×

সারাদেশ

মাওনায় পরিবহন চালকদের বিক্ষোভ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৫:০০ পিএম

মাওনায় পরিবহন চালকদের বিক্ষোভ

মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর নিচে পরিবহন চালকদের বিক্ষোভ, ইনসেটে মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল হক

গাজীপুরের শ্রীপুর মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল হকের প্রত্যাহার চেয়ে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় পরিবহন চালকেরা। বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর নিচে তারা এ বিক্ষোভ করে। ওসির বিরুদ্ধে কাগজপত্রে ক্রুটিযুক্ত বিভিন্ন অটোরিক্সা, ব্যাটারী চালিত যান, সিএনজি অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল, ইটা, বালি বহনকারী গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহন ষ্ট্যান্ড, থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়াও নানা অজুহাতে মহাসড়ক ও এর আশপাশ এলাকা থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের যান জব্দ করে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। পরিবহন চালকরা জানান, সরকার মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করার সুযোগে সকালে বা ভোরে বিভিন্ন সিএনজি ষ্টেশনে জ্বালানী আনতে গেলে পুলিশ গাড়ী আটকিয়ে থানায় নিয়ে যায়। এছাড়াও মহাসড়কের পাশে থাকা বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক থেকেও ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা জব্দ করেন তারা। পরে সন্ধ্যা হলেই হাইওয়ে থানা এলাকায় দালাল চক্রের মাধ্যমে দরদাম করে গাড়ি ছাড়াতে হয়। দরদামে সন্তুষ্ট না হলে গাড়ি দিনের পর দিন আটক থাকে। পুলিশের চাহিদামত টাকা না দিলে হাইওয়ে এসপি অফিসে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা ও গাড়ি আটকের স্লিপ ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। এছাড়াও সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা বিভিন্ন পরিবহন থেকে রেকারের ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা। গত পাঁচ মাস আগে মাওনা হাইওয়ে থানায় নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম যোগদান করেন। তিনি সড়ক নিরাপত্তায় যতটুকু তৎপর নন তার চেয়ে কমপক্ষে অর্ধশত সোর্স নিয়ে হাইওয়ে সড়কে ওইসব অনিয়মে তৎপর রয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। তার এসব তৎপরতায় পিএসআই আইয়ুব আলী, এসআই মারফত ও এসআই শাহজাহান পরিবহনের সাধারণ শ্রমিকদের হয়রানিতে ফেলেন। সিএনজি চালক আক্তার হোসেন জানান, গত ৩ মাস আগে জ্বালানী নিয়ে ফেরার পথে মাওনা চৌরাস্তায় তার গাড়ি আটক করেন পিএসআই আইয়ুব আলী। বিভিন্ন ভাবে অনুনয় বিনয় করলেও তারা সিএনজি ছাড়েননি। পরে সোর্সের মাধ্যমে ১০হাজার টাকা দাবি করেন তিনি। দরদাম শেষে কয়েকদিন পর স্ত্রীর কানের দুল সাড়ে আট হাজার টাকায় বিক্রি করে গাড়ি ছাড়িয়ে নেন। মাওনা উত্তরপাড়া গ্রামের আলাল উদ্দিন জানান, মহাসড়কের পাশে এমসি বাজার সংযোগস্থলের ষ্ট্যান্ড থেকে পুলিশের এক সোর্স গিয়ে তার ও সাথে থাকা আরো ৫টি গাড়ির চাবি থানায় নিয়ে যান। পরে পুলিশের এস আই মারফত আলীকে এক হাজার টাকা করে দিয়ে প্রত্যেকেই গাড়ি ছাড়িয়ে নেন তারা। তিনি আরো বলেন, সরকারি আইন মেনেই তারা মহাসড়কে গাড়ি চালান না। তারপরও টাকার জন্য বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কেও হানা দিয়ে গাড়ি আটক করেন পুলিশ। গড়গড়িয়া মাষ্টার বাড়ির আসাদ মিয়া জানান, তিনি শ্রীপুর-মাষ্টারবাড়ী আঞ্চলিক সড়কে গাড়ি চালান। গত ৮ ফেব্রুয়ারি মাষ্টারবাড়ী থেকে এক সোর্সের মাধ্যমে তার গাড়ি জব্দ করেন এস আই মারফত আলী। পরে ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি গাড়ি ছাড়িয়ে নেন। অটোরিক্সা চালকদের ভাষ্যমতে, স্বল্প ও নিম্ন আয়ের এক শ্রেণীর লোকজন মহাসড়কের পাশের বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। ধার দেনা করে একটি গাড়ি কিনতে খরচ হয় ৮০-৯০হাজার টাকা। কারণে অকারণে হঠাৎই বেপরোয়া মাওনা হাইওয়ে পুলিশ। প্রতিনিয়ত আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে গাড়ি জব্দ করে নিয়ে যান। গাড়ি বন্ধ থাকলে ব্যাটারী নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকায় তারা পুলিশের চাহিদা মত টাকা দিয়েই গাড়ি মুক্ত করে নিয়ে আসেন। প্রতিটি তিন চাকার যান ছাড়াতে ৫-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত টাকা গুণতে হয়। কেওয়া গ্রামের আবু বকর সিদ্দিক নামের এক পরিবহন চালক বলেন, কেউ যদি অপরাধ করে তাহলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা। অথচ হাইওয়ে পুলিশ প্রতিটি ঘটনায় সোর্সের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। তাদেরকে টাকা দিলে অবৈধ বৈধ হয়ে যায়। স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যা হলেই হাইওয়ে পুলিশের সহযোগিতায় মাওনা চৌরাস্তার উড়াল সড়ক ঘেঁষে বসে হাজারো ভ্রাম্যমান দোকানপাট। এসব দোকানের কারণে যানজটের কবলে পড়ে স্থানীয়দের। মহাসড়কের নিরাপত্তায় তাদের দেখা মেলা ভার। অভিযুক্ত মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল ইসলামকে এ বিষয়ে ফোন দিলে তিনি তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার স্যার (এএসপি) সাথে থাকার কথা বলে লাইন কেটে দেন এবং পরে এ প্রতিনিধিকে ফোন দিবেন বলে জানান। হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুরের রিজিওনের পুলিশ সুপার (এসপি) আলী আহমদ খান জানান, মহাসড়কের তিন চাকার যান চলাচলের কোন নিয়ম নেই। এসব যানবাহন মহাসড়ক থেকে পুলিশ সরাসরি আটক করে রাখবে। টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার সুযোগ নেই। এমন অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App