×

অর্থনীতি

কমিশনে সুফল মিলবে!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:১৪ এএম

কমিশনে সুফল মিলবে!

বাংলাদেশ ব্যাংক

ব্যাংকখাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কমিশন গঠনের উদ্যোগকে শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা স্বাগত জানালেও বাস্তবে কতোটা সুফল মিলবে তা নিয়ে সংশয়

 ব্যাংকিং কমিশন গঠনে অবশেষে আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে সরকার এই কমিশন গঠন করছে এবং দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে কমিশনের চেয়ারম্যান করা হচ্ছে এমন আলোচনা রয়েছে ব্যাংক পাড়ায়। কমিশন গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা। তবে কমিশন গঠনে আদৌ কতটা সুফল মিলবে ব্যাংকিং খাতে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে কারো কারো। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ব্যাংকিং কমিশন যত দ্রুত সম্ভব গঠন করতে হবে। তবে তা হতে হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন। একটি শক্তিশালী কমিশন গঠন করে সমস্যার গভীরে যাওয়া এবং টেকসই সমাধানের দাবি জানান তারা। খেলাপি ঋণের লাগাম টানাসহ ব্যাংকিং খাত সংস্কারের জন্য অনেক বছর ধরে আলাদা কমিশন গঠন করার প্রস্তাব করে আসছিল বিভিন্ন মহল। তবে কমিশন গঠন নিয়ে রয়েছে একাধিক মত। অনেকে কমিশন গঠনকে স্বাগত জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারের সদিচ্ছাই যথেষ্ট। ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকিং কমিশন গঠন বিষয়ের আলোচনাকে আমি ইতিবাচক মনে করি। বিশেষ করে প্রফেসর ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে যদি চেয়ারম্যান করা হয় সেটাকে স্বাগত জানাই। কারণ তিনি খুবই শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। প্রশ্ন হচ্ছে কমিশনের সদস্য কারা হবেন। তিনি বলেন, সরকারের উচিত আর্থিক খাতের যোগ্য ব্যক্তিদের কমিশনের সঙ্গে যুক্ত করা। এতে কমিশন আরো শক্তিশালী হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে শুধু কমিশন করলেই হবে না। কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাহলেই এটা পুরোপুরি একটা কার্যকর হবে। তবে ব্যাংকিং কমিশন গঠনের দরকারই নেই বলে মনে করেন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের সমস্যা কী, তা সবারই জানা। আবার সমাধান কীভাবে হবে, তাও সবার জানা। ব্যাংকিং কমিশনের কাজ হলো সুপারিশ করা। এরই মধ্যে ব্যাংক খাতের সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন মহল সরকারকে বেশকিছু সুপারিশ করেছে। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। মীর্জ্জা আজিজ বলেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে কমিশন না করেও সমাধান করা সম্ভব। আর সরকারের যদি সদিচ্ছা না থাকে, তাহলে কমিশন করেও কোনো ফল আসবে না। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৯৯৬ সালে ব্যাংক খাত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সাবেক সচিব কাজী ফজলুর রহমানকে চেয়ারম্যান করে ওই সময় গঠন করা হয় ছয় সদস্যের ব্যাংক সংস্কার কমিটি। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ছিলেন কমিটির অন্যতম সদস্য। পরে কাজী ফজলুর রহমানকে অব্যাহতি দিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে করা হয় কমিটির চেয়ারম্যান। কমিটি ৩৭টি সভা করেছিল এবং ১১টি অন্তর্র্বর্তীকালীন প্রতিবেদন সরকারের বিবেচনার জন্য পেশ করেছিল। যদিও ওই সুপারিশের বেশির ভাগই সরকার বাস্তবায়ন করেনি। ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হবে বলে ঘোষণা দেন। বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও এবারের বাজেট বক্তৃতায় কমিশন গঠনের ইঙ্গিত দেন। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা সুদৃঢ় করার জন্য একটি ব্যাংক কমিশন প্রতিষ্ঠার কথাও বলা হয় বাজেট বক্তৃতায়। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কয়েকজন শীর্ষ অর্থনীতিবিদকে নিয়ে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। ওই বৈঠকে ব্যাংকিং কমিশন গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয় বলে চাউর রয়েছে। ২০১৯ সালে ২৩ জানুয়ারি ব্যাংকিং খাতে অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ দেয়ায় অনিয়ম, সুদ মওকুফসংক্রান্ত বিষয় তদন্ত করতে কমিশন গঠন করার জন্য পাঁচ সচিবসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। মনজিল মোরসেদ সে সময় জানান, ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ অনুমোদনের অনিয়ম, প্রাইভেট ও পাবলিক ব্যাংকসমূহে ঋণের ওপর সুদ মওকুফসংক্রান্ত বিষয় তদন্ত এবং তা বন্ধে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য কমিশন গঠন করার অনুরোধ জানিয়ে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া, নতুন ব্যাংকের বেশি পরিচালন ব্যয়, সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ঋণ দেয়া, সরকারি ব্যাংকের পর্ষদের দুর্বলতা, মূলধন ঘাটতি প্রভৃতি কারণকে সামনে এনে বিশেষজ্ঞরা ব্যাংক খাত সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে আসছেন বিগত আট-দশ বছর ধরে। অবস্থা সংকটজনক থাকলেও রহস্যজনক কারণে ব্যাংকিং খাত সংস্কার নিয়ে সরকার দৃশ্যত তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং প্রয়োজনের অতিরিক্ত সত্তে¡ও দফায় দফায় ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এমনকি ধোপে টেকেনি বাংলাদেশ ব্যাংক ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রকাশ্য আপত্তিও। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। এ খাতের সংস্কারে বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষাপটে ব্যাংকিং কমিশন গঠনের সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক। কিন্তু আমরা মনে করি, বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে হলে এ কমিশন গঠন করা হবে দায়সারা, অর্থহীন ও অপরিণামদর্শী এক সিদ্ধান্ত। ব্যাংকিং খাতে গঠিতব্য এই কমিশন হতে হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার সুপারিশ হচ্ছে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে অবিলম্বে ব্যাংক কমিশন গঠন করা হোক। ব্যাংকিং কমিশন গঠনের উদ্যোগকে সমর্থন করে সিপিডির ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারের যে আইন আছে, সেটিকেও এটির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা এ ধরনের উদ্যোগকে আন্তরিকভাবেই সমর্থন করছি, তবে শর্তসাপেক্ষে। এ কমিশন কাদের নিয়ে গঠন করা হবে, কমিশনকে কাজের স্বাধীনতা কতটুকু দেয়া হবে সে বিষয়ে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। তিনি দাবি করেন, ব্যাংকিং খাতে মূলধনসহ যে সমস্যাগুলোর মধ্যে দেশ পড়েছে, যা সামগ্রিক অর্থব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিচ্ছে, সেইসব বিষয় নিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারলে এই কমিশন কোনো উপকারে আসবে না। তিনি বলেন, এটা এমনভাবে করা উচিত যেন সমস্যা চিহ্নিত করার পাশাপাশি তা সমাধানও করতে পারে।রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হবে বলে ঘোষণা দেন। বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও এবারের বাজেট বক্তৃতায় কমিশন গঠনের ইঙ্গিত দেন। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা সুদৃঢ় করার জন্য একটি ব্যাংক কমিশন প্রতিষ্ঠার কথাও বলা হয় বাজেট বক্তৃতায়। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কয়েকজন শীর্ষ অর্থনীতিবিদকে নিয়ে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। ওই বৈঠকে ব্যাংকিং কমিশন গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয় বলে চাউর রয়েছে। ২০১৯ সালে ২৩ জানুয়ারি ব্যাংকিং খাতে অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ দেয়ায় অনিয়ম, সুদ মওকুফসংক্রান্ত বিষয় তদন্ত করতে কমিশন গঠন করার জন্য পাঁচ সচিবসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। মনজিল মোরসেদ সে সময় জানান, ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ অনুমোদনের অনিয়ম, প্রাইভেট ও পাবলিক ব্যাংকসমূহে ঋণের ওপর সুদ মওকুফসংক্রান্ত বিষয় তদন্ত এবং তা বন্ধে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য কমিশন গঠন করার অনুরোধ জানিয়ে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া, নতুন ব্যাংকের বেশি পরিচালন ব্যয়, সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ঋণ দেয়া, সরকারি ব্যাংকের পর্ষদের দুর্বলতা, মূলধন ঘাটতি প্রভৃতি কারণকে সামনে এনে বিশেষজ্ঞরা ব্যাংক খাত সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে আসছেন বিগত আট-দশ বছর ধরে। অবস্থা সংকটজনক থাকলেও রহস্যজনক কারণে ব্যাংকিং খাত সংস্কার নিয়ে সরকার দৃশ্যত তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং প্রয়োজনের অতিরিক্ত সত্তে¡ও দফায় দফায় ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এমনকি ধোপে টেকেনি বাংলাদেশ ব্যাংক ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রকাশ্য আপত্তিও। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। এ খাতের সংস্কারে বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষাপটে ব্যাংকিং কমিশন গঠনের সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক। কিন্তু আমরা মনে করি, বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে হলে এ কমিশন গঠন করা হবে দায়সারা, অর্থহীন ও অপরিণামদর্শী এক সিদ্ধান্ত। ব্যাংকিং খাতে গঠিতব্য এই কমিশন হতে হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার সুপারিশ হচ্ছে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে অবিলম্বে ব্যাংক কমিশন গঠন করা হোক। ব্যাংকিং কমিশন গঠনের উদ্যোগকে সমর্থন করে সিপিডির ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারের যে আইন আছে, সেটিকেও এটির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা এ ধরনের উদ্যোগকে আন্তরিকভাবেই সমর্থন করছি, তবে শর্তসাপেক্ষে। এ কমিশন কাদের নিয়ে গঠন করা হবে, কমিশনকে কাজের স্বাধীনতা কতটুকু দেয়া হবে সে বিষয়ে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। তিনি দাবি করেন, ব্যাংকিং খাতে মূলধনসহ যে সমস্যাগুলোর মধ্যে দেশ পড়েছে, যা সামগ্রিক অর্থব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিচ্ছে, সেইসব বিষয় নিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারলে এই কমিশন কোনো উপকারে আসবে না। তিনি বলেন, এটা এমনভাবে করা উচিত যেন সমস্যা চিহ্নিত করার পাশাপাশি তা সমাধানও করতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App