×

জাতীয়

সবার নজর উচ্চ আদালতের দিকে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:৫৪ এএম

সবার নজর আজ উচ্চ আদালতের দিকে। বিএনপির নেতাকর্মীদের চোখে-মুখে উদ্বেগ। কী হবে খালেদা জিয়ার? তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় উচ্চ আদালত কি তাকে জামিন দেবে? তিনি কি মুক্তি পাবেন? নাকি নিম্ন আদালতের রায়ই বহাল থাকবে? এই প্রশ্নগুলোই ঘুরেফিরে সামনে আসছে আলোচনায়। তবে ন্যায়বিচার পেলে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন বলে শতভাগ আশাবাদী তার আইনজীবী ও দলের সিনিয়র নেতারা। কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবনতিশীল স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় নিয়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় নতুন করে শুনানি হবে আজ বৃহস্পতিবার। এর আগে গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়া অ্যাডভান্স থেরাপির জন্য সম্মতি দিয়েছেন কিনা, সম্মতি দিলে চিকিৎসা শুরু হয়েছে কিনা এবং বর্তমান তার কী অবস্থা তা জানিয়ে মেডিকেল প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেয়া হয়। খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তি পেলে উন্নত চিকিৎসা নিতে বিদেশে যাবেন- তার বড় বোন সেলিনা ইসলামের এমন বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে চলছে জোর জল্পনা-কল্পনা। বিএনপির শীর্ষ নেতারাও চান যে কোনো উপায়েই আগে তার মুক্তি। কোথায় চিকিৎসা নেবেন সেটা পরে তিনি নিজেই ঠিক করবেন। সূত্র জানায়, গত সোমাবার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক হয় খালেদা জিয়ার মেডিকেল টিমের ডাক্তারদের। তারা জানান, বিএনপি নেত্রীর শারীরিক পরিস্থিতি ভয়াবহ খারাপ। তার হঠাৎ কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তার দায় এসে পড়বে তাদের ঘাড়ে। তাই সব বিবেচনা করেই রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। সূত্র জানায়, মেডিকেল বোর্ডের দেয়া এই তথ্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তিনিও খালেদার মুক্তির ব্যাপারে নমনীয়। অবশ্য খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করার আহ্বান জানিয়েছে সরকারপক্ষ। কিন্তু প্যারোলে মুক্তি নিয়ে রাজনৈতিকভাবে হেয় হতে রাজি নন খালেদা জিয়া। খালেদার পরিবার সূত্র জানায়, সমঝোতায় মুক্তির ব্যাপারে গত দুই বছর কোনোভাবেই রাজি হচ্ছিলেন না বিএনপিপ্রধান। কিন্তু সম্প্রতি তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো বোঝানোর চেষ্টা করেন। সব দিক বিবেচনা করে খালেদা জিয়াও উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যেতে রাজি হয়েছেন। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ভোরের কাগজকে বলেন, ‘ম্যাডামের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় মানবিক কারণে হলেও তার জামিনের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। এবারো যদি সর্বোচ্চ আদালত তাকে জামিন না দেয় তাহলে বুঝতে হবে, সরকারের হস্তক্ষেপে শুধু রাজনৈতিক কারণে নয়, মানবিক কারণেও তার মুক্তি হচ্ছে না। সূত্রমতে, দলীয়প্রধানের মনোভাব টের পেয়েই গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ফোনে খালেদা জিয়ার মুুক্তির বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করেন। যদিও ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে নিষ্পত্তির জন্য আদালতের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। জানা গেছে, খালেদা জিয়া জামিন পাবেন এটা ধরে নিয়েই তার পরিবারের পক্ষ থেকে লন্ডনে নেয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কারণ, সর্বশেষ শারীরিক যে অবস্থা তাতে তার পক্ষে দলের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হবে না। অসুস্থতার কারণে শয্যাশায়ী। অন্যের সহায়তা ছাড়া হাঁটতে পারেন না। এমনকি নিজে থেকে খাবার খেতে পারেন না। তাই জামিন পেলে তাকে আগে সুস্থ হতে উন্নত চিকিৎসা নিতে হবে। বিদেশ যেতে তার পাসপোর্ট এবং যাবতীয় প্রযোজনীয় কাগজপত্র তৈরি করছেন তার ভাইয়ের ছেলে অভিক ইস্কান্দার। লন্ডনে চিকিৎসার যাবতীয় বিষয় দেখাশোনা করবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান। তার চিকিৎসার সব খরচ পরিবার বহন করবে। সূত্র মতে, খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশে তাঁর চিকিৎসার জন্য প্যারোলের আবেদন করা হলে সরকার তা বিবেচনা করবে। আদালত অথবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যথাযথ কারণ দেখিয়ে এই আবেদন করতে হবে। কারণ, সরকার বিএনপি নেত্রীর অসুস্থতার দিকটি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আপিল বিভাগে জামিন আবেদনের সময় খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত যে অবস্থা ছিল এখন ভয়াবহ অবনতি হচ্ছে। সার্বিক বিবেচনায় খালেদা জিয়ার মুক্তির পথে কোনো বাধা নেই। ন্যায় বিচার হলে আমরা সম্পূর্ণ বিশ্বাসী মেডিকেল গ্রাউন্ডে তার জামিন হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App