×

সম্পাদকীয়

আলোর মুখ দেখবে কখন?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:৪৬ পিএম

জাতীয় শিক্ষা আইন প্রণয়নের কাজ ঝুলে আছে প্রায় ১০ বছর ধরে। ২০১১ সালে শিক্ষা আইনের একটি খসড়া প্রস্তুত হলেও এখন পর্যন্ত আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বরং নোট-গাইড, কখনো কোচিং সেন্টারসহ শিক্ষা বাণিজ্যে যুক্ত বিশেষ গোষ্ঠীর দাপটে পিছু হটে মন্ত্রণালয় দুর্বল আইন প্রণয়নের পথেই হেঁটেছে সব সময়। বারবার আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো হলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে খসড়াটি চূড়ান্ত করে প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে মনে করছি। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রস্তাবিত আইনে বিদ্যমান চার স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক, দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি উচ্চ মাধ্যমিক স্তর। এরপরে শুরু উচ্চশিক্ষা স্তর। এছাড়া প্রাক-প্রাথমিক স্তরের কথাও আছে আইনে। খসড়া আইনে অনিয়মের জন্য শিক্ষকদের শাস্তি ও কোচিং বাণিজ্য বন্ধের বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক সংগঠনসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে আপত্তি ওঠে। শিক্ষকরা এ আইনের বিরুদ্ধে মাঠেও নামেন। এছাড়া নোট-গাইড বইয়ের ব্যবসায়ীদের আন্দোলন, কওমি মাদ্রাসার মালিকদের হুমকিসহ নানা বিতর্ক দেখা দিলে এই আইন প্রণয়নের কাজ থমকে থাকে। পরে আবারো এই খসড়া মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য পাঠানো হলে এতে নানারকম অসঙ্গতি থাকায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়। ২০১৬ সালে ২৩ পৃষ্ঠার খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দিয়ে নানা অসঙ্গতির কারণে তীব্র সমালোচনার মুখে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের কাজটির শ্লথগতির পেছনে নানা বিষয় জড়িত। সর্বশেষ খসড়ায় কোচিং, প্রাইভেট ও সব ধরনের নোট-গাইড বা সহায়ক বই নিষিদ্ধ করা হয়। এর পরপরই কোচিং, গাইড ও প্রাইভেট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত একটি গোষ্ঠী আইনটি ঠেকাতে তৎপর হয়ে ওঠে। এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কেউ কেউ কোচিং-প্রাইভেট বন্ধেরও বিপক্ষে। শিক্ষা আইন প্রণয়নের এমন দীর্ঘসূত্রতা আমরা চাই না। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বলেন, শিক্ষা আইন-২০২০ চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে আছে। সরকার একটি যুগোপযোগী শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করছে এবং তা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। আমরাও চাই দ্রুত আইনটি বাস্তবায়ন হোক। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যে শিক্ষা গ্রহণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, সেই শিক্ষা আইন প্রণয়ন নিয়ে গড়িমসির কোনো সুযোগ নেই। সরকারের এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ জরুরি। শিক্ষা আইনকে দুর্বল করে অবাধ বাণিজ্যে যারা মত্ত তাদের ব্যবসায়ী উদ্দেশ্যকে নস্যাৎ করে দিতে হবে। পাঠ্যপুস্তকের বাইরে নোট-গাইড ব্যবহার বন্ধে অভিভাবকদেরই সচেতন হতে হবে। চাহিদা না থাকলে শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা এমনিতেই বন্ধ করতে বাধ্য হবে নোট-গাইড ও কোচিং ব্যবসায়ীরা। মানসম্মত শিক্ষা তথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত খসড়া আইনটি পাস হওয়া সাপেক্ষে তা বাস্তবায়ন করা সময়ের দাবি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App