললেন একঘণ্টা পরে স্কুল ছুটি হলে তিনি আবার আসবেন। তিনি ভাবলেন টম কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়বে। কিন্তু টমের ঘুম এল না। এপাশ-ওপাশ করতে লাগল। তার খুব গরম লাগল হঠাৎ। ইচ্ছে হলো নদীতে নেমে শরীরটা জুড়িয়ে নিতে। তারপর সে অর্ধচেতন অবস্থায় পড়ে রইল। সে স্বপ্ন দেখতে লাগল এক ভদ্রমহিলা তাকে চিৎকার করে বলছে, ‘ইস, তুমি কী নোংরা! যাও, গোসল করে এসো।’ সে শুনতে পেল আইরিশ মহিলা বলছে, ‘যারা পরিষ্কার থাকতে চায় তারা পরিষ্কার থাকবে।’ তখনই সে বিকট শব্দের চার্চের ঘণ্টাধ্বনি শুনতে পেল। বুঝতে পারল আজ রোববার। তার চার্চে যাওয়ার ইচ্ছে হলো। চার্চের ভেতরের রূপ কেমন তা তার দেখতে ইচ্ছে হলো। কারণ সে তার ক্ষুদ্র জীবনে আগে  কোনোদিন চার্চে যায়নি। কিন্তু প্রথমে তার নদীতে গিয়ে গোসল করতে হবে। সে অবচেতনে চিৎকার করে বলতে লাগল, ‘আমি অবশ্যই পরিষ্কার হব, আমি অবশ্যই পরিষ্কার হব।’ তখনই সে নিজেকে আর বাইরের ঘরে খড়ের বিছানায় দেখতে পেল না। সে নিজেকে আবিষ্কার করল মাঠের মাঝখান দিয়ে যেখানে রুপোলি নদী বয়ে চলেছে সেখানে। সে অবিরাম বলে যেতে লাগল, ‘আমি পরিষ্কার হব, আমি পরিষ্কার হব!’ সে নদীতে তার পা রাখল। ছেলেরা অসুস্থ হলে সাধারণত ঘুমের ঘোরে হাঁটাহাঁটি করে। টমও ছোট্ট নদীটার দিকে হেঁটে গেল। নদীর তীরের ঘাসের ওপর শুয়ে পড়ল। নদীর স্বচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে তার তলা পর্যন্ত দেখতে পেল। সে পানিতে তার হাত ডোবাল। বুঝল, পানি খুবই ঠাণ্ডা। সে বলল, ‘আমি মাছ হব। আমি পানিতে সাঁতার কাটব। আমি পরিষ্কার হব, আমি পরিষ্কার হব!’ সে তৎক্ষণাৎ তার কাপড়-চোপড় খুলে ফেলল। এত তাড়াতাড়ি খুলল যে কিছু কিছু ছিঁড়েও গেল। জামাকাপড়গুলো খুবই পুরোনো ছিল বলে তাড়াতাড়ি ছিঁড়ে গেল। তারপর সে তার ব্যথাময়, গরম পায়ের পাতা পানিতে ডোবাল। এরপর ডোবাল পুরো পা। এভাবে সে যত পানির ভেতর যেতে লাগল ততই গির্জার ঘণ্টাধ্বনি শুনতে পাচ্ছে বেশি। ‘আহ!’ টম বলল, ‘আমি অবশ্যই দ্রæত গোসল করব। ঘণ্টা এখন বেশ জোরে জোরে বাজছে। একসময় তা বন্ধ হয়ে যাবে এবং গির্জার দুয়ার বন্ধ হয়ে যাবে। আমি আর কখনও ভেতরে যেতে পারব না।’ সে আইরিশ মহিলাকে আর দেখতে পেল না। ইতোমধ্যে স্কুলের ছুটির পর মহিলা টমকে দেখতে আসলেন। কিন্তু টম নেই। তখন মহিলা ভেতরে গেলেন। ভাবলেন, ছেলেটি তাকে বানিয়ে গল্প বলেছে, অসুস্থতার ভান করেছে। তারপর পালিয়ে গেছে।

৪. স্যার জন এবং অন্যরা দৌড়ে টমকে ধরতে না পেরে খুবই বিরক্ত এবং বিব্রত হলেন। তারা দেখলেন ছেলেটি কক্ষ থেকে কিছুই নেয়নি। সে আসলে চোর নয়। তারপর গ্রিমসকে তিনি বললেন যেন বাড়ি গিয়ে টমকে এনে দেয়। কোনো প্রকার মারধরও যাতে না করে। তার জন্য তাকে পাঁচ শিলিং দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলো। এতে প্রকৃত সত্য জানা যাবে। তারা মনে করলেন টম বাড়িতেই গেছে। কিন্তু টম গ্রিমসের কাছে আসল না। এর মধ্যে পুলিশকেও খবর দেওয়া হলো। কিন্তু টমের কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না। টম পালিয়েছে পাহাড়ের দিকে, ঝরনা বরাবর। যারা তার এই পালিয়ে যাওয়া দেখেছে তারা তার জীবিত থাকার চেয়ে না থাকার সম্ভাবনাই বেশি বলে ধরে নিয়েছিল। তাই পরদিন গ্রিমস মলিন মুখে হার্থোভারে হাজির হলেন। তখন স্যার জন ছিলেন না। তিনি অনেক দূরে পাহাড়ের ওপর গিয়েছিলেন। গ্রিমস সারাদিন বাইরের বাড়ির চাকরের কোয়ার্টারে বসে অপেক্ষা করেছেন। স্যার জন সেদিন ভালো ঘুমাতে পারেননি। তিনি মিসেস জনকে বললেন, ‘ছেলেটি অবশ্যই সমতলভ‚মির দিকে গিয়ে থাকবে এবং পথ হারিয়ে ফেলেছে হয়তো। সে আমার চেতনাকে খুবই গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। আমি জানি, আমাকে কী করতে হবে।’ পরদিন সকালে তারা সেখানে এসে উপস্থিত হলো, যেখান দিয়ে টম পালিয়ে গিয়েছিল। সেই জঙ্গল, দেয়াল এবং যে পথে সে দৌড়ে গিয়েছিল সে পথে। তাদের সঙ্গে একটি কালো কুকুরও আছে।

কুকুরটি টমের গায়ের গন্ধ নিয়ে অনুসন্ধানকারী দলকে নিয়ে অগ্রসর হতে লাগল। এক পর্যায়ে একটি খাড়া পাহাড়ে এসে হাজির হলো। কিন্তু টমকে পাওয়া গেল না। এভাবে তারা খুঁজতে খুঁজতে কুটিরের সেই বয়স্ক মহিলার স্কুলে এসে উপস্থিত হলো। তার অনুমতি নিয়ে তারা কুকুরটিকে কুটিরে ঢোকাল। মুহূর্তে কুকুরটি বাড়ির পেছনে চলে গেল। সেখান থেকে টমের পুরোনো কাপড়-চোপড় বের করল। আহ, এখনই এই আশ্চর্যজনক গল্পের একটি সুন্দর অংশ প্রকাশ পাবে। টম যখন জেগে উঠল, তখনই সে হাঁটতে শুরু করল। ছেলেরা সাধারণত ঘুমের ঘোরে হাঁটে। কিন্তু টম সত্যি সত্যি হাঁটা শুরু করল। টম দেখল, সে সাঁতার কাটছে ছোট্ট নদীতে। প্রকৃতপক্ষে একজন পরী এসে তাকে একটি জলশিশুতে পরিণত করেছিল।

জলশিশু! তোমরা নিশ্চয়ই জলশিশুর কথা কখনও শোনোনি। এ কারণেই এই গল্প লেখা হয়েছে। পৃথিবীতে অনেক আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে, যা কেউ কখনও আগে শোনেনি। কিন্তু তা টমের ক্ষেত্রে ঘটেছিল। তখন স্যার জন এবং তার দল একটি বড় ভুল করে বসলেন। পানিতে একটি কালো বস্তু দেখে তারা খুব ব্যথিত হলেন। তারা মনে করলেন, ওটা টমের শরীর এবং পানিতে ডুবে গেছে। তারা স্রেফ ভুলই করলেন। টম জীবিত ছিল। সে সম্পূর্ণ পরিষ্কার এবং সুন্দর হয়ে উঠল। এ রকম কখনও ছিল না। পরীরা তাকে ধুয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, পরীরা তাকে খরস্রোতা নদীতে এমনভাবে ধুয়ে দিল যে তার শরীরের প্রতিটি অংশ পরিষ্কার হয়ে গেল। কিন্তু ব্যাপারটি স্যার জন বুঝলেন না। তিনি ধরে নিলেন টম মারা গেছে। টমের পরিত্যক্ত শার্টের পকেটে কোনো জুয়েলারি বা টাকা পাওয়া যায়নি। এতে স্যার জন খুবই কষ্ট পেয়ে নিজেকে দোষারোপ করলেন। এমনভাবে হাহাকার করে উঠলেন, যেমনটি তিনি আগে কখনও করেননি। তিনি টমের মৃত্যুর জন্য নিজেকে সম্পূর্ণ দায়ী করলেন। তখনই টমকে দেখা গেল, সে পানিতে সাঁতার কাটছে। একটি সুন্দর পরিষ্কার ছেলে এখন টম। যেন স্যামন মাছ। টম এখন উভচর প্রাণী। সে জল ও স্থল উভয় স্থানে থাকতে পারে। টম পানিতে খুবই আমোদে আছে। স্থলে তাকে অতিরিক্ত পরিশ্রমের কাজ করতে হয়েছে। তাই এখন পানির রাজ্যে তার শুধুই ছুটির দিন। তার এখন আনন্দ করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। তার এখন শুধু সব সুন্দর জিনিস দেখে সময় কাটবে। পানির ভেতর যা কিছু দেখা যায় তাই সুন্দর। এখানে সূর্যের তাপ কখনও বেশি হয় না। আবার বরফও খুব বেশি ঠাণ্ডা হয় না। তাহলে সে কী খেয়ে বাঁচবে? আমরা জানি না এক-দশমাংশ জলের প্রাণী কী খায়। তাই আমরা বলব না জলশিশু কী খায়। টম কী খাবে? কখনও কখনও সে গভীর পানিতে ডুব দেয়। জলের নিচের গভীর জঙ্গলে চলে যায়। তোমাদের চোখে পানির নিচের উদ্ভিদগুলো খুব ছোট্ট হতে পারে। কিন্তু মনে রাখবে টম এখন এত ছোট্ট যে প্রত্যেক জিনিস এখন তার চেয়ে একশত গুণ বড় মনে হবে। এখানে সে দেখেছে জলের বানর, কাঠবেড়ালি এবং হাজার-হাজার জলের ফুল। টম যখন এগুলো নিতে গেল, তখন সেগুলো জেলির সঙ্গে আটকে রইল। টম বুঝল ওগুলো জীবন্ত সৃষ্টি। বিচিত্র রং ও আকৃতির ঘণ্টা, তারা, চাকা, সবই জীবন্ত। সবকিছুই ব্যস্ত, যেমনটি টম এক সময় থাকত। বলা ছাড়া অনুমান করা যায়, সব জলজ বস্তুই কথা বলতে পারে। অবশ্য তা আমাদের মতো ভাষায় নয়। বিভিন্ন পশুপাখি যেমন ঘোড়া, কুকুর, গরু এবং পাখি পরস্পরের সঙ্গে যেভাবে বলে সেভাবে। টম খুব তাড়াতাড়ি এদের ভাষা বুঝতে এবং এদের সঙ্গে কথা বলতে শিখে গেল। সে যদি একজন ভালো ছেলে হয়, তাহলে তখনই কেবলমাত্র সে তাদের সঙ্গে খুব ভালো সময় কাটাতে পারবে। কিন্তু সে এত ছোট যে সবকিছু নিয়ে সে কেবল মজাই করে। সবকিছু নিয়ে আনন্দ করতেই ভালোবাসে। একটি ছোট্ট বালকের যা করার তা-ই করছে সে। সে ছোট ছোট জলজ জীবগুলোকে আঘাত করছে, নষ্ট করছে। ছোট ছোট জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীগুলোকে এমনভাবে তাড়া করে যে ওইগুলো তাকে দেখলেই ভয় পায়। তারা তাকে দেখলে খোলসে ঢুকে পড়ে। তার পথ থেকে সরে পড়ে। তাই টম এক সময় একা ও বন্ধুহীন হয়ে পড়ল। জলপরীরা তাকে দেখে ব্যথিত হয়ে পড়ল। তারা তাকে ভালো হতে শেখাতে চাইল। কিন্তু শেখাতে চাইলে তো হবে না। এ ব্যাপার তাদের ওপর নিষেধ আছে। টম নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে আস্তে আস্তে ভালো হওয়া শিখবে। চলবে

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App