×

মুক্তচিন্তা

সেলফিসাইডের ঝুঁকি!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:১৬ পিএম

মোবাইলে নিজের এবং আপনজনের সঙ্গে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করাটা এখন রীতিমতো ফ্যাশনে দাঁড়িয়েছে। এখন যদি বহুল ব্যবহৃত শব্দের কোনো তালিকা হয় তাহলে সেলফি শব্দটি খুব সম্ভবত প্রথম সারিতে থাকবে। এর জনপ্রিয়তা এতটা যে শহর থেকে পল্লী গাঁ, ছেলে থেকে বৃদ্ধ সবাই সেলফি তুলতে ব্যস্ত। হাত-পা বাঁকিয়ে নিজের মুখ এদিক-সেদিক করে রীতিমতো কসরত করে হাত দিয়ে অথবা সেলফি স্টিক দিয়ে সেলফি তুলি। তারপর সঙ্গে সঙ্গেই তার পেছনের ইতিহাস লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেই। বলা যায় রীতিমতো সেলফি ভাইরাসের মতো মাথার ভেতর ঢুকে গেছে। সেই ভাইরাস আরো ভাইরাস জন্ম দিচ্ছে। একসময় তা অস্থিমজ্জায় ছড়িয়ে গিয়ে নেশায় পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বে ক্রমেই এই প্রবণতা বেড়ে চলেছে। বিষয়টি যদি কেবল এই নিজের ছবি তোলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত তাহলে কোনো কথা ছিল না। শেষ পর্যন্ত তা তো আর থাকছে না। কোনো অবস্থাতেই সেই সেলফি তোলা থেকে এক বেলা বা একদিনও বিরত থাকতে পারি না। সেলফি তুলতে গিয়ে এতটাই নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিচ্ছি যে স্থান-কাল-পাত্রভেদ সব গুলিয়ে একাকার করে ফেলছি। স্টাইলিস্ট পরিচয় দিতে গিয়ে নিজেকে নিতান্তই আহাম্মক পরিচয় দিচ্ছি। এই সেলফি তুলতে গিয়ে কিন্তু বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যাও কম নয়। বহু সেলফিপ্রিয় তরুণ-তরুণী সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন। তারা জানত সে কাজে ঝুঁকি আছে তার পরেও তারা সেলফি তুলতে গেছে। ফলাফল মৃত্যু। এখন যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেলফি তুলতে যান তারা নেহায়েত শখের বশেই যান এমনটা বলা ঠিক হবে না। অনেকেই বীরত্ব দেখাতে গিয়ে সেলফি তোলেন। এবং সেই সেলফি তার মৃত্যুর কারণও হচ্ছে যাকে অনেকে সেলফিসাইড বলছেন। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেলফিসাইডের সংখ্যাও বাড়ছে। উঠতি বয়সী ছেলেমেয়ের মধ্যেই এই প্রবণতা বেশি কাজ করে। যদিও সেলফি তুলতে আর্থিক কোনো মূল্য দিতে হচ্ছে না, কিন্তু জীবন তো দিতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে অতি মাত্রায় সাহসী সেলফি তোলা মৃত্যুর ঘটনাগুলো অনেক উঁচু কোনো ভবন থেকে তুলতে গিয়ে ঘটেছে। এমনকি সেলফি তুলতে গিয়ে পাগলামিতে মারাত্মক কোনো অস্ত্র নিয়ে সেলফি তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। কারণ মানুষ শখের বশে মৃত্যুকে বরণ করতে চায় না। আসলে সেলফি বিষয়টা একটা প্রেস্টিজ ইস্যুর মতো দাঁড়িয়ে গেছে। যে যত আলাদাভাবে সেলফি তুলতে পারবে তার তত বেশি লাইক পড়বে। তা সে সাপের মুখের কাছেই হোক আর কুমিরের মুখের সামনেই হোক। যত আলাদা সেলফি পোস্ট হবে তাকে তত বেশি বাহবা দেয়। কিন্তু এই বাহবা যে কেবল বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয় এবং এটার জন্য জীবনের ঝুঁকি নেয়া যায় না তা কে বোঝাবে এদের। তাই সেলফি তুলতে গিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। বাড়ছে সেলফি তোলার নতুন নতুন উপায়। এখন পর্যন্ত চলন্ত ট্রেনের সামনে, কুমিরের সঙ্গে, প্লেন থেকে, সিংহের খাঁচার সঙ্গে, সাপের সঙ্গে সেলফি তুলতে গিয়ে কামড়ে মৃত্যু হয়েছে এ রকম আরো অনেক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে সেলফি তুলতে গিয়ে। এগুলো কেবল ছেলেমানুষি ছাড়া আর কিছু নয়। সেলফি নিয়ে এতক্ষণ কেবল নেতিবাচক দিক নিয়ে বললাম। এমন না যে এর কোনো ভালো দিক নেই। বিজ্ঞানের সূত্রের মতোই এখানেও প্রতিটি বিষয়ের ভালো এবং খারাপ দিক দুটিই আছে। সেলফিরও আছে। সেলিফির জন্যই আজ কোথা কোনো প্রিয় বন্ধুটি কী করছে তা জানতে পারছি। তাকে শুভ কামনা জানাতে পারছি। সেলফি কাজে লাগিয়ে আজকাল অন্যকে মানসিক এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার পরিমাণও কম নয়। বৈশ্বিক যুগে বিষয়টা এমন নয় যে কেউ কাউকে হাতে ধরে বুঝিয়ে দেবে কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ। কোনটা করা উচিত আর কোনটা করা উচিত নয়। আবেগ থেকে যে জ্ঞানশূন্যতার জন্ম হয় তার ফল ভালো হয় না। তাই সেলফির বিষয়টা আজকাল আর ভালোতে থাকছে না। শিক্ষক ও লেখক, পাবনা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App