×

মুক্তচিন্তা

মাতৃভাষার চর্চা নিয়ে দ্বিচারিতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৬:২৮ পিএম

ফেব্রুয়ারি মাস এলে আমরা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস চর্চা করি। সেখান থেকে এখন আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গর্ব অনুভব করি। ভাষা আন্দোলন নিয়ে আমাদের সে সময়ের তরুণ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা ছিল অসামান্য। তরুণরা মাতৃভাষা রক্ষার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে পাকিস্তান সরকারের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেছে। বেশ কয়েকজন তাতে জীবন দিয়েছেন। এই ঘটনা শহরের জনগোষ্ঠীকেই শুধু নয়, গ্রামের সাধারণ মানুষকেও ক্ষুব্ধ করেছে। মানুষ তরুণদের রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করার সাহসে উজ্জীবিত হয়েছে। একই সঙ্গে মাতৃভাষা বাংলার প্রতি নিজেদের দরদ, ভালোবাসা, জাতিগত বোধ এবং রাষ্ট্রব্যবস্থায় নিজেদের অবস্থানকে খুঁজে দেখতে চেষ্টা করেছি। এই উপলব্ধি পূর্ববাংলার জনগণের মধ্যে ভাষাকেন্দ্রিক জাতীয়তার উপলব্ধি ও প্রয়োজনীয়তাকে নতুনভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে। অথচ এই মানুষগুলোই ১৯৪৭-এর আগে জাতীয়তার এমন ভাষাকেন্দ্রিক উপলব্ধি বুঝতে পারেনি, আত্মসমর্পণ করেছিল দ্বিজাতিতত্তে¡। কিন্তু ভাষা আন্দোলন পূর্ববাংলার বৃহত্তর জনগণকে ভাষাকেন্দ্রিক জাতীয়তার উপলব্ধিতে ফিরিয়ে আনে। সেখান থেকে বাংলা ও বাঙালির আত্মপরিচয়ের সন্ধান রাজনৈতিকভাবে নতুন করে শুরু হয়। ১৯৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে পূর্ববাংলার নিরঙ্কুশ মানুষ সেই রাজনৈতিক গণরায় প্রদান করেছিল। বাংলা ভাষার প্রয়োজনীয়তা রাষ্ট্রীয়ভাবে আদায় করার লড়াইয়ে মানুষ ক্রমেই যুক্ত হয়। এই লড়াই আমাদের ১৯৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবিভর্‚ত হতে শক্তি জুগিয়েছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক অর্জনের দিক থেকে বিবেচনা করলে ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় জীবনে অনেক বড় ধরনের ভ‚মিকা রেখেছে। আমরা এর থেকে স্বাধীনতার মতো বিশাল ফসল তুলে নিতে পেরেছি। অবশ্যই এর কৃতিত্ব দিতে হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি একমাত্র নেতা যিনি তার দলকে নিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান সংগঠিত করার আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে দ্রুত বেগবান করার কর্মসূচি ও পরিকল্পনা নিয়ে মানুষের কাছে গিয়েছিল। সে কাজটি তিনি যত আন্তরিকতার সঙ্গে করেছিলেন অন্য দলের রাজনীতিবিদরা তা পারেননি। সে কারণে জনগণ তাকেই স্বাধীনতার জন্য অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে বরণ করে নিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর বাংলা ভাষা শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে জাতীয় জীবনে লালন ও প্রতিষ্ঠার সব ধরনের আয়োজন নিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর বাংলাদেশ রাষ্ট্রে দর্শন পরিবর্তিত হওয়ায় বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারণা পরিত্যাজ্য হয়েছে, দ্বিজাতিতত্তে¡র পুনরাবির্ভাব ঘটেছে, রাষ্ট্র পরিচালনায় বহুধা বিভক্ত শিক্ষার ধারায় বিভাজিত জনগোষ্ঠী তৈরির উদ্যোগ গৃহীত হয়। ফলে বাংলা ভাষার আবেদন দ্রুতই অপসারিত হয়, ইংরেজি, আরবি, বাংলা ইত্যাদি ভাষায় তরুণ সমাজ শিক্ষাক্ষেত্রে বিভাজিত হয়েছে। এই ধারা থেকে বাংলাদেশ এবং এর জনগণ খুব বেশি বের হতে পারেনি। ১৯৯৯ সালে বাংলা ভাষা ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি অর্জিত হয়। আমরা তাতে উল্লসিত হয়েছি। কিন্তু মাতৃভাষায় শিক্ষালাভে উপলব্ধিতে খুব বেশি ফিরে যাইনি। আমরা বাংলার স্বাভাবিক প্রচলন শিক্ষাব্যবস্থায় রেখেছি। কিন্তু মানসম্মত শিক্ষা বাংলা ভাষায় অর্জন করার কোনো পরিকল্পনা এ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা যায়নি। দেশের সবক’টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাতৃভাষায় মানসম্পন্ন শিক্ষালাভে সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। ইংরেজিকে আমরা আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ধরার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্কুলের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিপাঠ থেকে শিশুদের ইংরেজিতে পারদর্শী করার এক অবাস্তব ব্যবস্থা সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে। অন্তত দুই-আড়াই দশক থেকে শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারিভাবেই বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা চালু করা হয়েছে। কিন্তু যে পদ্ধতিতে এমন ইংরেজি ভার্সন আমাদের শিশু-কিশোরদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে তা তাদের মাতৃভাষার উন্মেষ ও বিকাশকে গোড়াতেই পঙ্গু করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। কার্যত সেটিই ঘটছে। সাধারণ স্কুলগুলোতে ইংরেজি ভাষা হিসেবে না শিখিয়ে যেভাবে শিশুদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে তাতে শেষ বিচারে তাদের মুখে ইংরেজি ভাষা খুব একটা উঠছে না। অথচ সারাদেশেই এমন ইংরেজি নিয়ে রমরমা ব্যবসা চলছে, পিতামাতা অর্থ জোগান দেয়ার চেষ্টা করছেন, বেশিরভাগ শিক্ষকই ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন এমন কোনো সনদ বা অভিজ্ঞতা দেখাতে পারেননি। এর বাইরে একেবারেই বিদেশি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্বে আমাদের এখানে চলছে ও-লেভেল এ- লেভেল। এগুলোর পেছনে শহুরের ছেলেমেয়েরা ছুটছে, অভিভাবকরা বিপুল অর্থের জোগান দিচ্ছে। দেশের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী বিভিন্ন ধারার মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। সেখানেও ইংরেজি, বাংলা, আরবি ইত্যাদির বাধ্যবাধকতা থাকলেও এগুলোর কোনো একটি ভাষাও মানসম্মতভাবে শেখানোর কোনো আয়োজন নেই বললেই চলে। সামগ্রিকভাবে আমাদের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ভাষাজ্ঞানের দক্ষতা কাক্সিক্ষত মানে গড়ে উঠছে না। এমনকি মাতৃভাষা বাংলাও সীমিতসংখ্যক শিক্ষার্থীর মধ্যে শেখার প্রবণতা রয়েছে বলে মনে হয় না। ইংরেজি শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর জন্যই ভীতির ভাষা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আসলে আমরা শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের কী শেখাতে চাই? এর উত্তর মনে হয় অনেকেরই খুব একটা স্বাভাবিক হবে না। এখানে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে বিরাট পার্থক্য সেটি এত বছরেও যদি আমরা বুঝতে না পারি তাহলে বুঝতে হবে আমরা লেখাপড়ার নামে যেসব আয়োজন দেশে সৃষ্টি করেছি তা শেষ বিচারে আমাদের সমাজে ব্যাপক সংখ্যক অদক্ষ, অযোগ্য এবং জ্ঞানদক্ষতায় অপরিপূর্ণ শিক্ষার্থী তৈরি করে মাত্র। কিন্তু গভীরভাবে ভাবলে দেখা যাবে যে আমাদের শিশু-কিশোর এবং তরুণরা জন্মগতভাবে যথেষ্ট সুকুমার বৃত্তের অধিকারী। কিন্তু তাদের এই সুকুমার বৃত্তির উন্মেষ ও বিকাশ ঘটানোর মতো শিক্ষাব্যবস্থা দেশে পঞ্চাশ বছরেও গড়ে তোলা যায়নি। সে কারণে আমাদের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে, যারা শ্রেণি মারিয়ে এসএসসি-এইচএসসি উত্তীর্ণ হচ্ছে তাদের একটা বড় অংশই ভাষা দক্ষতা, বিষয় দক্ষতা, জ্ঞানদক্ষতা, জীবনবোধের উন্মেষ ও বিকাশ ঘটানোর প্রয়োজনীয় শিক্ষা খুব একটা পাচ্ছে না। সে কারণে আমাদের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী মানহীন ও উচ্চ শিক্ষাঙ্গন থেকে যে ধরনের উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বের হয় তারা বাংলা কিংবা অন্য কোনো ভাষাতেই প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় যেসব দক্ষতা তাদের সর্বোচ্চ শিক্ষা জীবন শেষে অর্জিত হওয়ার কথা তার যোগ-বিয়োগের হিসাব মিলে অর্জনের পাল্লাটা খুবই সীমিত হয়ে যায়, বরং ব্যর্থতা ও অদক্ষতার পাল্লাটাই ভারী হয়ে পড়ে। এর প্রধান কারণ আমাদের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষা দর্শনের কার্যকারিতার ব্যাপক অভাব। এর ফলে শিক্ষার্থীরা দেশ ও জাতির আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, জ্ঞানবিজ্ঞান প্রযুক্তি ও সমাজ সচেতনতায় অনেক বেশি পিছিয়ে পড়ছে। এর দায়ভার ওদের নয়, আমাদের দেশ পরিচালনার সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন তাদেরই বহন করতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশেই মাতৃভাষায় শিশুরা প্রাথমিক এমনকি জুনিয়র স্কুল পর্যন্ত পড়াশোনা করে থাকে। দ্বিতীয় ভাষার সঙ্গে তাদের এ পর্যায় পর্যন্ত খুব একটা পরিচয় ঘটে না। মাতৃভাষায় তাদের নানা ধরনের দক্ষতার গাঁথুনি তৈরি করা হয়। সেখানে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় চিন্তা করার সুযোগগুলো তাদের মধ্যে মাতৃভাষায় সৃষ্টি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সবাই যার যার ভালো লাগার বিষয়ে যখন পড়াশোনা করে তখন তারা একাধিক বিদেশি ভাষায় রচিত মৌলিক বইপুস্তকের সহায়তা নিয়ে থাকে। কিন্তু মূল লেখাপড়া চলে মাতৃভাষাতেই কোনো শ্রেণিপাঠ বিদেশি ভাষাতে নয়। আবার বিদেশি ভাষা যখন স্কুল পর্যায়ে নির্দিষ্ট ক্লাস থেকে শেখানো হয় তখন শিক্ষার্থীকে ভাষাতত্তে¡র প্রয়োজনীয় নীতিনিয়ম অনুসরণ করে ভাষা শেখানো হয়ে থাকে। সেটি সেই শিক্ষার্থী তার নিজের পছন্দের বিদেশি ভাষা হয়ে থাকে। ইউরোপের অনেক দেশেই স্কুল পর্যায়ে দক্ষ, অভিজ্ঞ, বিদেশি ভাষা বিষয়ের শিক্ষক রয়েছেন। তারা শিক্ষার্থীদের একটি বিদেশি ভাষা ২/৩ বছরের মধ্যে লেখাপড়া, বলা ও শোনার দক্ষতায় গড়ে তুলে এরাই উচ্চশিক্ষায় অধিকতরও ভাষা দক্ষতাকে নিজেদের জ্ঞান অর্জনের দক্ষতার জন্য শিখে থাকে। ওই পর্যায়ে বিদেশি ভাষা তাদের শুধুমাত্র শেখা, জানা ও দক্ষতা অর্জনের নিমিত্তেই হয়ে থাকে। বিদেশি ভাষা তার কর্মজীবনে সহায়ক ভাষা হিসেবে প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই বিদেশি ভাষায় তাকে দাপ্তরিক কাজের দক্ষতা প্রমাণ করতে হয় না। অথচ ওইসব দেশে অনেকেই এক বা একাধিক বিদেশি ভাষার বেশ ভালোভাবেই দক্ষতা অর্জন করে থাকেন। পারতপক্ষে তারা বিদেশি ভাষায় খুব একটা কথা বলেন না। তবে বইপুস্তক, পড়া এবং নিজের গবেষণায় প্রয়োজন হলে ভালোভাবে ব্যবহার করেন। এর মাধ্যমে তারা ওই ভাষার জ্ঞানের প্রয়োজনীয় ধারণাকে বোঝার চেষ্টা করে থাকেন। যেমন একজন সুইডিশ, জার্মান, ফরাসি, রুশ, পলিশ দেশে বিশেষজ্ঞ যদি বাংলাদেশের ওপর কোনো গবেষণা করে থাকেন তাহলে তিনি অবশ্যই বাংলা ভাষা শেখার সুযোগ নিয়ে থাকেন। তবে বাংলা ভাষার দক্ষতা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে তিনি এই অঞ্চলে অন্য যে ভাষাটি বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে সেটিও প্রয়োজনে শিখে নেন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনেক শিক্ষককে দেখেছি ৩/৪টি বিদেশি ভাষায় যথেষ্ট দক্ষতা রাখতেন, কিন্তু তারা নিজেদের গবেষণা ব্যতীত অন্য কোথাও বিদেশি ভাষার ব্যবহার করতেন না। ভাষা তাদের জানা আছে, সেই ভাষাকে তারা শুধুমাত্র প্রয়োজনেই ব্যবহার করে থাকেন। এমন দৃষ্টিভঙ্গি পৃথিবীর অনেক দেশেই রয়েছে। অথচ দেশগুলো বেশ উন্নত তাদের ভাষা সংস্কৃতি ও সমাজব্যবস্থা বেশ উন্নত কিন্তু সেসব দেশে বিদেশি ভাষা নিয়ে এমন বাড়াবাড়ি ও দ্বিচারিতা মোটেও চোখে পড়ে না যেমনটি আমাদের এখানে লক্ষ করা যায়। আমরা ইংরেজি ভাষা জানাকেই অনেক সময় অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকি, বাংলা না জানাকে খুব একটা গুরুত্ব দেই না। আমাদের মধ্যে এক ধরনের ভাষাকেন্দ্রিক আভিজাত্যবোধ বিরাজ করছে। এর সঙ্গে বিকশিত হচ্ছে মিথ্যা অহংবোধ যা আমাদের জাতিসত্তার বিকাশকে একেবারেই নড়বড় করে ফেলেছে। অথচ প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস আসতেই আমরা এখন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বলার চেষ্টা করি, তবে সেই ইতিহাস জানাটি খুবই খণ্ডিত, বিকৃত এবং অনেকটাই প্রদর্শিত। সেটিও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খুব একটা আন্তরিকতা সঙ্গে করে না। বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২১ ফেব্রুয়ারি পালনে এক ধরনের কূপমণ্ডূকতা প্রদর্শন করে থাকে। শহীদ মিনারের ধারণাকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করে নিতে পারছে না। এমনকি মাতৃভাষা বাংলাকেও যথার্থ মর্মে উপলব্ধি করার চেষ্টা করছে না। সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে দিবসটি এখনো খুব একটা অংশগ্রহণে পালিত হওয়ার পর্যায়ে নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক একুশ উদযাপন দীর্ঘদিনের ধারা হিসেবে চলে আসছে। প্রয়োজন এটিকে সর্বস্তরের মানুষের অন্তরে পৌঁছে দেয়া। অধিকন্তু আমরা মাতৃভাষার গুরুত্বকে আন্তর্জাতিকভাবে উন্নত দেশগুলো যেভাবে দিয়ে থাকে সেভাবে খুব একটা দেয়া হচ্ছে না। এর ফলে প্রতি বছরই এখানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা নিয়ে এখন অনেক কথা বলা হয়। কিন্তু নিজের মাতৃভাষায় ভালো বই রচনা, পঠনপাঠন, গবেষণা, জ্ঞানচর্চা, শিল্পসাহিত্য চর্চা ইত্যাদিকে যেভাবে বিকশিত করার প্রয়োজন ছিল তার ধারেকাছেও আমরা যাচ্ছি না। এমন দ্বিচারিতা থেকে যত তাড়াতাড়ি আমরা মুক্ত হবো, মাতৃভাষায় লেখাপড়া, শিক্ষাদীক্ষা, জ্ঞানচর্চায় যতবেশি আমরা দক্ষ ও পারদর্শী হয়ে উঠব ততবেশি আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ উন্নত হওয়ার দাবি করতে পারবে। মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত), ইতিহাসবিদ ও কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App