×

সম্পাদকীয়

ইতিহাস বিকৃতি আর নয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৮:৩৪ পিএম

৭ মার্চকে জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস ঘোষণা করে আগামী এক মাসের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করে বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই আদেশের ফলে ৭ মার্চকে ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হলো। এখন প্রশাসনের কাজ হবে আগামী এক মাসের মধ্যে একটি গেজেট জারি করা এবং সেই গেজেটের মাধ্যমে ভবিষ্যতে দিবসটি জাতীয় ও রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ জাতীয় দিবস হিসেবে আমাদের জন্য গৌরবের। একাত্তরের পরাজিত শক্তি একদিন যে ভাষণ নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিল, সে ভাষণই আজ জাতীয় দিবস হিসেবে স্বীকৃত। আমরা মনে করি, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এই স্বীকৃতি পাওয়ায় বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদের করা রিটে ৭ মার্চকে কেন ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের সময় বঙ্গবন্ধুর আঙুল উঁচানো ভঙ্গির ভাস্কর্য নির্মাণের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে। সেই রুলের শুনানিতে রিট আবেদনকারীর সম্পূরক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দিলেন উচ্চ আদালত। আজ থেকে ৪৯ বছর আগে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তখনকার রেসকোর্স ময়দান) স্বাধীনতাকামী ৭ কোটি মানুষকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।

উত্তাল জনসমুদ্র যখন স্বাধীনতার ঘোষণা শুনতে উদগ্রীব, তখন এরপর বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করলেন তার চূড়ান্ত আদেশ- ‘তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব- এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।’ ওই ভাষণেই সামরিক আইন প্রত্যাহার, সৈন্য বাহিনীর ব্যারাকে প্রত্যাবর্তন, শহীদদের জন্য ক্ষতিপূরণ ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ৪ দফা দাবি উত্থাপন করেন তিনি। তার ওই ভাষণের ১৮ দিন পর পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি নিধনে নামলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। ৯ মাসের সেই সশস্ত্র সংগ্রামের পর আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ৭ মার্চের ভাষণেই বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার নিশানা পেয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ এ ভূখণ্ডের মানুষকে নিজের দেশ, ভাষা ও অধিকার বোধ সম্পর্কে জাগ্রত করেছিল, প্রস্তুত করেছিল মরণপণ সংগ্রামের জন্য। মাত্র ১৯ মিনিটের যে বক্তৃতা বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন সেটাই সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে মনের বল নিয়ে শত্রুদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদ্দীপনা দিয়েছিল। এটি এর আগে আর কোনো নেতার কোনো ভাষণ তা পারেনি। এই ভাষণ বাংলার আপামর জনতার প্রেরণার জায়গা এবং এই ভাষণ আমাদের মুক্তি সংগ্রামের একটি অনন্য মাইলস্টোন। বিশ্ব ইতিহাসে যার দৃষ্টান্ত বিরল। এই ভাষণ জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা পুরো বাঙালি জাতি, সব শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সব শক্তি সম্মানিত হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App