অপেক্ষার ৪৫ বছর শেষে নিজ ভিটেতে রসুফার পরিবার
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০১:৪৩ পিএম
দীর্ঘ ৪৫ বছর পর নিজ পৈত্রিক ভিটেবাড়িতে গ্রামী নারী নাহিদ আক্তার রসুফার পরিবার
দীর্ঘ ৪৫ বছর পরে সংগ্রামী নারী নাহিদ আক্তার রসুফার পরিবার ফিরে পেলেন তাদের পৈত্রিক ভিটেবাড়ি। পরিবারের ৬ জন সদস্য পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার কলাদোয়ানিয়া ইউনিয়নের বেলুয়া মুগারঝোর গ্রামের নিজ পৈত্রিক ভিটেমাটি থেকে ১৯৭৫’র পরে বিতারিত হয়ে বরিশালের বানারীপাড়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডে ৪৫ বছর আগে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তারপরে পুরো পরিবারের সংগ্রামী জীবন শুরু হয়। ওই সময় রসুফা তার মা রিজিয়া বেগম, ভাই মো. বজলু, নিয়াজ মাহমুদ ও ছোট বোন তাসলিমাকে নিয়ে জীবন যুদ্ধে অবর্তীণ হন। রসুফা বাড়ি বাড়ি প্রাইভেট পড়িয়ে দুই ভাই ও এক বোন সহ নিজের লেখাপড়ার খরচ বহনের পাশাপাশি সংসার চালাতেন।
তার পিতা মতিয়ার রহমান মাঝি বানারীপাড়ার নূর হোসেন প্রেসিডেন্ট’র রাইচমিলে শ্রমিকের কাজ করতেন। শ্রমিক পিতা ও প্রাইভেট শিক্ষক রসুফার যৌথ সংগ্রামে তারা চার ভাই বোন সুশিক্ষায় শিক্ষিত হন। সংগামী এ জীবনের বেশির ভাগ সময়ই পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের মো. মোস্তফা মোল্লার বাড়িতে আশ্রিত হিসেবে থাকতেন পুরো পরিবারটি।
১৯৯১ সালে বানারীপাড়া পৌরসভায় হিসাব সহকারী পদে অসম্ভভ মেধাবী নাহিদ আক্তার রসুফা ইন্টারভিউতে প্রথম হন। তবে ওই বছরই অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের (নৌকা প্রতীকের) এজেন্ট হওয়ার কারণে তার নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়ার পরেও তৎকালীন প্রভাবশালীদের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে সেই পদটি বাগিয়ে নেন ইন্টারভিউতে তৃতীয় হওয়া বিএনপি পন্থি আলতাফ হোসেন। তৎকালীন ইউএনও ও পৌর প্রশাসক মতিয়ার রহমান ইন্টারভিউতে প্রথম হওয়া রসুফাকে চাকরি দিতে চাইলে ওই প্রভাবশালীরা তখন তাকে রাতের মধ্যে বদলী করে দেন। ইন্টারভিউতে প্রথম হয়েও চাকরি থেকে বঞ্চিত হওয়ায় মনের ক্ষোভে ও দুঃখে নাহিদ আক্তার রসুফা সপরিবারে বানারীপাড়া ছেড়ে চলে যান।
তিনি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকায় উন্নয়ন মাঠ কর্মী পদে চাকরি নেন। চাকরির কারণে তাকে বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালন করতে হয়। পটুয়াখালীতে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেও মাতৃত্বের সাধ পাননি তিনি। নিঃসন্তান রসুফা ও তার দুই ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের একই বংশের সৈয়েদুর রহমান গং ও রুস্তুম আলী গং’রা দীর্ঘ ৪৫ বছর আগে জোর করে তাদের পৈত্রিক ভিটেবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। তারা ৪ ভাই বোন তখন অনেক ছোট ছিলো। প্রভাবশালী ওই গং’রা হাজী হাতেম আলী নামের এক ব্যক্তিকে বাদী করে রসুফার পরিবারকে বিতারিত করেই নিরব ছিলোনা,উল্টো তাদের বিরুদ্ধে পিরোজপুর আদালতে মামলা দায়ের করেন। তাদের করা সেই মামলায়ই রসুফার পরিবার চুড়ান্ত রায় পাওয়ার পরে আদালত থেকে ২০১৭ সালের ২৪ মে তাদের পৈত্রিক ভিটেবাড়ির ২ একর ৭১ শতক সম্পতি লাল নিশানা দিয়ে দখল দিয়ে যায়।
বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শাহে আলম জীবন সংগ্রামী নাহিদ আক্তার রসুফার পরিবারটিকে নিজ ভিটেমাটিতে ফিরিয়ে দিতে সহায়তা করেন। ফলে তার প্রতি কৃতজ্ঞ এ অসহায় পরিবারটি।
এদিকে তারা ভিটেমাটিতে ফিরে যাওয়ার পরে মৃত সৈয়েদুর রহমান মাঝি ও মৃত রুস্তুম মাঝি গং’দের ওয়ারিশ’রা আদালতের রায়কে অমান্য করে নাহিদ আক্তার রসুফাদের পরিবারের ওপরে হামলা-মামলায় লিপ্ত রয়েছে। তার নিরীহ ২ ভাই বজলু ও নিয়াজকে বিভিন্ন ফৌজদারী মামলায় জড়িয়ে প্রতিনিয়িত হয়রানি করছে। বিভিন্ন সময়ে ভূমিগ্রাসী ওই মহলটি অসহায় পরিবারটির সদস্যদের খুন-জখমেরও হুমকি দিয়ে আসছে। ফলে পরিবারটি এখনও প্রাণের ভয়ে পৈত্রিক বাড়িতে চরম আতঙ্কের মাঝে দিনাতিপাত করছেন।