×

সম্পাদকীয়

দুদকের সুপারিশগুলো আমলে নেয়া হোক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:০৯ পিএম

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে দেশের স্থলবন্দরগুলোর দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির যে চিত্র উঠে এসেছে, তা উদ্বেগজনক। অনুসন্ধানে বলা হয়, আমদানি করা মালামাল শুল্ক ছাড়াই খালাস করা যায় দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে। অযোগ্য ঠিকাদারকে কাজ দেয়া, মালামাল চুরি কিংবা কাজ না করেই বেতন তুলে নেয়ার মতো অনেক ঘটনাও ঘটে সেখানে। গত বুধবার সচিবালয়ে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর কাছে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জমা দেয় দুদক। এসব দুর্নীতি বন্ধে নজরদারি জোরদার ও মন্ত্রণালয়ের ভ‚মিকা বাড়ানোসহ ২৮ দফা সুপারিশ করে সংস্থাটি। দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী দুর্নীতির ১৪ উৎসের মধ্যে রয়েছে- পণ্য আমদানি-রপ্তানির দলিলপত্র যথাযথভাবে যাচাই না করে পণ্য ছেড়ে দেয়া, বন্দরের শেড বা গুদাম থেকে মালামাল চুরি, আর্থিক সুবিধা নিয়ে দরপত্রের কার্যাদেশ দেয়া, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ বদলি ও পদায়ন এবং বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য আঞ্চলিকতা, এলাকাপ্রীতি ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেয়া ইত্যাদি। বন্দর খাতে যে ভয়াবহ অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে, এটি তার খণ্ডচিত্র মাত্র। প্রতিটি বন্দরই বলা যায় দুর্নীতি-অনিয়মে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। এর আগেও বিভিন্ন স্থলবন্দরের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবাদ হয়েছে। ধর্মঘট হয়েছে। দুর্নীতির দায়ে অনেক অসাধু কর্মকর্তা হাতেনাতে ধরাও পড়েছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার উদাহরণ খুবই কম। মনে রাখতে হবে, বিষয়টির সঙ্গে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির প্রশ্ন জড়িত। কাজেই বন্দর-সংশ্লিষ্ট ঘুষ-দুর্নীতি রোধ করতে হবে যে কোনো উপায়ে। দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে দেশের সব বন্দরেই। দুর্নীতি রোধের লক্ষ্যে প্রতি বছর কাস্টমস ও বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয় ও সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করাসহ ২৮ দফা সুপারিশ করেছে দুদক।

সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- স্থলবন্দরের অটোমেশন, নিয়মিত কার্যক্রম মনিটরিং ও রিপোর্ট দেয়া, বন্দরে নিজস্ব যন্ত্রপাতি স্থাপন করা, বন্দরে পণ্যবাহী ট্রাক ও খালি ট্রাকের ওজন নিশ্চিত করা, কাস্টমস ইন্টেলিজেন্স সেলের মতো আলাদা ইউনিট প্রতিষ্ঠা, পণ্যের পরীক্ষার সময় কাস্টমস কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, সার্বিক নিরাপত্তাসহ মনিটরিং ও তদারকির জন্য আলাদা মনিটরিং সেল গঠন ইত্যাদি। এছাড়া বন্দরের চোরাই চক্রকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশও করে দুদক। আমরা মনে করি, এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে স্থলবন্দরগুলোতে দুর্নীতি প্রতিরোধে সবার আগে প্রয়োজন সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা। কারণ বন্দরগুলোয় অটোমেশন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরও দুর্নীতি হচ্ছে। বস্তুত বন্দরে দুর্নীতি এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। বন্দরগুলো হলো দেশের লাইফ লাইন। বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের কারণে দিন দিন এগুলোর গুরুত্ব বাড়ছে। কাজেই আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় বন্দরগুলোয় সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে পড়েছে। দুদক যেসব সুপারিশ করেছে বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় আনলে অনিয়ম-দুর্নীতি হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App